ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ১০) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ১০) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের নবম কিস্তি
___________________________________

মেয়েটির স্থূল কথাগুলো তাকে কিছুটা বিস্মিত করল। পার্টির সদস্যরা কটু-কাটব্য করে না, উইনস্টনের মুখ থেকেও কদাচই গালাগাল বের হয়। আর উচ্চস্বরে তো নয়ই। কিন্তু জুলিয়া যখনই পার্টির কথা বলছিল, বিশেষ করে ইনার পার্টির কথা, তখনই তার মুখ থেকে এমন সব শব্দ বের হচ্ছিল যা বস্তির গলি-ঘিঞ্জির দেয়ালেই লেখা থাকে কিংবা শোনা যায়।

উইনস্টনের বিষয়টি অপছন্দ হচ্ছে বলা যাবে না, বরং স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্যই মনে হচ্ছিল তার কাছে। পচা খড়কুটোয়ও ঘোড়ার যেমন অনাগ্রহ থাকে না ঠিক তেমনি। ওরা ফাঁকা জায়গাটি থেকে বের হয়ে এলো আগের সেই ঝোঁপঝাড় ভাঙা পথ ধরে। যেখানেই একটু প্রশস্ত পথ পাচ্ছে একে অপরের কোমরে হাত জড়িয়ে রেখে পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি করে এগুচ্ছে। উইনস্টন খেয়াল করল কী নরম কটিদেশ এই মেয়ের, লাল পরিকরটিও তখন আর বাঁধা নেই। তাদের মধ্যে যেভাবে কথা চলছে তাকে ফিসফিসানিই বলা চলে।

ফাঁকা জায়গাটির বাইরে গেলে চুপচাপ থাকাই ভালো, বলল জুলিয়া। একপর্যায়ে জঙ্গলের প্রায় কিনারার দিকে পৌঁছাল তারা। আর উইনস্টনকে থামাল সে।

‘এখনই খোলা মাঠের দিকে যেও না। কেউ নজরদারি করতে পারে। জঙ্গলের ভেতরে যতক্ষণ আছি, নিরাপদ আছি। ’

একটি ঝোঁপের আড়ালে দাঁড়িয়েছে তারা। সূর্যের আলো পত্র-পল্লবরাজি ভেদ করে চুইয়ে চুইয়ে পড়লেও তাদের গায়ে তা তপ্ত হয়েই লাগছে। উইনস্টন পেছনের খোলা মাঠটির দিকে তাকিয়ে। তার স্মৃতি মৃদু আঘাত হেনে বলছে এ জায়গাটি খুব চেনা চেনা। এবার ঠিক চিনে ফেলল। খরগোশের আঁচড়কাটা পুরোনো চারণভূমি, মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে পায়েচলা পথ। সারা মাঠ জুড়ে এখানে সেখানে ছুছুন্দরীর ছোট ছোট মাটি তোলা ঢিঁবি। মাঠের উল্টোদিকের শীর্ণ বেড়া ঘেঁষে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে দেবদারু গাছের পাতাগুলো মৃদুমন্দ বাতাসে ঝিরিঝিরি নড়ছে। নারীর চুল যেমন বাতাসে ওড়ে দেবদারুর পাতায়ও তেমন নাচন লেগে আছে।

এখান থেকে দেখা না গেলেও নিঃসন্দেহে কাছে ধারে কোথাও ধীর স্রোতে বয়ে চলা নদীর স্বচ্ছ সবুজ পানিতে মাছেরা সাঁতার কাটছে বলেই মনে হলো তার।

‘আশে পাশে কোথাও ছোট নদী বয়ে গেছে, তাই না?’ ফিসফিসিয়ে বলল উইনস্টন।

‘হ্যাঁ, একটি নদী আছে। ওই মাঠের ঠিক ওপার ঘেঁষেই। এতে অনেক মাছ, এত্ত বড় বড় ! উইলো গাছের নিচে গেলেই তুমি দেখতে পাবে মাছগুলো লেজ নেড়ে নেড়ে চলছে। ’
‘এটাই ঠিক সেই সোনালি দেশ’—বিড়বিড় করে বলল সে।
‘সোনালি দেশ?’
‘না কিছু না। প্রায়ই স্বপ্নে আমি এমন একটি ভূদৃশ্য দেখি। ’
‘ওদিকে দ্যাখো!’ ফিসফিসিয়ে উঠল জুলিয়া।

ওদের কাছেই একটি গাছের ডালে উড়ে এসে বসল একটি দোয়েল পাখি, ঠিক ওদের মুখ বরাবর। পাখিটি সম্ভবত ওদের দেখতে পায়নি। ওটির গায়ে হলদেটে রোদ পড়েছে আর ওরা ছায়ায়। একবার পাখা ঝাপটালো পাখিটি। ওরা দুজন তখন আরও নিঃশব্দ। এবার মাথা তুলে যেন সূর্যের আলোকে অভিবাদন জানালো পাখিটি আর অতঃপর মনের সুখে গান ধরল। বিকেলের নিঃশব্দে সে সুর হয়ে উঠল মোহময়। উইনস্টন আর জুলিয়া প্রবল আকর্ষণে নিজেদের আরও ঘন আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিল। গানের সুর একটানা বেজেই চলেছে, মিনিটের পর মিনিট কেটে যাচ্ছে, আর দোয়েলটি তার গলায় ভাঁজছে একের পর এক মোহময় সুর যার একটির সঙ্গে অন্যটির মিল নেই। মনে হচ্ছিল, পাখিটি যেন আজ এই বিকেলে তার সুরের পাণ্ডিত্য ফলাচ্ছে। মাঝে মাঝে ক্ষণিকের বিরতি নিয়ে, পাখা ঝাপটিয়ে, পেলব পশমের বক্ষদেশ ফুলিয়ে শক্ত হয়ে গলায় শান দিয়ে আবার গানের সুরে ফেটে পড়ছে।

একটা অস্পষ্ট শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে পাখিটির গান গাওয়া দেখছিল উইনস্টন। কার জন্য, কেন গাইছে এই পাখি? তার কোনও সঙ্গী নেই, শত্রুও নেই যে দেখবে তার এই উদাস সুরে গাওয়া। কী কারণে এই নিঃসঙ্গ বনের কিনারে বসে অসীম শূন্যতাকে ভরে তুলছে গানে?

তার মনে এলো আশেপাশে কোথাও আদৌ কি লুকিয়ে পাতা রয়েছে কোনও মাইক্রোফোন। জুলিয়ার সঙ্গে তার কথাবার্তা চলছিল আরও মৃদুস্বরে, ফলে তাদের কথা ধরা পড়বে না, তবে দোয়েলের এই গান ঠিকই ধারণ হয়ে যাবে। হয়ত এই যন্ত্রের অন্যপাশে সারাক্ষণ কান পেতে থাকা কোনও এক বেটেখাটো মাছি-সদৃশ ব্যক্তির কানে পৌঁছে যাচ্ছে এই সুর। এই সুরের বন্যায় তার ভেতরের সকল অনুমান ভেসে যাচ্ছে। যেন এই সুর কোনও তরল বস্তুর মত তার গায়ে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে আর তা মিশে যাচ্ছে এই পত্র-পল্লবের মাঝ থেকে চুইয়ে পড়া সূর্যালোকের সঙ্গে।

ভাবনা থামালো সে। আর অনুভব করতে লাগল, মেয়েটির যে কটিদেশ তার বাহুতে বন্দি, তা এখন আরও কোমল আরও উষ্ণ। মেয়েটিকে সে ঘুরিয়ে নিল, দুজন তখন বুকের সাথে বুক মিলিয়ে। ওর কোমল দেহটি যেন গলে গলে তার গায়ের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। যেখানেই হাত যায় কোমল পানির অনুভব। মুখ মুখে মিশে আছে তাদের, এর আগে যে কড়া চুম্বন তারা এঁকেছিল একে অপরের ঠোঁটে—এ যেন তার চেয়েও ভিন্ন কিছু। যখন ফের মুখ দুটি আলাদা হলো দুজনই যেন লজ্জা পেল। তখনই পাখিটি ডানা ঝাপটে উড়ে গেল দূরে।

উইনস্টন তার ঠোঁট ওর কানের কাছে নামালো। ‘এখন’—ফিসফিসিয়ে বলল সে।

‘এখানে না’—মেয়েটিও ফিসফিসাল। ‘চলো লুকোনোর জায়গাটিতে ফিরে যাই, ওখানটাই নিরাপদ। ’

দ্বিতীয় খণ্ডের ১১তম কিস্তি



বাংলাদেশ সময় ১৬৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।