ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

এখন সোনার বাংলা গড়াটাই লক্ষ্য – মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী

স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫
এখন সোনার বাংলা গড়াটাই লক্ষ্য – মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী

‘বঙ্গবন্ধুর দেওয়া (৭ মার্চ) ঐতিহাসিক ভাষণের পর মনে মনে ঠিক করে ফেললাম দেশের জন্য লড়ব। হয়ত বেঁচে ফিরতে পারব না ঘরে।

কিন্তু লক্ষ্য একটাই। জীবন দিয়ে হলেও সোনার বাংলাকে স্বাধীন করতে হবে। আর দেশকে স্বাধীন করার পর এখন লক্ষ্য হলো, দেশটাকে স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে হবে। ’

২৬ মার্চ উপলক্ষে বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এভাবেই নিজের মুক্তিযোদ্ধা হবার গল্প এবং দেশ নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানালেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

মুক্তিযুদ্ধে তিনি আগড়তলার ‘যমুনা ইয়ুথ ট্রেনিং ক্যাম্প’ নামের মুক্তিযুদ্ধ ট্রেনিং ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ২৪ বছর।

২৪ বছর বয়সী এক তরুণের মধ্যে কী করে যুদ্ধের চেতনা জন্ম নিয়েছিল—সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন সেকথা। সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবনের মায়া না করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মরণপণ যুদ্ধে। যে যুদ্ধের নাম ‘মুক্তিযুদ্ধ’।

বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে শুরু হলো যুদ্ধের ট্রেনিং। এর ক’দিন পরেই এলো সেই কালোরাত (২৫ মার্চ)। পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের পৈশাচিক বর্বরতায় ওই যে রাতে হাজারো নিরীহ, নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষ হারালো প্রাণ। আমরা তখন ছিলাম গাজীপুরের জয়দেবপুরে। এলাকাটি ভালোভাবে এদেশের মুক্তিকামী মানুষের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে সে রাতে আমাদের ওপর হামলা করতে পারেনি বর্বর পাকিস্তানি সেনারা। ’

‘তবে রেডিওতে খবর শুনে বারবার আঁতকে উঠছিলাম। এক রাতেই এত-এত নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল সেই বর্বররা। এমন নৃশংস নির্মম ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ’

স্মরণ করলেন যুদ্ধের সেই দিনগুলোর কথা। ‘প্রথম ট্রেনিং করতে যাওয়ার প্রায় ৭ দিন পর পর্যন্ত বলতে গেলে শুধু পানি খেয়ে টিকে ছিলাম। ভাত খেতে গেলেই দেখতাম ভাতের মধ্যে কাঁকর, বালি আর পোকামাকড়। গোসল-ঘুম কোনও কিছুরই ঠিক ছিল না। কী করব। আগে তো কখনও যুদ্ধ দেখিইনি। যুদ্ধ করা তো অনেক দূরের কথা!’

‘তখন হৃদয়ে শুধু একটি প্রত্যয়। এ লড়াই আমাদের টিকে থাকার লড়াই, অস্তিত্বের লড়াই। এ লড়াইয়ে জিততেই হবে। ’

‘দীর্ঘ নয় মাস  যুদ্ধ করার পর ১৬ ডিসেম্বর যখন বিজয় ঘোষণা হলো সেদিন সব দুঃখ এক নিমেষেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এতদিনের অসহনীয় দুঃখকষ্ট-দুর্ভোগ যেন আনন্দের তৃপ্তি হয়ে ঝরে পড়তে লাগল। ’

‘স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের গুদামগুলো ছিল শূন্য। কোনও গুদামেই কোনও খাবার ছিল না। বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না। বলতে গেলে দেশ তখন প্রায় অচল। কৃষকদের বকেয়া পরিশোধ, স্কুলগুলোকে সরকারীকরণ করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে ছয় মাসে দেশে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সফলতাকে ব্যর্থতায় পরিণত করতেই ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা করল স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। ’

এত রক্ত, এত এত ত্যাগ আর মা-বোনের সম্ভ্রমহানি আর লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া এ দেশটির বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় তার। তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, ‘দেশের এই হানাহানিময়, চলমান সহিংস-অনিরাপদ অবস্থা সাধারণ মানুষকে যে শঙ্কিত করেছে এ ব্যাপারে আপনার কী বক্তব্য?’

জবাবে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বললেন, ‘সাধারণ জনগণকে তারাই আতঙ্কিত-সন্ত্রস্ত করে চলেছে যারা ছিল এদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে। বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক এটা তারা চায় না। বিশেষ  করে করে বিরোধীদলীয় নেত্রীও এটা চান না। ’

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের সাথে হাত মিলিয়ে পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) বাংলাদেশকে অকাযর্কর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান। ’

তাহলে কেন এ-যুদ্ধপরাধীদের দল জামায়াত ও এদের উগ্র ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না?—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন। আমরাও এখন সেই মামলার রায়ের জন্য অপেক্ষায় আছি। ’

তবে বর্তমান সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পরোক্ষভাবে বিএনপির সাথে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন মন্ত্রী। ‘জঙ্গীবাদী দল বা তাদের সমর্থক কোনও দলের সাথে সংলাপে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই’—যোগ করেন মন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ হরতাল-অবোরাধ মানছে না। এটা খালেদা জিয়াও জানেন। কিন্তু যুদ্ধের সময় যেভাবে পাকিস্তানিরা মানুষ হত্যা করেছে সেই ধারাবাহিকতাটাই যেন তিনি ধরে রাখতে চান। ক্ষমতায় এসে দেশেকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান। এটাই তার লক্ষ্য। ’

‘৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে গড়া এ বাংলাদেশ কখনওই জঙ্গীদের আদর্শে পরিচালিত হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, চলবে। আর সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। ’ জানালেন মোজাম্মেল হক।

‘এরই ধারাবাহিকতায় বীরাঙ্গনাদেরকেও মুক্তিযুদ্ধ সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিকট চিঠি প্রদানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ’
 
‘মুক্তিযোদ্ধাদের ভুয়া সনদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়কে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে, মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা নির্ধারণ না করে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়েছে। তাই মূল জায়গাটায় ত্রুটি রয়ে গেছে। সে কারণে আমরা এবার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই করার কাজ শুরু করেছি। ’

এ কাজের অংশ হিসেবে ২৮ মার্চ, ৪ ও ১১ এপ্রিল এই তিন দিন মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ যাচাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সংজ্ঞা নির্ধারণ করেই সব মুক্তিযোদ্ধা যাচাই করা হবে বলেও জানান তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা এনে দিয়েছি। কিন্তু এখনও সোনার বাংলা গড়তে পারিনি। শ্রম, মেধা, সততা দিয়ে সেই স্বাধীনতা রক্ষা করার পাশাপশি স্বাধীনতার সুফল ভোগ করবে নতুন প্রজন্ম—এই শুভ কামনাই করছি। ’


বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।