ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ১৮) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ১৮) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ১৭তম কিস্তি

___________________________________

চতুর্থ অধ্যায় |
                 চ্যারিংটনের দোকানের দোতলার অগোছালো কামরার চারিদিকে একদফা চোখ ঘুরিয়ে নিল উইনস্টন। জানালার পাশে বিশালাকার বিছানাটি পাতা, তাতে একটি ছেঁড়া কম্বল আর কাভারবিহীন কোলবালিশ পড়ে আছে। তাকের ওপর ১২ ঘণ্টা ডায়ালের পুরানা আমলের ঘড়িটি টিক টিক করে চলেছে। অন্য কোণায়, ভাঁজ করে রাখার উপযোগী সেই গেটলেগ টেবিলটি পাতা, যার ওপরে আধো আঁধারেও হালকা ঝিলিক দিচ্ছে স্বচ্ছ কাচের পেপারওয়েট। ফেন্ডারের ভেতরে একটি ভাঙাচোরা তেলের স্টোভ, একটি সসপ্যান, দুটি কাপ। মি. চ্যারিংটন ওগুলো দিয়ে গেছেন। উইনস্টন চুল্লিটি জ্বালাল আর প্যানে করে পানি সিদ্ধ দিল। ইনভেলপ ভরে সঙ্গে করে ভিক্টরি কফি আর কিছু স্যাকারিন ট্যাবলেট নিয়ে এসেছে। ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল পাঁচটা বিশ, তবে প্রকৃত সময় সন্ধ্যা সাতটা বিশ মিনিট আর জুলিয়ার পৌঁছার কথা রাত সাড়ে নয়টায়।



স্রেফ বোকামি, তার মন বলে চলেছে, সচেতনভাবে, অকারণে, আত্মঘাতী এক বোকামির সিদ্ধান্তই সে নিয়েছে। পার্টির সদস্যরা যেসব অপরাধ করে ঢেকে রাখতে পারে তার মধ্যে এটি হবে সবচেয়ে অসম্ভবের। গেটলেগ টেবিলের পাটাতনে পেতে রাখা কাচের পেপারওয়েটের ভেতরে ভেসে ওঠা একটি দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি চোখে পড়ার পরপরই ভাবনাটা মাথায় খেলে যায় তার। যেমনটা ভেবে রেখেছিল, কামরাটি ভাড়া দিতে একটুও ঝামেলা করেননি মি. চ্যারিংটন। এতে করে যে গোটা কয় ডলার তার পকেটে ঢুকছে তাতেই সে যারপরনাই খুশি। ভালোবাসার মেয়েটিরে নিয়ে এখানে সময় কাটাবে স্রেফ এই কারণেই উইনস্টন কামরাটি ভাড়া নিতে চায়, সে কথায়ও তার আপত্তি কিংবা বিস্ময় কোনওটাই ছিল না। বরং একটু অদূরে দৃষ্টি ফেলে এমনভাবে কথা বলে গেলেন যেন এ জগতেই নেই তিনি। মুখে শুধু বললেন, একান্ততা খুবই দামি একটা বিষয়। প্রত্যেকেই এমন একটি স্থান চায় যেখানে সে মাঝেমধ্যে একান্তে সময় কাটাতে পারে। আর যখন সে স্থানটি মিলে যাবে, তখন অন্য কেউ যদি সে কথা জেনেও থাকে তাকে—তা নিজের মধ্যেই রাখতে হয়। এমনভাবেই তিনি কথাগুলো বলছিলেন যেন তখনই তিনি অনেকটা অস্তিত্বহীন। জানালেন এই বাড়িতে ঢোকার দুটি দরজা আছে, অপরটি পেছনের আঙ্গিনার দিকে, ওদিকটা দিয়ে চলাচলের একটি পথও আছে।

জানালার নিচে বাইরে কেউ একজন গান ধরেছে। মসলিনের পর্দার পেছনে নিজেকে ভালোভাবে আড়াল করে উঁকি দিল উইনস্টন। জুনের আকাশে তখনও উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে সূর্য। আর প্রখর রোদে ভরে থাকা নিচের আঙিনায় এক দৈত্যাকায় নারী, নরম্যানের খাম্বার মতই কঠিন-শক্ত-সামর্থ্য, লালচে বাদামি হাতের ত্বক, মোটা অ্যাপ্রোনের ওপরে ফিতা দিয়ে কোমর বাঁধা। কাপড় ধোয়ার বালতি থেকে একেকবার হাত ভরে নিয়ে একটু দূরে আড়াআড়ি টানিয়ে রাখা কাপড় শুকানোর রশি পর্যন্ত যাচ্ছেন আর ক্লিপ দিয়ে ছোট ছোট বর্গাকার বস্তুগুলো রশিতে লটকিয়ে আবার বালতির কাছে ফিরছেন। উইনস্টন বুঝতে পারল ওগুলো শিশুদের ডায়াপার হবে। আর কাপড়ের ক্লিপ যখন দাঁতে চেপে রাখছেন তখন গান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আবার যখন সরিয়ে নিচ্ছেন চড়া গলায় শুরু হচ্ছে সেই গান—
নিষ্ফল এক অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু নয়,
ফুরিয়ে গেল যেভাবে এপ্রিল ফুরোয়
কিন্তু সেই চাহনি, সেই শব্দ আর স্বপ্ন
হরণ করে নিয়ে যায় আমার হৃদয়।

এই গান গত ক’সপ্তাহ ধরে লন্ডন জুড়ে বাজছে। সঙ্গীত বিভাগের একটি উপবিভাগ প্রোলদের উপকারে যে অসংখ্য গান প্রকাশ করেছে—এটি তার একটি। এই গান রচনায় কোনও মানব সন্তানের যোগসাজশ নেই। ভার্সিফিকেটর নামের একটি যন্ত্রের সম্পূর্ণ নিজস্ব সৃষ্টি এই গান। কিন্তু এই নারী গানটিকে এমন ছন্দময় করে গাইছেন যেন ভয়াবহ ফালতু একটি বিষয় সুমধুর হয়ে ফুটেছে তার কণ্ঠে। সে এই নারীর গান শুনছে আর কানে আসছে তার জুতোর ফটফট শব্দ, রাস্তা থেকে ভেসে আসা শিশুদের চিৎকার, দূরে কোথাও রাস্তায় গাড়ি চলার গর্জন। তবে এতকিছুর পরেও তার কক্ষটি বেশ শান্ত-নীরব। টেলিস্ক্রিনের অনুপস্থিতিই ধন্যবাদার্হ।

দ্বিতীয় খণ্ডের ১৯তম কিস্তির ‍লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।