ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ২১তম কিস্তি
___________________________________

ডুবন্ত সূর্যের একটা হলুদ রশ্মি বিছানার পায়ের দিকটাতে পড়ে ফায়ার প্লেসের ওপর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। ওটির ওপর পেতে রাখা কড়াইয়ে তখনও পানি ফুটছে। নিচের আঙ্গিনায় সেই নারীর গান থেমেছে, কিন্তু সড়ক থেকে শিশুদের চিৎকার চেঁচামেচির হালকা শব্দ এসে কানে লাগছে। তার কৌতূহলী মনে প্রশ্ন জাগল, মুছে দেওয়া অতীতেও কি বিছানায় শুয়ে থাকার অনুভূতি এমনটাই ছিল, গ্রীষ্মের শান্ত সন্ধ্যায়, দুই নগ্ন নর-নারী তাদের ইচ্ছামত যেমন খুশি ভালোবাসাবাসি করে, মনে যা আসে তাই নিয়ে কথা বলে সময় কাটিয়ে দিচ্ছে। উঠে যাওয়ার জন্য কোনও চাপ বোধ করবে না, স্রেফ শুয়ে থাকবে আর কানে ভেসে আসবে বাইরের শান্তশব্দগুলো। নিশ্চয়ই এসব কিছু স্বাভাবিক মনে হবে—এমন একটা সময় কখনওই ছিল না। জুলিয়ার ঘুম ভাঙল, চোখ দুটি দুই হাতে ডলে নিয়ে কনুইয়ের ওপর ভর করে মাথা তুলে তেলের স্টোভের দিকে তাকাল।



‘পানির অর্ধেকটাতো সিদ্ধই হয়ে গেল’—বলল সে। ‘একটু পরেই উঠব আর কফি বানাব। আমাদের হাতে আরও এক ঘণ্টা সময় আছে। তোমার ফ্লাটে আলো বন্ধ হয় কখন?’

‘রাত সাড়ে এগারোটায়। ’

হোস্টেলে রাত এগারোটায়। কিন্তু তোমাকে তার আগেই ঢুকে পড়তে হবে, কারণ... আয়হায়! নোংরা জানোয়ার এবার ওঠো!’

হঠাৎই দ্রুত বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে, মেঝে থেকে জুতো কুড়িয়ে নিয়ে ছোট বাচ্চাদের মত তা এক কোণায় ছুড়ে মারল। দুই মিনিটের ঘৃণা কর্মসূচিতে সেবার টেলিস্ক্রিনে গোল্ডস্টেইনের মুখের উপর ঠিক যেভাবে অভিধানটি ছুড়ে মেরেছিল সেভাবেই।

‘কী হলো!’ বিস্ময় উইনস্টনের কণ্ঠে

‘ইঁদুর। ওই কাঠের দৌড়ের ভেতরে থেকে ওর হিংস্র নাক বের করেছিল। ওখানে নিশ্চয়ই একটা গর্ত আছে। তবে ব্যাটাকে বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছি। ’

‘ইঁদুর!’—বিড়বিড় করে বলল উইনস্টন ‘এই কামরায়!’

‘ওদের বিচরণ সর্বত্র’—বলল জুলিয়া। আর বলতে বলতে আবারও শুয়ে পড়ল। আমাদের হোস্টেলের রান্নাঘরেও দেখি ঘুরঘুর করে। লন্ডনের কোনও কোনও এলাকা ইঁদুরে ছেয়ে গেছে। তুমি কি জানো ওরা শিশুদের ওপর আক্রমণ করে? সত্যিই করে। এইসব সড়কগুলোতে মেয়েরা দুই মিনিটের জন্যও তাদের শিশুদের একা ফেলে রাখতে ভয় পায়। বড় ধূসরবর্ণের ইঁদুরগুলোই কাজটা বেশি করে। আর সবচেয়ে ঘৃণার কাজটি এরা যা করে তা হচ্ছে...’

‘থাক না’—বলল উইনস্টন। চোখদুটো শক্ত করে বন্ধ করে রাখা।

‘আরে প্রিয়তম! তুমি তো পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গেছো। ঘটনা কী? ওগুলোর কথা শুনে অসুস্থ বোধ করছো নাকি?’

‘পৃথিবীতে ভয়াবহতমগুলোর একটি হচ্ছে এই ইঁদুর!’

বিছানায় উইনস্টনকে ফের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করল জুলিয়া, যেন সে তার শরীরের উষ্ণতা দিয়ে তাকে ভরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু তখনও চোখ খোলেনি সে। জীবনে বারবার আসা একটি দুঃস্বপ্নের স্মৃতির অনুভবে কয়েকটি দণ্ড নিজেকে আচ্ছন্ন করে রাখতেই মন চাইল তার। প্রায় সবগুলো স্বপ্নই একরকম। অন্ধকারের দেয়াল ঘেঁষে সে দাঁড়িয়ে। উল্টো দিকে কিছু একটা, ঠিক বোঝা যায় না, তবে ভীষণ ভয়ঙ্কর। এই স্বপ্নে বরাবরই তার এক গভীর অনুভূতি হয়, যাকে সে স্রেফ ছলনা ছাড়া কিছু মনে করে না। কারণ সত্যিই সে জানে ওই অন্ধকার দেয়ালের ওপারে কী আছে। সে জানে জোর চেষ্টা করলে, মস্তিষ্ক থেকে টেনে বের করলে, ভয়ঙ্কর বিষয়টিও প্রকাশ্য হয়ে যাবে। প্রতিবারই—কী সেই ভীতিকর বস্তু—তা প্রকাশ্য হওয়ার আগেই তার ঘুম ভাঙ্গে, আর সে জানে জুলিয়াকে যেখানে থামাল, সেখানে না আটকালে ও যা বলত তার সঙ্গে এর একটা যোগসাজশ রয়েছে।

‘দুঃখিত’—বলল সে, ‘কিছুই না। ইঁদুর আমার অসহ্য, এই যা। ’

‘উদ্বেগের কিছু নেই, প্রিয়তম, এই ঘরে ওর আর অস্তিত্ব মিলবে না। যাওয়ার আগেই আমি ওর গর্তটাকে কিছু একটা দিয়ে আটকে দেব। আর এরপর যেদিন আসব কিছু প্ল্যাস্টার নিয়ে আসব যাতে গর্তটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া যায়। ’

তাৎক্ষণিক যে ভীতি ছিল তা এখন অনেকটা কেটে গেছে। কিছুটা লজ্জাও বোধ করছিল উইনস্টন। বিছানার শিথানের দিকে উঠে বসল সে। জুলিয়া বিছানা ছেড়ে নেমে পড়ল আর আলখেল্লা গায়ে চাপিয়ে কফি বানাতে লেগে গেল। সসপ্যান থেকে যে কড়া, উত্তেজক গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে তাতে তারা জানালা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলো, নইলে কারও নাকে এই ঘ্রাণ গেলে আগ্রহী হয়ে খোঁজ লাগাতে চলে আসতে পারে। এর স্বাদে যতটা, তার চেয়েও বেশি ভালো লাগল চিনি মেশানো কফির রেশমি বর্ণ।

দ্বিতীয় খণ্ডের ২৩তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৫
টিকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।