ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২৯) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২৯) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ২৮তম কিস্তি
___________________________________

আমি জানি, অবশ্যই জানি, অতীত মিথ্যা হয়ে গেছে, কিন্তু আমি কখনওই তা প্রমাণ করতে পারব না, এমনকি আমি নিজে এই মিথ্যায়নের সঙ্গে যুক্ত থেকেও না। কোনও বস্তু চলে গেলে তার প্রমাণ আর কখনওই মিলবে না। একমাত্র প্রমাণ আমার নিজের মনের ভিতর বিরাজ করবে, আর কোনও নিশ্চয়তা দিয়েই আমি জানতে পারছি না আর কোনও মানব সন্তানই আমার মতো একই স্মৃতি বহন করছে কি না। আমার গোটা জীবনে মাত্র ওই একটি ঘটনাই ছিল, যা ঘটনার অনেক অনেক বছর পর আমার হাতে তার একটি সত্যিকারের প্রমাণ হিসেবে ধরা দিয়েছিল। ’

‘তাতে হলো টা কী?’

‘কিছুই হলো না, কারণ আমি কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেটি ছুঁড়ে দিয়েছি স্মৃতি গহ্বরে। কিন্তু একই ঘটনা যদি আজ আবারও ঘটে, আমি কিন্তু তা রেখে দেব। ’

‘আমি রাখব না!’—বলল জুলিয়া। ‘আমি এমন একটি ঝুঁকি অবশ্যই নিতে রাজি, কিন্তু তখনই নেব যখন তার একটা গুরুত্ব থাকবে, মূল্য থাকবে, পুরনো সংবাদপত্রের একটি ছেঁড়া অংশের জন্য নিশ্চয়ই নেব না। ধরো কাগজের টুকরোটি যদি এখনও তোমার কাছে থাকত, তুমি কী-ই করতে পারতে?’

‘হয়ত বেশি কিছু করতে পারতাম না। কিন্তু ওটা একটা প্রমাণ হয়ে নিশ্চয়ই থাকত। যদি আমি সাহস করে কাউকে ওটা দেখাতে পারতাম, তাতে এখানে সেখানে কিছু সন্দেহের বীজ বপন করা হয়ে যেত।   কল্পনায়ও ভাবি না, আমরা আমাদের জীবদ্দশায় কোনও কিছুই পাল্টে দিতে পারব। কিন্তু ছোট ছোট প্রতিবাদ এখানে সেখানে গড়ে উঠবে সে কথাটুকু ভাবনায় স্থান দেওয়া যায় বৈকি। ছোট ছোট দলে মানুষ জোটভুক্ত হচ্ছে, আর ধীরে ধীরে তা বেড়ে উঠছে, আর এমনকি কিছু কিছু ঘটনা ঘটিয়েও চলছে, যা পরের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যাবে এমনটা ভাবা কিন্তু অলীক নয়। ’

‘পরের প্রজন্ম নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই প্রিয়তম। আমি স্রেফ আমাদিগেই আগ্রহী। ’

‘তোমার বিদ্রোহ স্রেফ কোমরের নিচেই সীমাবদ্ধ’—উইনস্টন বলল জুলিয়াকে। দারুণ বুদ্ধিতায় আর চতুরতায় সে এটা মেনে নিল আর তাকে দুবাহু বাড়িয়ে গভীর আনন্দ আলিঙ্গনে জড়াল।

পার্টির মতবাদের এসব শাখা-প্রশাখা নিয়ে তার সামান্যতম আগ্রহও নেই। যখনই উইনস্টন ইংসকের নীতি নিয়ে কথা বলে, দ্বৈতচিন্তা, অতীত মুছে দেওয়া, বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতার অস্বীকার, কিংবা নিউস্পিকে ব্যবহৃত শব্দ নিয়ে কথা তোলে—সে বিরক্ত হয়, তালগোল পাকিয়ে ফেলে আর বলে, এসবে তার আগ্রহ বা আকর্ষণ কোনও কালেই ছিল না। সবাই জানে এসব কিছুই ফালতু, তাহলে কেনই কেউ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবে? সে জানে কখন আনন্দিত হতে হবে, কখন ধুয়ো তুলতে হবে, আর কারও ঠিক সেটুকু জানলেই চলে। এরপরেও উইনস্টন যদি এসব বিষয় নিয়ে কথা চালিয়ে যেতে থাকে তখন সে আস্তে করে ঘুমিয়ে পড়ে। কিছু মানুষ আছে না, যে কোনও সময় যে কোনও স্থানে ঘুমিয়ে পড়তে পারে—সে তাদেরই একজন।

গোঁড়ামির মানেটা পর্যন্ত না জেনে নিজেকে একজন পাক্কা গোঁড়া হিসেবে সাজিয়ে রাখা যে কত সহজ তা জুলিয়ার সঙ্গে কথা বলেই প্রথম বুঝেছে উইনস্টন। কোনও না কোনওভাবে পার্টি খুব সফলতায় মানুষকে তাদের বোধে অক্ষম করে তুলতে পেরেছে। বাস্তবতার ভয়াবহ লঙ্ঘনটিও তারা মেনে নেয়, কারণ তারা কখনও জানেই না তাদের কাছে কী চাওয়া হচ্ছে, আর সরকার কোথায় কী ঘটিয়ে চলেছে তা নিয়ে তাদের আগ্রহও সামান্যই। স্রেফ নির্বুদ্ধিতার জোরেই ওরা হয়ে থাকে যৌক্তিক। তারা সবকিছু গলধঃকরণ করে, আর যা কিছুই গিলুক তাতে তাদের কোনও ক্ষতি-বৃদ্ধি হয় না, এর কোনও অবশিষ্টাংশ থাকে না। ভুট্টার একটি দানা যেমন পাখির ঠোঁট থেকে পেটে ঢুকে মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায় ঠিক তেমন।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৩০তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।