ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

পর্বাপর | আবদুর রাজ্জাক শিপন

গল্প / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫
পর্বাপর | আবদুর রাজ্জাক শিপন

চ্যাটিং পর্ব
-তারপর?
-তারপর আমি পাহাড়ের কাছে গিয়েছিলাম। লতা-পাতা গুল্মের পাহাড়ী নিঃসঙ্গতার কাছে আমার নিঃসঙ্গতা উবে গিয়েছিল! পাহাড় যত বড়, তার একাকীত্বও তত বিশাল! জানো?
-জানি না তো!
-পাহাড়ের পাদদেশে সাঁওতাল পরিবারগুলো দেখেছো? সাঁওতাল মাতা সন্তান পিঠে বেঁধে পাহাড় বায়, কাঠ কাটে, খাবার সংগ্রহ করে, দেখেছো?
-দেখিনি তো!
-তুমি দেখি কিছুই জানো না, দেখো নি! আমি সেই সাঁওতাল মায়েদের মতোই খুব অল্পতে সুখী হতে চাই ! সাধারণ জীবন যাপন করে সন্তান লালন করতে চাই...!
-হুঁ, কিছুই জানি না আমি।

ষোল আনাই মিছে এ জীবন আমার! কিন্তু, তুমি পারবে! আর..
-আর কী?
-নিঃসঙ্গ পাহাড়ের কাছে গিয়ে তুমি যখন দাঁড়াও, তোমার পাশে আমিও খানিক জায়গা চাই!
-পাশে থাকা অতো সহজ না গো!
-তা জানি!
-তাহলে?
-চেষ্টা তো করতে পারি!
-তা পারি!
-তারপর?
-তারপর কী?
-শুধু কি পাহাড়ের কাছে গেলেই তোমার পাশে জায়গা দেবে আমায়? আর?
-আর নদীর কাছে গেলেও তুমি পাশে থেকো!
-আচ্ছা থাকব!
-নদীর ঢেউ গুনব আমরা!
-গুনব!
-ঢেউ গুনে গুনে ক্লান্ত হব! নদীর পাড়ে হাঁটব! ইচ্ছে হলে গাংচিল হবে মন! দূরগামী জাহাজের মাস্তুলে উড়ে বসব! ঠোঁটে ঠোঁটে ঠোকর খাব! জাহাজের নাবিকের ক্যামেরাতে আমরা যুগলবন্ধি হব! সাদা সাদা আর রঙিন মাছেদের টুপটাপ ঠোঁটে তুলে নিয়ে আমাদের মনের একুরিয়ামে সাজিয়ে রাখব অনন্তকাল!
-আর আমরা ঝিনুক কুড়োব!
-হুঁ মুক্তোবিহীন!
-মানে কী?
-ঝিনুক কুড়োব! কুড়িয়ে কুড়িয়ে জড়ো করব অসংখ্য ঝিনুক! ঝিনুকের ভেতর মুক্তো খুঁজব! মুক্তো পাব না! মানুষের জীবনটাই এই! এক জীবন চলে যায় মুক্তো খুঁজে খুঁজে! ঝিনুক মেলে, অসংখ্য ঝিনুক মেলে, মুক্তো মেলে না আর!
-একদম ঠিক!
-আচ্ছা, আজ যাই!
-যাই!

এসএমএস পর্ব
মেয়েটি:
এখন বাংলা কী মাস, জানো? জানো না তুমি? কিছুই জানো না তুমি! ভাদ্র মাস! ভাদ্র মাসের ১২ তারিখ আজ। অপূর্ব সুন্দর রাত ফুটেছে! আজ রাতের বিশেষত্ব বলতে পারো? হয়েছে! বুদ্ধু তুমি মাথা চুলকিও না আর! আজ পূর্ণিমা! মধু পূর্ণিমা! এই পূর্ণিমাতে পৃথিবী একটু বেশিই হাসে! রূপচাঁদা রঙ চাদর পড়েছে রাত্রির গায়! অদ্ভুত ঝলমলে রূপোলি আলো গায়ে মেখে চাঁদমামা আমার ব্যালকনিতে ঝুলে আছে! চাঁদমামার সঙ্গে আমার কথোপকথন হলো নিম্নরূপ—
-চাঁদমামা! আপনি কি পুরুষ?
-না, আমি নারীর মতোই সুন্দর!
-তাহলে আপনাকে মামা ডাকি ক্যান?
-যেভাবে ডেকে তুমি আরাম পাও!
-পুরুষ হলে আমার সুবিধা!
-কী রকম?
-আমি আপনার সঙ্গে প্রেম করতাম!
-ও আচ্ছা! পৃথিবীব্যাপী আমার অগুনতি প্রেমিকা!
-আপনি দেখি আস্ত একটা ‘...’! হি হি হি!
বুদ্ধু শোনো! এই এসএমএস-এর অর্থ বোঝো! এরকম রূপোলি রাতগুলোতে তুমি কি আমার পাশে থাকবে? থাকবে না? আমার হাত ধরবে? ধরবে না?

ছেলেটি:
পাগলিটা! এত সুন্দর এসএমএস কীভাবে দাও! অল্পের জন্য হার্টবিট মিস করছিলাম! যে লাফটা দিলাম, ভালো কোনো ফটোগ্রাফার সামনে থাকলে, বছরের সেরা দশ ইম্প্রেশনের একটা ধরে ফেলতে পারত! ভোঁ দৌঁড়ে ছাদে গেলাম! এইভাবে চাঁদের রূপ আগে কখনো ধরা হয় নি চোখে! মনে হলো, কত জনমের আপন আর চেনাজানা এই চাঁদ মামার সঙ্গে! চাঁদের রূপোলী রঙ গায়ে মেখে দুই হাত প্রসারিত করে আকাশমুখো আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি কি দেখতে পাও? দেখতে পাও না?
পাগলিটা! অনেক কিছুই জানি না আমি। কিন্তু এই মুহূর্তে তুমি কী করছো, জানি! তারা গুনছো! তারা গোনার এ্যাই পাগলামিটা কত দিনের? বললে না কেন, আমায়?

মেয়েটি :
হি হি হি! বুদ্ধুটা পাকনা হয়ে উঠছে! একান্ত গোপন এই পাগালামির কথা কাউকে বলি না তো! এইরকম রূপোলি রাতগুলোতে আমি তারা গুনি! সাত-সাতাত্তর এবং সাতশ’ তারা গোনা হলে, একজন কাউকে মিস করি! মনে হয়, সে পাশে থাকলে এক সঙ্গে তারা গুনতাম! গুনে গুনে খাতায় লিখে রাখতাম তারার হিসাব!

ছেলেটি:
ইচ্ছে হয় ডানা মেলে উড়ে যাই বিহঙ্গের মতো। আমাদের জীবনের বাকি পূর্ণিমাগুলোতে আমরা কাছাকাছি থাকব। পাশাপাশি থাকব। সাত হাজার সাতশ’ সাতষট্টিটি তারা গুনব। তোমার খোঁপায় দেব কবি নজরুলের তারার ফুল।
রাত ভোর হবে খানিক পর। ঘুমুবে না? ঘুমোও এবার। তোমার চুলে আঙ্গুল গলিয়ে বিলি কেটে দেই! ঘুমপাড়ানি মাসিপিসির গান গাই...শুভঘুম!

মেয়েটি :
সুখস্বপ্ন! শুভঘুম!

চিঠিপর্ব
অপূর্ব!
কিছু মানুষ থাকে আজন্ম একা। শত কোলাহলমুখরতা, হাসি-হুল্লোড়েও তারা একা। নিজস্ব নির্জন দ্বীপে হয় তাদের একাকী পরিভ্রমণ। পলায়নপর এই মানুষেরা পালাতে পালাতে একটা জীবন কাটিয়ে দিতে চায়! আমি সেই পলায়নপর মানুষ!

আমি খুব অদ্ভুত আছি। ধরা দিতে মন চায় না। কোথাও আটকে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হলে, হাঁসফাঁস লাগে। একাকীত্বে ভীষণ ভয়, আবার একাকীত্বই প্রিয়। মাঝে মাঝে নিজেকে চিনি না, মনে হয় আমিই হয়ত একা থাকতে চেয়েছি সবসময়। একটা আড়াল রেখে দিয়েছি, যার সাথে কারো পরিচয় নেই। কি ভয়াবহ বিষণ্ণতা! সমস্ত কিছু কালো! ভীষণ অন্ধকার!

গত ক’দিন আমি ভালো আছি। খুব ভালো আছি। অনেকদিন পরে এত্ত ভালো আছি। একা একা লাগে না আর। নিজেকে নিরাপদ পাখির বাচ্চার মতন লাগে। তোমার ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছি। অথচ যে সুতীব্র মমতায় তুমি জড়িয়ে আছো, তার কিছুই হয়ত ফিরিয়ে দিতে পারছি না। এই স্বার্থপরতা ক্ষমো।

এত ভালোবাসা কখনো পাইনি, বিহ্বল লাগে। চাওয়ার মতো করে নিজেকে সঁপে দিতে পারছি না তোমাতে! অথচ আমি তো তোমাকেই চাই! কি কষ্ট!

হুমায়ুন আহমেদের এক লেখাতে পড়েছিলাম, দুজন মানুষের একটা নকশা থাকে। তারা পৃথিবীতে আসে। নকশাটা দুভাগ হয়ে দুজনের কাছে থাকে। তারপর হঠাৎ দুজনের দেখা হয়ে যায় একদিন! তারা বোঝে, তাদের হাতে থাকা নকশার অপর অংশ পেয়ে গেছে তারা। আদতে, অধিকাংশ সময় তারা ভুল অর্ধেক পায়। ভুল মানুষের সাথে জীবন কাটিয়ে দেয়। বিভ্রান্ত হয়। অনেক পরে বোঝে, প্রিয় মানুষটির হাতে ভালোবাসার নকশার যে অর্ধাংশ, সেটা আসলে তার অর্ধাংশের সাথে মিল নেই। ততদিনে দেরি হয়ে যায় বিস্তর।

কিন্তু, আমার নকশা মিলে গেছে। ৫০ বছর পরে দেখা হলেও আমি টের পেতাম, আমার বাকি অর্ধাংশ তোমার হাতে। আমি ভালোবাসা বুঝি না অত! অথচ, হুমায়ুনের এই থিওরি পড়ার পর নকশা খুঁজে বেড়িয়েছি, ভুল নকশার কাছে ছুটেছি বারবার।
“ঘর ভরা দুপুর
আমার একলা থাকার সুর
রোদ গাইত, আমি ভাবতাম
তুমি কোথায়, কতদূর?”
আমার ঘরের জানালা দিয়ে একটা মাঠ এবং তার পরেই পাহাড় সারি। যে পাহাড়ের কথা তোমাকে বলেছিলাম। এই পাহাড় এত দেখেও এক জনমে আমার সাধ মিটে না আর। পৃথিবীর বুকে বিশাল নিঃসঙ্গতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় সারিকে আমার বড্ড মহৎ লাগে! পাহাড়ের কাছে গেলে, নিজেকে আমার নির্ভার আর নিরাপদ লাগে। পাহাড় দেখতে দেখতে আমি তোমার কথা ভাবি। আমার খুব ইচ্ছে করে, এইসব পাহাড়ের কোলে একটা জীবন খুব সাদামাটাভাবে তোমার সঙ্গে কাটিয়ে দেই।
-চন্দ্রাবতী

চন্দ্রাবতী গো!
একসময় মানুষ চিঠি লিখত—আবেগমথিত চিঠি। মনের মাধুরী মেশানো অম্লমধুর চিঠি! চিঠি যুগ ফুরিয়েছে। তবু, তোমার চিঠিখানা এত্ত ভালো লাগল! প্রিয় মানুষের সবকিছু বুঝি এরকম সুন্দর হয়? এ দেখছি ভারী অসুখের পূর্বাভাস!

শত মানুষের ভিড়েও একাকী হয়ে যাবার রোগটি কি আমাদের প্রত্যেকের মাঝেই নেই, এক-আধটু? আছে তো! বিকেলগুলোতে মানুষের ভিড়ে নিজেকে আমি ঠেলে দেই! ফুটপাত ধরে হাঁটি। আমি দেখি গাঁদাগাঁদি দাঁড়িয়ে থাকা বাসভর্তি মানুষ। ঘর্মাক্ত অফিস ফেরতা নারী—ঝুলে থাকে বাসের লোহার হ্যান্ডেলে! তাঁর পিঠে লেপ্টে থাকে কোন লোলুপ পুরুষ! পুরুষের তিন নাম্বার হাত সজাগ হয়। নারীটির চোয়ালে অস্বস্তি জেগে রয়! বাসায় ফিরে সুগন্ধি সাবান ঘষে ঘষে, ঘষে ঘষে শাওয়ার নিয়ে সে হয়ত অস্বস্তি ধুয়ে ফেলতে চায়। সন্তানের মুখে চুমু খায়। অস্বস্তি ভুলে যায়। তখনো আমি দেখি, সিগনালের ফুল কিশোরী। যার হাতের ফুল আর মুখচ্ছবির প্রতিবিম্ব পড়ে প্রাইভেট গাড়ির রঙিন কাচে। গাড়ির কাচ নেমে যায়, ভেতর থেকে কোনো সুন্দর হাত ফুল কিনে নেয়, ফুল কিশোরীর চকমকে চোখে স্বপ্ন খেলা করে। আমি দেখি ফুটপাথের জীর্ণ খণ্ডবস্ত্র মায়ের পাশে হাড্ডিসার শিশু। শুনি বাস-ট্রাকের হর্ন, রিক্সার ঘণ্টাধ্বনী, অজস্র কোলাহল, তখন শহরের নিয়ন আলো জ্বলে ওঠে আর আমি একা হয়ে যাই। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি, সবরকম শব্দদূষণ আর কোলাহল থেকে। নিজস্ব নির্জন দ্বীপে একাকী চলি। চোখ ভিজে যায়। এই নিঃসঙ্গতার কথা আমি কাওকে বলি না!

ছেলেবেলায় আমি এক নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতাম। শৈশবের স্কুলটি ছিল নদীর পাড়েই। টিফিন আওয়ারে নদীর বাঁধ পেরিয়ে নদীর কাছাকাছি যেতাম। ঢেউ দেখতাম। ঢেউ গুনতাম। পালতোলা নৌকো দেখতাম। ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকোর ভেসে যাওয়া দেখতাম। ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকো তো নদীপাড়ের জেলে পরিবারের ততোধিক ছোট্ট শিশুর নৌকোর হাল ধরা, লগি-বৈঠা ধরা দেখতাম। অবাক চোখে শিশু মাঝির নৌকো চালনা দেখতাম, আর কখনো শৈশবের বন্ধুর সঙ্গে বালিয়াড়িতে নয় ঘর কেটে তিন ঘুটি খেলতাম। মুগ্ধ হয়ে নদী দেখার সেই কালে বিস্ময়বোধ জাগলেও, স্বপ্নের চোখ ফোটেনি তখনো আমার।

স্বপ্নের চোখ ফুটল যখন, তখন তো পাহাড়ের মতন বড় হবার স্বপ্ন দেখেছি বহুবার! পাহাড়ের কাছে ছুটে গেছি বারবার! ‘কত ক্ষুদ্র আমি’—সেই শিক্ষা নিয়ে ফিরে এসেছি প্রতিবার! সমুদ্রের বিশালতা আর পাহাড় ছায়াতে দাঁড়িয়ে, অতি ক্ষুদ্র মানব আমি, অতি তুচ্ছ এ জীবনেও অনেক আনন্দ পেয়েছি। অথচ, তোমার মতো করে পাহাড়ের নিঃসঙ্গতাকে ওইভাবে অনুভব করা হয় নি কখনও, সত্যি!

কোনো এক পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছিমছাম খুব সাধারণ একটি বাড়ি, আর ছিমছাম সাধারণ জীবনের তোমার স্বপ্ন এখন আর আমার অপরিচিত নয় চন্দ্রাবতী! সেই বাড়িতে, সেরকম একটি বাড়িতে আমরা একদিন যাব, আমরা কি যাব না?

হুমায়ূন আহমেদের নকশার কথাটি মনে থাকবে দীর্ঘদিন। আমাদের নকশা দুটো হুবহু মিলে গেছে কিনা, তা আমরা বলতে পারি না। বলতে পারব, পাহাড়ের কোলঘেঁষা সেই সাধারণ ঘরে, যখন অতি সাধারণ জীবন যাপন শুরু করব আমরা। তবে, পঞ্চাশ বছর পর দেখা হলেও আমরা প্রেমে পড়তামই, এইটুকু ঠিক ঠিক বুঝতে পারি।

খুব কাছাকাছি, পাশাপাশি, এক ছাদের নিচে জীবন কাটিয়ে দিতে যদি নাও পারি, পাবলিক লাইব্রেরিতে, অলিয়ঁস ফ্রসেজে, নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলোতে যদি পাশাপাশি চলতে পারি কিছু সময়, অথবা অন্তত এক আকাশের নিচে থেকে, একই চাঁদ দেখতে দেখতে, একই কবিতার পঙক্তি আওড়াতে আওড়াতে, একই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে, যদি আমরা নিজেদের মনে করতে পারি; সুখস্মৃতিগুলো মনে করে করে যদি নিজেদের অবর্তমানেও শিহরিত হতে পারি—সেই আমাদের প্রাপ্তি!

কিংবা কখনো যদি দুরন্ত বাসের জানালায় বসে ছিমছাম বাড়িগুলো, মাঠের গাভী আর ছোট ছোট বাছুরগুলো, দ্রুত ছিটকে যাওয়া সবুজাভ গাছগুলো, ছোট-বড় মানুষের অবয়বগুলো, হাওয়াতে উড়তে থাকা তোমার সিল্কি চুল, উড়ে যাওয়া এক ঝাঁক পাখি এইসব দৃশ্যপটে তোমার একান্ত অনুভূতির আলোড়নে, আমাকে স্মরণ করো—সেই তো প্রাপ্তি!

একজীবনে আমাদের স্বপ্নরা অধরা থেকে যায়। স্বপ্নরা মরে না তবু। হৃদয়ের গহীন নিভৃতে লুকিয়ে থাকে। পথ আলাদা হয়ে যায়, বদলে যায় জীবনের ধারাপাত, তবু, নিভৃতচারী জীবনের কোনো একান্ত ক্ষণে আমাদের স্বপ্নরা জেগে ওঠে আবার। দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা, দূরের তারার পানে চেয়ে চেয়ে তখনো ভাবে, এইরকম একটা স্বপ্নের পাহাড় ঘেঁষে, স্বপ্নের একটা ছোট্ট ঘর আর সেইখানে ছোট্ট সুখী পরিবারের একটা স্বপ্ন ছিল আমাদের। আমাদের ছিল স্বপ্নের মানুষ!

জীবন চলার পথে পথে, ছোট্ট ছোট্ট কুঁড়েঘরের বড় বড় মনের মানুষদের সুখী সংসার দেখে দেখে, তাদের সুখী হবার সহজ সূত্র দেখে দেখে, আমরা তখন ঈর্ষান্বিত হব, কিংবা একটা সুখস্বপ্নের সুখের মুহূর্তগুলোর কথা ভেবে, এক ঝলক আনন্দিত হব, এইবা কম কী!
আমরা খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও তেমনই স্বপ্নময় জগতে কাটাব, ক্ষণিককাল...!
যদিও আমার চোখে ঢের নদী ছিল একদিন
পুনরায় আমাদের দেশে ভোর হ’লে,
তবুও একটি নদী দেখা যেত শুধু তারপর;
কেবল একটি নারী কুয়াশা ফুরোলে
নদীর রেখার পার লক্ষ্য ক’রে চলে;
সূর্যের সমস্ত গোল সোনার ভিতরে
মানুষের শরীরের স্থিরতর মর্যাদার মতো
তার সেই মূর্তি এসে পড়ে



বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।