ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নির্মলেন্দু গুণ মানুষ নন | জুননু রাইন

গুণের জন্মদিনে / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
নির্মলেন্দু গুণ মানুষ নন | জুননু রাইন ছবি: সংগৃহীত

তিনি মানুষ কী-না এ ব্যপারে নির্মলেন্দু গুণের সন্দেহ থাকলেও কোনো প্রতিভাবান কবির সন্দেহ থাকার কথা না। মানুষের অনেক হিসেব থাকে।

অনেক হিসেবের মধ্যেও মানুষ থাকেন। নিয়ম তাকে বেঁধে রাখে। ভয় আকড়ে ধরে। লোভ তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সুবিধে না হলে সে নিজেকে অস্বীকারও করে...

কবি তা পারে না। বিশেষ করে কবি নির্মলেন্দু গুণ তো পারেন-ই না। তার জীবন-যাপন আর বুক-মুখ তারই সাক্ষ্য বহন করে। নির্মলেন্দু গুণ তাকে নিয়ন্ত্রণ করেন না, তাঁর ভেতরের যে সত্তাটি তাঁকে পথ দেয়ায়। যে তার চোখে ঐশ্বরিক আলো মাখায়। যে তাকে বলে—আমার সাথে থাকো যাপনের রহস্য দেখাব। গুণের রহস্য ক্ষুধা তাকে তাঁর সত্তার বন্ধু করে রেখেছে। মানুষ হতে দেয়নি।

আমি কোনো আগন্তুক নই বললেই কবি আহসান হাবীবের বিশ্বাসের এক অন্য মানুষের আগমনের শব্দ মেলে...

নির্মলেন্দু গুণ মানুষ কী-না নিজেকে এই জিজ্ঞাসায় সমাজ শৃঙ্খলিত সামাজিক জীবনের একটি পরিমাপ রয়েছে। যেখানে অনুভূতির সীমারেখা এঁটে দেয়া আছে। জীবনকে না দেখার ইচ্ছে চাপানো আছে। নিজেকে বুঝতে চাওয়ায় বারণ আছে, জোড়ালো কারণও দেখিয়ে দেয়া আছে।

নির্মলেন্দু গুণ এই সমাজের কোনো একজন রীতিবদ্ধ জীবনের মানুষ নন। তাঁর জীবন চিরন্তন সত্যের মতো বাঁধাহীন মুক্ত। সে জীবন সামনের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনাকে সমান ছুঁয়ে যাবার সাহস রাখে। তাঁর জীবনীশক্তি কোনো কিছু এড়িয়ে যেতে তাঁকে প্রলুব্ধ করে না। তাই তিনি হাত বাড়িয়ে না ছুঁলেও মন বাড়িয়ে ছুঁতে পারেন। তাঁর হিসেব ইতিবাচক-সৃষ্টিশীল। তাঁর ভাবনা অন্য সবার মতো দু’জনকে এক করা নয় বরং এককে অধিকে রূপান্তরিত করাই তাঁর কাজ। কারণ তিনি শ্রষ্টা। যে কারণে তিনি অন্য অনেকের মতো মানুষ না হয়ে—বয়ে চলা নদী, ফুলের গন্ধ আর জোৎস্নার সাদা হাসি হয়ে আছেন।

সামাজিকভাবে বাঁচার জন্য মানুষকে তার জীবন অনেকগুলো  শর্তের কাছে বন্ধক রাখতে হয়। কখনো কখনো মানুষ বাঁচতে চায় লোভে, মরতে চায় নিজেকে কষ্ট সহ্য করতে না দিতে চাওয়ার বিলাসিতায়। এসবই সত্তাকে নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির জীবনের ক্লান্তিকর খেলা। এর মধ্যে দিয়েই অতিবাহিত হয় সামাজিক নামের এক প্রতারণা প্রবঞ্চনার দীর্ঘ দীর্ঘ জীবন প্রণালী...

কবি এখানে নিজেকে সমর্পণ করেন না। যেমনটি করেননি নির্মলেন্দু গুণও। তিনি তাঁর যাপনের পাশে থেকে দেখেছেন জীবনের খেলা। তাঁর অপ্রবঞ্চিত জীবনের খেলা। যে জীবন চিরন্তন জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে।

যে কারণে তিনি সাপ দেখেন আবার নিজেকে দৌড়ে না পালাতেও দেখেন। মৃত্যুকে পাশে রেখে তিনি সাপের কাছেও এগিয়ে যান। বরফমাখা জল না খেয়েও পক্ষপাতহীনভাবে তৃষাকে দেখতে পান, দেখতে পান নির্মোহ হাহাকারে।

মুগ্ধতা তুলনামুলক মূর্খতা। সেখানে যে আটকে থাকে তাকে আর নতুন কিছু দেখার বা জানার আকাঙ্ক্ষা তাড়িত করতে পারে না। ভালোবাসায় নিজেকে সমর্পণ করে রাখলে আটকে থাকতে হয় মোহের জালে। ব্যহত হয় জীবনের চলার প্রাকৃতিক পথ। অথচ জীবনকে চিনতে হলে ঘৃণা এবং ভালোবাসা অপরিহার্য। সেটা নির্মলেন্দু গুণও জানেন। তিনি বলছেন না তাঁকে ভালোবাসতেই হবে তিনি চান কেউ একজন তাঁর জন্য অপেক্ষা করুক শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য। তিনি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চান এই আবেগেরও। দেখতে চান নিজেকে—এমন হলে কীভাবে বেঁজে উঠবে তার জীবন। কবি জানেন জীবন থেমে থাকার নয়। জীবনকে থামিয়ে রাখাও তার কাজ নয়। তিনি দেখতে চান, বুঝতে চান সমৃদ্ধ করতে চান নিজেকে। কেননা জীবনের না জানা আগামীর কথা যে কবিকেই জানাতে হয়।



বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।