ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

রমজানের ওই রোজার শেষে

এক গানে ঈদের আমেজ-খুশি-মাহাত্ম-চেতনা

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৫
এক গানে ঈদের আমেজ-খুশি-মাহাত্ম-চেতনা

ঢাকা: একটি গান কতোটা হৃদয়ের হলে, কতটা বাস্তব হলে সব বাস্তবতাকে ডিঙিয়ে একনাগারে চলতে পারে! কতটা হৃদয়স্পর্শী হলে সব পুতমনে দিতে পারে দোলা। টানা ৮৩টি বছর ধরেই তো তাই হচ্ছে।



‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ’...। কী আবেগ, কী চেতনা, কী ভরপুরতা। যতই বলা হোক কম হয়ে যাবে, একথা গানটির প্রথম গায়ক ওস্তাদ আব্বাসউদ্দীন আহমেদের।

এ একটি গানে কাজী নজরুল ইসলাম যে মায়া ঢেলেছেন, তাতে পুরো গান হয়ে দাঁড়িয়েছে ঈদের আমেজ-খুশি-মাহাত্ম-চেতনার প্রতিচ্ছবি। শাওয়াল মাসের চাঁদ উঠবে আকাশে; আর এ গানটি বাঙালির ঘরে ঘরে বেজে উঠবে না তা কী হয়! বর্তমানে তো আধুনিক যুগ, রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন, ইউটিউবের মাধ্যমে গানটি ছড়িয়ে যাচ্ছে শ্রোতার কানে কানে চাঁদ ওঠার সাথে সাথে।

বাঙালি মুসলমানের ঈদ উৎসবে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি যেমন প্রাণে প্রাণে উজ্জ্বল। তেমনি একক ও স্বতন্ত্র জনপ্রিয়তা এ রকম খুব কম গানের ক্ষেত্রেই এসেছে। সর্বজনীনভাবে প্রতিবছরই তো রমজান শেষে ঈদের চাঁদ উঠলেই সবার কণ্ঠে ধ্বণিত হতে থাকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ সাড়া জাগানো গানটি।

এটি গান হিসেবে বাঙালির কাছে বেশি পরিচিত, তবে গানটির সঙ্গে এর মূল কবিতার বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। নজরুল মূল গানটি রচনা করেন ১৯৩১ সালের শেষ দিকে। যে সময়টায় এ গান রচিত হয়, সে সময় নানা ধারার গানে নজরুলের খ্যাতি থাকলেও ইসলামি গান রেকর্ডিংয়ে সেভাবে হাত দেননি তিনি। ফলে নজরুল যে একজন ইসলামি কবিও তা প্রমাণের বাধ্যবাধকতা ছিল। কারণ মুসলিম কট্টর সমাজে ততক্ষণে নজরুল নিয়ে নানা সমালোচনাও ভাসছিল।

এদিকে, সে সময়ই কলকাতা তথা গোটা বাঙালি সমাজে শিল্পী হিসেবে আব্বাসউদ্দিন আহমদের নাম বেশ সাড়া ফেলে। নজরুলের সঙ্গে তার হূদ্যতাও ছিল বেশ। তাই তো নজরুলকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন ইসলামি গান লেখার জন্য, যাতে তিনি তা গাইতে পারেন। সে সময় নিয়মিত নজরুলের বাসায় যাতায়াতও ছিল তার। আব্বাসউদ্দিনের অনুরোধ ইসলামি গান রেকর্ডিং করার। শিল্পীর এ আর্জিতে নজরুলও বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যেতে সম্মত হন এবং তত্কালীন গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল ইনচার্জ ভগবতী ভট্টাচার্যের সঙ্গে এ নিয়ে আব্বাসউদ্দিনকে আলাপও করতে বলেন।

প্রথম দিকে লাভ-লোকসানের কথা চিন্তা না করে এক বাক্যেই ‘না’ করে দেন ভগবতী। তবে নানাভাবে তাকে বুঝিয়ে অবশেষে প্রায় এক বছর পর ইসলামি গানের রেকর্ড প্রকাশের সম্মতি আদায় করেন শিল্পী আব্বাস উদ্দিন।

গানটি রেকর্ড হওয়ার মাস দুয়েক পরই ছিল ঈদুল ফিতর। আর ঈদের সময়েই রেকর্ডটি বাজারজাত করে গ্রামোফোন কোম্পানি। রেকর্ড নং-৪১১১, প্রকাশকাল ছিল ১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। আর এ রেকর্ডটির সুবাদেই আজ থেকে প্রায় ৮৩ বছর আগে শ্রোতাদের কানে প্রথমবারের মতো পৌঁছে যায় ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি। সেদিন কি গানটির প্রথম গায়ক আব্বাসউদ্দিন কিংবা কালজয়ী এ গানের রচয়িতা কাজী নজরুল ভেবেছিলেন এই একটি গানের আমেজ-খুশি-মাহাত্ম-চেতনা এতোটাই হবে যে তা চাঁদ রাতের ‍অন্য নাম হয়ে ঈদের আনন্দের প্রতিচ্ছবিই হয়ে যাবে...।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৫
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।