ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একটি লাল ম্যাগাজিনের গল্প

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৫
একটি লাল ম্যাগাজিনের গল্প

ম্যাগাজিনের নামটি ‘বাংলানিউজ’ রাখাই সাব্যস্ত হয়। কয়েক ডজন নাম জমা পড়েছিলো বাংলানিউজের কর্মীদের তরফ থেকে।

তার মধ্য থেকে আধা-ডজন খানেক নাম আলাদা করে ম্যাগাজিন কমিটি। প্রতিটিই সাহিত্যধর্মী। কোনওটি আবার ডিজিটাল মিডিয়ার সঙ্গে বেশ খাপ খায়। কিন্তু সবগুলোকেই বাতিল করে এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন বললেন, নামটা হোক ‘বাংলানিউজ’। ওটাই ব্র্যান্ড নেম। আর বাংলানিউজতো এখন ডিজিটাল মিডিয়ার আরেক নাম।

এক ও অকাট্য যুক্তি, আর গ্রহণীয়তো বটেই। ম্যাগাজিনের নাম চূড়ান্ত হলো ‘বাংলানিউজ’। তাহলে রঙ? সে প্রশ্নেরও সহজ সমাধান বাংলানিউজের ব্র্যান্ড রঙ ‘লাল’। উৎসবের এই রঙই হবে ম্যাগাজিনের বেজ কালার। যার পাতায় পাতায় ছড়াবে রঙের ছটা। আর ‘ডিজিটাল মিডিয়ার স্বপ্নসারথি’ স্লোগানটি আগে থেকেই নির্ধারিত। ফলে একটা ম্যাগাজিন প্রকাশের মূল কিছু সিদ্ধান্ত হয়ে গেলো। এরপর কাজে নেমে পড়া। তবে প্রধানতম সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয় তখনই- এই ম্যাগাজিন ডিজিটাল ও প্রিন্ট দুই ভার্সনেই প্রকাশিত হবে।
 
অনলাইন সংবাদমাধ্যমের একটি প্রকাশনার প্রিন্ট ভার্সন! বিস্ময়ের বটে! তবে প্রয়োজন রয়েছে। এই জুলাইয়ে বাংলানিউজ তার পথ চলার পাঁচ বছর পূর্ণ করেছে। ফলে এটা একটা মাইল ফলক। অনেকেরই মত, এই বছরের ম্যাগাজিনটি প্রিন্ট ভার্সন প্রকাশ করা হলে তা একটি স্যুভেনির হয়ে থাকবে। তবে তার চেয়েও গুরুত্ব পায় বাংলানিউজের পৃষ্ঠপোষকদের ইচ্ছা। বিজ্ঞাপন দিয়ে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা বাংলানিউজের একটি মুদ্রিত প্রকাশনাও দেখতে চান। এতে, যারা এখনো অনলাইনে অভ্যস্ত হননি তাদের যেমন সুবিধা হয়, তেমনি অনভ্যস্তদের মধ্যে অনলাইনের প্রতি আগ্রহ বাড়ারও সুযোগ থাকে।

মেনে নেওয়ার মতো যুক্তি, তাই সিদ্ধান্তও সেটাই। শুরু হলো কাজ। মূল দায়িত্ব ফিচার সম্পাদক ফারুক আহমেদের। বিভিন্ন দৈনিকে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা ঈদ সংখ্যা প্রকাশে তার পাকা হাত। দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন, ৬০০ পৃষ্ঠার একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ খুবই সম্ভব। সিদ্ধান্ত হলো যে নকশায় মুদ্রিত ভার্সন, সেই একই নকশায় তা প্রকাশিত হবে অনলাইনে।

ই-বুকের মতো পৃষ্ঠা উল্টে উল্টে পাঠক পড়বে এই ম্যাগাজিন

প্রচ্ছদ আঁকলেন শিল্পী মাহবুবুল হক। একটি প্রথম সারির দৈনিকে শিল্প-নির্দেশক মাহবুবুল হক বাংলানিউজের শুরু থেকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। বাংলানিউজের বহুল প্রশংসিত লোগোটিও তার হাতে তৈরি। তাঁরই আঁকা প্রচ্ছদ এক দফায় গৃহীতই কেবল নয় প্রশংসিতও হলো। লাল রঙকে ভিত ধরেই তিনি আঁকলেন প্রচ্ছদটি।  

লেখা যোগাড়ে ফারুক আহমেদ পটু তা বাংলানিউজের ম্যাগাজিন উল্টে যে কেউ স্বীকার করে নেবেন একবাক্যে। তার সঙ্গে দারুণ দক্ষতায় কাজ করেছেন সাহিত্য সম্পাদক তানিম কবির, বিনোদন বিভাগের প্রধান জনি হক, লাইফ স্টাইল বিভাগের প্রধান শারমিনা ইসলাম, চিফ অব করেসপন্ডেন্টস সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান তপন চক্রবর্তী, ইচ্ছেঘুড়ি বিভাগের প্রধান আসিফ আজিজ, ইসলাম বিভাগের সম্পাদক মুফতি এনায়েতুল্লাহসহ প্রায় সকল সহকর্মী।

ফলে লেখা যোগাড় হয়ে গেলো। মানসম্মত সব লেখায় ভরে উঠলো বাংলানিউজের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ম্যাগাজিন।

এতে স্থান পেলো একটি নির্বাচিত উপন্যাস, পাঁচটি উপন্যাস, একটি অনুবাদ উপন্যাস। দুটি বড় গল্প, সাতটি গল্প ও একটি অনুবাদ গল্প। ২৮টি ছোট-বড় কবিতা।

স্মৃতিকথা, সাক্ষাৎকার স্থান পেয়েছে দুটি। এছাড়া ভ্রমণ, প্রকৃতি, বিনোদন, লাইফস্টাইল, ধর্ম, বিজ্ঞান ও গণমাধ্যম নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধ যাতে গুরুত্ব পেয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি।

রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন-পূরণের প্রকল্প পদ্মাসেতু ও জাতির কলঙ্কমোচনের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।

বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম নিয়ে রয়েছে পৃথক আয়োজন। চট্টগ্রামের চার শিল্পপতিকে নিয়ে লেখা হয়েছে- স্নায়ু যুদ্ধের যুগ শেষ এখন উষ্ণতার আমেজ, উপস্থাপিত হয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানী গড়তে টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথাও।

সবমিলিয়ে আধেয়র বিবেচনায় একটি পূর্ণাঙ্গ ম্যাগাজিনের বিষয় বৈচিত্রের সব রঙ-রস-স্বাদ-গন্ধ দিয়েই তৈরি হয়েছে ‘বাংলানিউজ’ ম্যাগাজিনটি। কারণ কবি-লেখকদের তালিকায় যে যুক্ত রয়েছে আল-মাহমুদ, সেলিনা হোসেন, হাসান আজিজুল হক, ড. অনুপম সেন, মোহাম্মদ রফিকদের নাম থেকে শুরু করে মঞ্জু সরকার, আন্দালিব রাশদী, ইমতিয়ার শামীম, কাজল শাহনেওয়াজ, জুয়েল মাজহার, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, জাহিদ হায়দার হয়ে রাশিদা সুলতানা, তুষার আবদুল্লাহ, পিয়াস মজিদ, জিয়া হাশান, হিজল জোবায়ের, ফারসিম মান্নানদের নাম। ছেলেবেলার স্মৃতি লিখেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তরুণ মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তরুণ উদ্যোক্তা নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও  সারোয়ার আলম। সাহিত্য অংশকে বাড়তি সম্মৃদ্ধি দিয়েছে সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের একটি অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার।

প্রচ্ছদের পাতা উল্টেই প্রথমেই জানা যাবে বাংলাদেশে অনলাইন সংবাদমাধ্যম আগমনের গল্প। সে গল্প শুনিয়েছেন এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন, যাকে বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার জনক বলেই সবাই চেনেন।

অনলাইন সাংবাদিকতা এগিয়ে নিতে করণীয় নির্দেশ করে একটি অ্যাকাডেমিক রচনাও রয়েছে এতে।

ভ্রমণ কাহিনীতে মঈনুস সুলতানের টানোনিক ক্রেস্ট ট্রেইল কিংবা শাকুর মজিদের কালাপানি দ্বীপের পাশাপাশি মধ্য প্রাচ্যের হারানো সভ্যতার বুকে হাঁটাহাটির অভিজ্ঞতা তুলে এনে লিখেছেন জাকারিয়া মন্ডল।

বিনোদন বিভাগে গুরুত্ব পেয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসবে অটোগ্রাফ শিকারের গল্প। রয়েছে নচিকেতার সাক্ষাৎকার, পূর্ণিমাকে নিয়ে ফটোফিচার।

লাইফ স্টাইলে প্রকাশিত হয়েছে ফ্যাশন জগতে বাঙালির গর্ব বিবি রাসেলের সাক্ষাৎকার ধর্মী লেখা বিশ্বদরবারে আমাদের বিবি।

ইসলাম বিভাগে শিক্ষা বিস্তারে ইসলামের ভূমিকা যে কোনও পাঠককে আকৃষ্ট করবে। বাংলার সাগর-সম্পর্ক শিরোনামের বিশেষ ফিচারও কাড়বে পাঠকের মন।

ক্রিকেট দেশকে একত্রিত করছে সে যুক্তি তুলে ধরে যেমন লিখেছেন  ভিশন ২০২১ সামনে রেখে ভৌগলিক রাজনীতি, যোগাযোগ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও লিখেছেন খন্দকার এ সালেক। দুটি রচনাই ইংরেজিতে।  

ম্যাগাজিনটি প্রকাশের শিল্প নির্দেশনাও দিয়েছেন শিল্পী মাহবুবুল হক। আর অলঙ্করণে ব্যবহৃত হয়েছে ধ্রুব এষ, দেওয়ান আতিকুর রহমান, বিপ্লব চক্রবর্তী, নাজমুল আলম মাসুম, শতাব্দী জাহিদ ও মানবেন্দ্র গোলদারের অসাধারণ সব ইলাস্ট্রেশনস।

গ্রাফিক্স ডিজাইনার মেহেদী হাসানের হাতে ইলাস্ট্রেশনগুলো প্রাণ পেলো মূল প্রকাশনায়। প্রিন্ট ও অনলাইন উভয় ভার্সনের জন্য পৃষ্ঠাসজ্জা হলো তারই হাতে।

অনলাইনে একই ডিজাইন বজায় রেখে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা সাজিয়ে ই-বুকের আদল দেওয়ার কাজটি দায়িত্বের সঙ্গে করলেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান সোহরাব হোসেন খান সায়েম। আর প্রিন্ট ও অনলাইনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি করলেন ওয়েব এডিটিং বিভাগের প্রধান অমিয় দত্ত ভৌমিক। প্রিন্টিং ও প্রোডাকশনের কাজটি তদারকি করেছেন প্রশাসন বিভাগের নির্বাহী মো. নাছির উদ্দিন।

মার্কেটিং অ্যান্ড ব্র্যান্ডিংয়ে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেছেন হেড অব মার্কেটিং সিরাজুল ইসলাম সুমন। তবে এই কাজে চট্টগ্রাম ব্যুরো এডিটর তপন চক্রবর্তী, চিফ অব করেসপন্ডেন্টস সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও কান্ট্রি এডিটর শিমুল সুলতানাও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলায় সহকর্মী করেসপন্ডেন্টদেরও ভূমিকা রয়েছে। তারা বিজ্ঞাপন যোগাড় করে কিংবা শুভেচ্ছা বাণি সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন যা প্রণিধানযোগ্য।

বাংলানিউজ যখন নতুন কিছু করে তখন তাতে আরও কিছু নতুনত্ব আনে। এখানেও নতুনত্বের অভাব থাকে নি। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হচ্ছে- ম্যাগাজিনে ভিডিওগ্রাফির ব্যবহার। টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন স্থান পেয়েছে বাংলানিউজের ই-ম্যাগাজিনে। এই প্রথম ম্যাগাজিনের পাঠক হয়ে উঠছে দর্শক, কারণ তার সামনেই ভেসে উঠছে বিজ্ঞাপনের ভিডিও চিত্র।

দেশের অন্যতম টেলিফোন অপারেটর বাংলালিংক তাদের ভিডিও বিজ্ঞাপন দিয়ে বাংলানিউজকে এই নতুন আয়োজনে সহায়তা করার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।

তবে এই ধন্যবাদ প্রার্থীদের তালিকাটি আরও দীর্ঘ। এই তালিকায় রয়েছে...

সকলের ভালোবাসায় ধন্য বাংলানিউজ। ৫৯০ পৃষ্ঠার এই ম্যাগাজিন সবার প্রত্যাশা পূরণ করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।      

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।