ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

স্বপ্নগুলি | রায়হান রাইনের সিরিজ কবিতা

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৫
স্বপ্নগুলি | রায়হান রাইনের সিরিজ কবিতা

১.
দূরে এক গাছতলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
ধোপা দেখছে, আগুন লেগেছে সেই বনে
যে বনের গভীরে ঢুকেছে তার গাধা;
আগুনের হল্লা উঠছে আকাশের দিকে
শোনা যাচ্ছে শত আর্তরব!
ধোঁয়ার মেঘের সঙ্গে গাধার চিৎকার
ভেসে যাচ্ছে দূর মেঘলোকে।
গাধাটিও স্বপ্ন দেখছে:
নির্জন ভোরের পথে লুপ্ত হয়ে গেছে ধোপা
কুয়াশার শাদা রঙে মিশে—
সূর্য যেই লুফে নিল সমস্ত কুয়াশা
সেই সঙ্গে ধোপাও লোপাট হয়ে গেছে।


ঘুম থেকে ত্রস্তে উঠে উদ্‌ভ্রান্ত রজক
ছুটে গেল গাধাটির কাছে—
কী যেন সে দেখে বাইরে আঁধারের দিকে,
সেদিকে তাকায় ধোপা—ঘন অন্ধকার
রাশি রাশি পাখি হয়ে ঢেউ ভেঙে ভেঙে
উড়ে যাচ্ছে ভোরবেলার দিকে।

২.
যেদিকে চাঁদের ছায়া তার উল্টোদিকে
ঢিবির উপর এসে দাঁড়াল শেয়াল,
পাশ ফিরে রাখালকে দেখল একবার;
তারপর নেমে পড়ল শাদা জোছনায়
যেন সে সাঁতার কেটে পার হলো নদী;
শেয়াল রাখালকে তার স্বপ্নের ভিতর
দেখাল একটি পথ রোদভরা মাঠে
ঘাস আর পাখি হয়ে আছে,
রাখাল বাঘের চোখ ফাঁকি দিয়ে
ঝোঁপের আড়াল দিয়ে সন্তর্পণে হেঁটে
গরু নিয়ে পৌঁছাল সেই ইচ্ছার প্রান্তরে;
যেখানে সবই হওয়া যায়—
যেই একটা পাতা ঝরে বাদাম গাছের
অমনি সে চিল হয়ে উড়ে উড়ে যায়
ডানার ঝাপটা দিয়ে ওড়ার স্পর্ধায়,
একটি পালক যেই খসে পড়ে নিচে
ছোট একটা জামগাছ হয়ে একা একা
স্থির হয়ে থাকে কিছুক্ষণ,
ডালপালা বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে
ঝরাল আবার যেই পাতা
অমনি সে জোছনার নদী হয়ে গেল,
যেতে যেতে তার মনে যত নদীতীর
আর যত ঘাট, সেইসব ঘাট থেকে
ঝাঁপিয়ে পড়ার স্মৃতি মনে পড়তেই
আবার রাখাল হলো ভীরু খরগোশ,
নদী থেকে উঠে যেতে যেতে
এক ঝোঁপে দাঁড়াল সে হাম্বারব শুনে,
তাই শুনে হলো এক নেকড়ে শক্তিমান,
তাড়া করল ঘাস খেতে থাকা গরুদের,
সন্ত্রস্ত গরুর পাল থেকে দলছুট
একটিকে ধরতে গিয়ে নেকড়ের মনে
টান পড়ল, যেন সে কারুর পাতা ফাঁদে
পা দিয়েছে—এমন অস্পষ্ট এক বোধ
টেনে তুলল তাকে, তখন মোরগ ডাকলে
বিছানায় উঠে বসল সন্ত্রস্ত রাখাল।

৩.
একটি কাঠের ঘোড়া শিশুটির স্বপ্নের ভিতর
একা একা হেঁটে গেল হাই-তোলা রাতের রাস্তায়—
অপলক চোখে দেখল, বাতাসে কাঁপছে অন্ধকার
যেন নভোলোক থেকে ঝুলে থাকা কালসিটে অ্যাপ্রোন,
পাশে যাত্রী ছাউনির মেঝেতে শুয়ে এক উন্মাদিনী
দেখছে, দিগন্তে উঁচু তারার মিনার—
কাঁথায় জড়ানো দেহ, জ্বলছে শুধু চোখ
আর চোখের ভেতর সেই আলোর প্রাসাদ।
শুধু এক চোর এসে দীর্ঘ আঁকশি দিয়ে
আকাশের সব তারা পেড়ে নিয়ে গেল।

একঝাঁক বাদুড় আঁধারটাকে দোলাতে দোলাতে
উড়ে যায়, রাতজাগা পাখিগুলো অকস্মাৎ ডেকে
সুনসান নীরবতা ভেঙে
টুকরা টুকরা করল আর একজন মদ্যপ
সারা পথ ঠোঁটে শিস বাজিয়ে বাজিয়ে
জোড়া দিয়ে গেল সেই ভাঙা নিঃশব্দকে।

কাঠের ঘোড়াটি দেখে রাতের মেয়েকে—
মা-রাত্রিকে চেষ্টা করছে ঘুম পাড়াবার,
কিন্তু যেই পুলিশকে দ্যাখে,
দৌড় দিয়ে ঢুকে পড়ে আঁধারের গায়ে
আর রাত একা একা আনমনে পাশ ফিরে শোয়।

যে কুকুর দূর থেকে নিজের ডাকের প্রতিধ্বনি
শুনে ডাকে আরো বেশি করে—
সে ঐ কাঠের ঘোড়াকে দেখে
ডাকতে থাকে অনর্গল আর তার মায়া-প্রতিধ্বনি
ঢুকে পড়ে ঘুমন্ত শহরবাসীর মাথার ভিতর
যেখানে তাদের স্বপ্নে পাঁচজন অভিযুক্ত খুনী
দুর্গম অরণ্যে গিয়ে পালিয়ে বেড়ায়।

দূরে এক বেতো ঘোড়া আস্তাবলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
চোখ বন্ধ করে রাতটাকে নিভিয়ে দেয়,
পুনরায় চোখ খুলে ফিরিয়ে আনে অন্ধকার আর
সেইসব, যা যা দেখে কাঠের ঘোড়াটি।

৪.
সেপাই বুলবুলি দেখছে, দূর অন্তরীক্ষে
পৌঁছে গেছে ডানা নেড়ে নেড়ে
ট্রপোস্ফিয়ার থেকে আরো দূরে থার্মোস্ফিয়ারে—
যেখানে পৌঁছাবে না চিল ও চাতক।

রাত তাকে পৌঁছে দিল আকাশগঙ্গায়।

আঁধারের নদী আর ঢেউয়ে ঢেউয়ে
অন্য কোনো চাঁদ আর তারাদের পাশ দিয়ে
ধীরে ধীরে পৌঁছে গেল সেই গূঢ় স্থানে
যেখানে দিনের শুরু এবং রাতের,
যেখানে ব্যথার শুরু এবং গানের

সেই স্থান থেকে পৃথিবীকে দেখা যায় খুব ছোট,
একটি আলোর কণা—এত ছোট যে,
চোখ ফস্কে মিশে যাবে অগুনতি তারার ভিড়ে,

অচেনা উদ্বেগ জ্বর হয়ে এলো গায়ে।

৫.
বাইরে কুয়াশা দেখে সে ভাবল, এমন পৌষের ভোরে অমীমাংসিত স্বপ্নের মতো চারদিক। শিগগির ঘরে ফিরে সে নগ্ন হলো, ধুয়ে নিল গা আর পরল কুয়াশা রঙের শাড়ি; পথে নেমে গেল আবার। কুয়াশায় অবলুপ্ত পথে যেতে যেতে হারিয়ে গেল ক্রমশ। আর হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেল নিষেধের সীমায়। যখন সূর্য উঠল, গলে গিয়ে মিশে যেতে থাকল দিশেহারা আলোয়।



বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।