ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ৪) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ৪) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

তৃতীয় খণ্ডের ৩য় কিস্তি
___________________________________


বাইরে থেকে অনেক বুটের ঝম-ঝম আওয়াজ আসছে। বিকট শব্দ তুলে খুলে গেল ইস্পাতের দরজা। তরুণ এক অফিসার, কালো উর্দিতে টান টান শরীর, ঝকঝকে চামড়ার পোশাকে আরো চকচকে, কঠোর, নির্জীব চেহারাটি স্রেফ মোমের মুখোশ, দরজাপথে দৃঢ় পা ফেলে ভিতরে ঢুকলেন। সঙ্গে আনা অপর বন্দিকে প্রকোষ্ঠে ঢোকাতে নিরাপত্তারক্ষীদের নির্দেশ দিলেন। ধাক্কাতে ধাক্কাতে ভেতরে ঢোকানো হলো কবি অ্যাম্পলফোর্থকে। আর তখনই বিকট শব্দ তুলে ফের বন্ধ হলো দরজা।



একটি ঘটনা আমার মনে পড়ছে, হ্যাঁ সম্ভবত একটিই ঘটনা। নিঃসন্দেহে সেটা ছিল অসাবধানতাবশত। আমরা কিপলিংয়ের কবিতার একটি নির্দিষ্ট সংস্করণ তৈরির কাজ করছিলাম। তারই একটি পংক্তির শেষে ‘গড’ শব্দটিকে রেখে দিয়েছিলাম। আসলে উপায় ছিল না!’—উইনস্টনের পানে মুখ তুলে তাকিয়ে অনেকটা ক্রোধের উচ্চারণ তার। ‘লাইনটি পাল্টানো অসম্ভবই ছিল। ছন্দের অপর শব্দটি ছিল “রড”। তুমি জানো গোটা ভাষায় এই “রড”-এর সঙ্গে মিল হয় মাত্র বারোটি শব্দের। কয়েক দিন ধরে এ নিয়ে মাথা খাটিয়ে আর একটি শব্দকেও মেলানোর মতো পাইনি। ’



অ্যাম্পলফোর্থ প্রথমেই কুঠুরীর দেয়াল ঘেঁষে কয়েকবার এপাশ থেকে ওপাশে অনিশ্চিত নড়াচড়া করল যেন মনে করেছে এই কক্ষে বাইরে যাওয়ার আরেকটি দরজা ঠিকই আছে, আর অতঃপর কুঠুরীর উপর থেকে নিচটা কয়েকবার দেখে নিল। তখনো উইনস্টনের উপস্থিতি তার নজরে আসে নি। তার পর্যুদস্ত চাহনি তখনও উইনস্টনের মাথারও এক মিটার উপর থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে। পায়ে জুতো নেই, বড় বড় নোংরা দুটি বুড়ো আঙুল মোজা ছিঁড়ে বাইরে বের হয়ে আছে। তারও বেশ কিছুদিন দাঁড়ি কামানো হয়নি। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে ভরে আছে মুখ-চোয়াল। সব মিলিয়ে চেহারাটি হিংস্র রাফিয়ানোদের মতো মনে হচ্ছে, তবে দুর্বল বপু আর ভয়ার্ত নড়াচড়ার সঙ্গে যা একেবারেই বেমানান।

জড়িমা ভেঙ্গে নিজেকে কিছুটা টেনে তুলল উইনস্টন। অ্যাম্পলফোর্থের সঙ্গে তার কথা বলা উচিত, জানা আছে টেলিস্ক্রিন ঝাঁঝিয়ে উঠবে, তারপরেও। এমনও তো হতে পারে সে-ই মূলত রেজর ব্লেডের বাহক।
‘অ্যাম্পলফোর্থ,— বলল সে।
টেলিস্ক্রিন কোনো রা করল না। অ্যাম্পলফোর্থ থমকাল, কিছুটা চমকালোও। আর ধীরে ধীরে নজর ফেলল উইনস্টনের ওপর।
‘অ্যাহ, স্মিথ!’ বলল সে। ‘তুমিও’
‘তুমি কেন এখানে?’
‘তোমাকে সত্যি কথাটি জানাতে’—বলতে বলতে উইনস্টনের উল্টোদিকে বেঞ্চিতে বসে পড়ল সে। ‘অপরাধ তো ওই একটাই, নাকি?’
‘তাহলে তুমি কি সে অপরাধ করেই ফেলেছো?’
‘মনে হয় করে ফেলেছি। ’
একটি হাত কপালে রেখে একপাশে চাপ দিতে লাগল, যেন কোনো কিছু মনে করার চেষ্টা করছে।
‘এভাবেই ঘটনাগুলো ঘটে’—ভাসাভাসা শুরু তার। ‘একটি ঘটনা আমার মনে পড়ছে, হ্যাঁ সম্ভবত একটিই ঘটনা। নিঃসন্দেহে সেটা ছিল অসাবধানতাবশত। আমরা কিপলিংয়ের কবিতার একটি নির্দিষ্ট সংস্করণ তৈরির কাজ করছিলাম। তারই একটি পংক্তির শেষে ‘গড’ শব্দটিকে রেখে দিয়েছিলাম। আসলে উপায় ছিল না!’—উইনস্টনের পানে মুখ তুলে তাকিয়ে অনেকটা ক্রোধের উচ্চারণ তার। ‘লাইনটি পাল্টানো অসম্ভবই ছিল। ছন্দের অপর শব্দটি ছিল “রড”। তুমি জানো গোটা ভাষায় এই “রড”-এর সঙ্গে মিল হয় মাত্র বারোটি শব্দের। কয়েক দিন ধরে এ নিয়ে মাথা খাটিয়ে আর একটি শব্দকেও মেলানোর মতো পাইনি। ’

ওর মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে গেল। একটা বিরক্তির ভাব মুখের ওপর দিয়ে বয়ে গেল ঠিকই, তবে এক দণ্ডের জন্য তাকে সন্তুষ্টও মনে হলো। নোংরা উশকোখুশকো চুলের মাঝেও এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক উষ্ণতা, পাণ্ডিত্যের আনন্দ ঝিলিক দিচ্ছিল।

‘তোমার কি কখনো মনে হয়েছে, বলো’—বলল সে, ‘ইংরেজি পদ্যের ইতিহাসে কি এই সত্যের মুখোমুখি কেউ হয়েছে কভু যে, এই ভাষায় অন্ত্যমিল শব্দের অভাব রয়েছে?’
নাহ, উইনস্টনের ক্ষেত্রে এমনটা কখনোই ঘটেনি। তবে এই এখন বিষয়টি তার কাছে খুব একটা গুরুত্বের কিংবা আগ্রহেরও মনে হচ্ছে না।
‘তুমি কি জানো দিনের কোন সময়টা এটা?’—প্রসঙ্গ পাল্টে প্রশ্ন তার।

ফের চমকাতে দেখা গেল অ্যাম্পলফোর্থকে। ‘এ নিয়ে ভাবিনি। ওরা আমাকে বন্দি করেছে দিন দুয়েক আগে, দিন তিনেকও হতে পারে। ’ দেয়ালের চারিদিকে ঘুরছে তার চোখ, যেন এখনো তার মাঝে আধা প্রত্যাশা জাগ্রত যে, এই দেয়ালের কোথাও মিলে যাবে একটি জানালা। ‘এইখানে রাত আর দিনে কোনো ফারাক নেই। কেউ সময় হিসাব করতে পারবে এমন কোনো পথ এখানে দেখছি না। ’

তৃতীয় খণ্ডের ৫ম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।