ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ভিয়েতনামে ভ্রমণ

বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর অগ্নিহুতি | মঈনুস সুলতান

ভ্রমণ / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৫
বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর অগ্নিহুতি | মঈনুস সুলতান

ঘাটখানি কয়েক শত বছরের পুরানো হলেও এখনো বেশ দড়ো আছে। আমরা সাবধানে শ্যাওলা ও মসের সবুজ আস্তরণ বাঁচিয়ে উপরে উঠি।

পদশব্দে ভাঙ্গা ঘাটের ফাঁক-ফোকরে বেড়ে ওঠা থোকা থোকা বেগুনি ঘাসফুল থেকে উড়ে যায় মিহি ডানার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফড়িং। আমরা দ্বিধাগ্রস্ত পায়ে আরো কয়েক ধাপ উপরে চলে আসি। এখানে ইট বা পাথর ক্ষয়ে গিয়ে বেশ ক’টি গর্ত। আমাদের আসতে দেখে গোটা কতক কাঁকড়া সুড় সুড় করে ফিরে যায় গর্তের নিরাপত্তায়। আমরা তাদের অতিক্রম করে চলে আসি সিঁড়ির সর্বোচ্চ ধাপে।

এখানে সিঁড়ির চুনসুরকির কাঠামো এখনো দড়ো আছে, ভেঙেচুরে যায়নি তেমন। দুদিকের দুটি তোরণে ক্যালিওগ্রাফ করে কিছু লেখা। তার উপর দিয়ে দৃষ্টি চলে যায় আরেক স্তর উচ্চতায়। ওখানে আশ্চর্য সুন্দর দেয়ালে স্তরে স্তরে জানালা বসানো স্তম্ভের মতো উপাসনার একটি স্ট্রাকচার। এদিকে পরিচ্ছন্ন ফতুয়া পরে একজন মানুষ চেয়ে আছেন নিচে বহমান পারফিউম রিভার নামক নদীজল, দূরের দিগন্ত ও নীল পাহাড়ের দিকে।


(পারফিউম রিভারে দেশী নৌকা)

আমরা ঘুরে নদীজলের দিকে তাকাই। প্রশস্ত পারফিউম রিভার নদীটি এখানে বিভক্ত হয়েছে দু’টি উপ-ধারায়। আমরা টিলার মতো উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছি বলে বহতা নদী-জলের রেখাটিকে ভিন্ন প্রেক্ষিত থেকে দেখার বিরল সুযোগ পাই। মনে হয় এক সনাতনী নারী তার জলের শরীর বিছিয়ে শুয়ে আছে সূর্যজ্বলা নীলাভ পাহাড়ের ছায়ায়। তার জংঘায় জলরাশি এসে ঘুরে ঘুরে চলে যাচ্ছে মসৃণ ঊরুদেশের দু’টি উপ-ধারায়। আমরা ঘাটে বসা মানুষটিকে খেয়াল করে দেখি। তিনি আনত চোখে তাকিয়ে আছেন—ঘাটের শেষ ধাপের দিকে। তার দৃষ্টিকে অনুসরণ করে দেখি কর্তা মশাইদের শান বাঁধা ঘাটে রাখা শখের পানসিটির মতো আমাদের নিয়ে আসা লাল, হলুদ ও সাদা রঙে নকশা কাটা তরীখানি ঢেউয়ে অল্প অল্প দুলছে। ড্রাগন-বোট বলে পরিচিত এ নাওয়ের গলুইয়ের প্রান্তে কাঠ কুঁদে ড্রাগনের আকৃতি আঁকা। আমরা নদীপথে তরী বেয়ে আসার সময় অনেক ধরনের বিচিত্র নৌকাকে পাশ দিয়ে ভেসে যেতে দেখেছি। বেশিরভাগ নৌকাই আকার আকৃতিতে সাদামাটা, দেখতে অনেকটা আমাদের দেশি নৌকার মতোই। অনেক দিন পর এ ধরনের নৌকা দেখতে পেলাম বলে এগুলোর ইমেজ চোখে যেন এক ধরনের সজল দৃশ্যপটের তুলি বুলিয়ে দেয়। আমরা কেন জানি খুঁটিয়ে ফতুয়া পরা মানুষটিকে পর্যবেক্ষণ করি। তিনি চপ্‌স্টিক বা কাঠি দিয়ে বাটি থেকে তুলে খোসা ছড়ানো চীনাবাদাম খেতে খেতে আবার দিগন্তের দিকে তাকান। তার চোখের দৃষ্টি মুনস্টোনের মতো তীব্র ধূসর ও ঘোলাটে। মনে মনে ভাবি—তাকে জিজ্ঞেস করে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জেনে নেব কি না? হল্যেন আমার ভাবনাটি পড়তে পেরে চোখের ইশারায় মানুষটির পাশে রাখা সাদা লাঠির দিকে ইশারা করে। কাজরি জানতে চায় “হোয়াট ইজ্ দিস্ ম্যান লুকিং অ্যাবাউট?” আমি তার ভাবনার শরীক হই, আন্দাজ করতে চেষ্টা করি—পাথরের মতো দৃষ্টিওয়ালা মানুষটি কী দেখছেন? সত্যি সত্যিই কি তিনি কিছু দেখতে পাচ্ছেন?



আমরা সুইনের কাছ থেকে জানতে পারি—বৌদ্ধ ভিক্ষু অগ্নিহুতি দানের আগে এ মন্দিরে ধ্যান ও উপাসনা করতেন। সেই থেকে মন্দিরটি আমাদের চাক্ষুষভাবে দেখার ইচ্ছা। আমরা হোয়ে শহরে ভেকেশনে আসছি শুনে সুইন আরেকটি ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে আমাদের চমকে দেয়। সে আমাদের বলে যে, এই মন্দিরে তার পিতা বছর ছয়েক হলো সন্ন্যাসী হিসেবে বাস করছেন। আজ আমরা কেবলমাত্র মন্দিরটি দেখতে আসিনি—সুইনের কাছ থেকে চিঠিও নিয়ে এসেছি, তার জনক সম্মানিত ভিক্ষু মি. কাই’য়ের সঙ্গে দেখা করতে।



আমরা খানিক ইতস্তত করে অবশেষে মন্দিরের বাইরের আঙ্গিনায় এসে উঠি। এখানে একটি মিনারের মতো বহুকোণবিশিষ্ট স্তম্ভ স্থাপত্যের বিচিত্র ব্যঞ্জনা নিয়ে আমাদের অবাক করে। মনে হয় ঊর্ধ্বমুখী এ উপাসনাগৃহটি কালের বাতিঘর হয়ে আলোকসন্ধানী পূজারিদের পথ দেখাচ্ছে। স্তম্ভটির পাশে বিপুলাকৃতির কচ্ছপের পিটে শিলালিপি, ঝুলন্ত ঘণ্টা ও বিশাল একটি ড্রাম। আমরা এখানেও কোনো মানুষজনের দেখা পাই না। খানিক ইতিউতি করে অবশেষে পাথরের সোপানের ওপর বসে পড়ি।


(নক্সা করা নৌকা-ড্রাগনবোট)

এ মন্দিরটি সম্পর্কে প্রথম আমাদের ধারণা হয় লাওসের ভিয়েনচান শহরে আমাদের প্রতিবেশি সুইনের সঙ্গে গল্প করে। সুইন ভিয়েতনামের মেয়ে হলেও অনেককাল কাটিয়েছে কেলিফোর্নিয়ায়। বর্তমানে সে লাওসে সি. ডাব্লিউ. এস নামক আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করে। বছর কয়েক আগে ভিয়েতনামের যুদ্ধের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পায়। তার বাড়িতে আমরা ছবিটি দেখি। এ ফিল্মে মার্কিন মদদপুষ্ট দক্ষিণ ভিয়েতনামের ডিক্টেটর ডিয়েম সরকারের আমলের বেশ কিছু ডকুমেনটেশন আছে। ছবিতে একজন বৃদ্ধ বৌদ্ধসন্ন্যাসী ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে সায়গন শহরে এসে জনসমক্ষে আগুনে পুড়ে আত্মাহুতি দেন। আমরা সুইনের কাছ থেকে জানতে পারি—বৌদ্ধ ভিক্ষু অগ্নিহুতি দানের আগে এ মন্দিরে ধ্যান ও উপাসনা করতেন। সেই থেকে মন্দিরটি আমাদের চাক্ষুষভাবে দেখার ইচ্ছা। আমরা হোয়ে শহরে ভেকেশনে আসছি শুনে সুইন আরেকটি ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে আমাদের চমকে দেয়। সে আমাদের বলে যে, এই মন্দিরে তার পিতা বছর ছয়েক হলো সন্ন্যাসী হিসেবে বাস করছেন। আজ আমরা কেবলমাত্র মন্দিরটি দেখতে আসিনি—সুইনের কাছ থেকে চিঠিও নিয়ে এসেছি, তার জনক সম্মানিত ভিক্ষু মি. কাই’য়ের সঙ্গে দেখা করতে।

আমাদের কাছে এসে ঘিরে দাঁড়ায় জনা পাঁচেক বালক ভিক্ষু। এ মুণ্ডিত-মস্তক শিক্ষানবিশ সন্ন্যাসীরা বয়সে নিতান্তই শিশু। তারা অর্ধবৃত্তাকারে আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে তীব্র কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকায়। তাদের চোখ-মুখের এক্সপ্রেশন দেখে মনে হয় তারা যেন পাড়াগাঁয়ের দেয়ালে হঠাৎ করে সাঁটা সিনেমার পোস্টার দেখছে। দু’টি বালক সন্ন্যাসী হেসে আঙ্গুল দিয়ে সামনের সোপানে বসা শ্বেতকায়া নারী, গুঁফো তামাটে বর্ণের পুরুষ ও একটি ছোট্ট মেয়ের দিকে নির্দেশ করে ফিসফিস করে কিছু বলে। আমি মি. কাই’য়ের  সন্ধান পাওয়ার জন্য তাদেরকে একটি দু’টি প্রশ্ন করতে চাই।

আমার ইংরেজি বচন তাদের হাসির উদ্রেক করে বটে কিন্তু বোধগম্য হয় না। লালচে ইটের বাতিঘরের মতো স্তম্ভটির প্রেক্ষাপটে গৈরিক বসনের ছেলেমানুষ সন্ন্যাসীদের ছবি তোলার প্রলোভন হয়। কাঁধের ঝোলা থেকে ক্যামেরাটি বের করতেই মুরগীর ছানা পোনারা যে রকম আকাশে চিলের ছায়া দেখতে পেলে সরে যায় আবডালে, তেমনি শিশুভিক্ষুরা ছুটে গিয়ে লুকায় ঘণ্টা, ঢোলক ও শিলালিপির আড়ালে। আমি ও হল্যেন পরস্পরের দিকে চোখাচোখি করে উঠে দাঁড়াই। বুঝতে পারি ভিক্ষু কাই’য়ের তালাশ পেতে এদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া দুরাশামাত্র।

মন্দিরের মূল ভবনের সামনের উঠোনে দাঁড়িয়ে আমরা কিছুক্ষণ একই লয়ে বেজে যাওয়া টিম টিম ধ্বনি শুনি। উঠোনটিতে ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু বিষণ্ণ পাপড়ি ফুল। কলা পাতার ঠোঙ্গাটির পাশে জমেছে অগণিত পিঁপড়া। একখণ্ড চতুষ্কোণ টোফু’র মিষ্টান্নকে গোটা বারো পিঁপড়া ঠেলে গড়িয়ে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা মূল মন্দিরের প্রবেশ দুয়ারের দিকে যেতে যেতে টিম টিম করে বাজা ধ্বনিরাজিকে প্রবলতর হয়ে উঠতে শুনি। আমাদের জড়তা কাটাতে একটু সময় লাগে—অবশেষে আমরা মন্দির প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করি। আমাদের চোখের সামনে এক সারি গৌতমের পিত্তল মূর্তি। বিগ্রহগুলোর পদতলে বসে গৈরিক পরা মাঝ বয়সী তিন সন্ন্যাসী। শ্রমণ তিনজন মোমের মৃদু আলোয় অধ্যয়ন করে চলেছেন তালপত্রের শতাব্দী প্রাচীন পুঁথি। নীরব পাঠের সঙ্গে সঙ্গে তারা বা’হাতে বাজিয়ে চলেছেন ডুগডুগির মতো রিদ্মিক শব্দময় বাদ্য। আমরা অল্প কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে টিম টিম ধ্বনি শুনে অবশেষে নীরবে বেরিয়ে আসি। প্রশ্ন করে শ্রমণত্রয়ের একাগ্রতা ভাঙাতে আমাদের ইচ্ছা হয় না।


(ঘাটে বাতিঘরের মতো উপাসনা স্টাকচার)

বেরিয়ে আসতেই মনে হয় কিভাবে যেন কাজরির সঙ্গে বালক সন্ন্যাসীদের সখ্য হয়ে গেছে। তারা দু’টি ভিন্ন ভাষায় পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা বলার চেষ্টা করে। শিশু সন্ন্যাসীরা বসে আছে মন্দিরের বারান্দা সংলগ্ন বাঁধানো চাতালে। কাজরির জননী হল্যেন তাদের পার্স থেকে বের করে ক’টি ক্যান্ডি দেয়। এ মিঠাই বিতরণে ক্রস-কালচারেল কমিউনিকেশন সহজ হয়ে ওঠে। বালক সন্ন্যাসীরা তাদের মন্দিরের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে কিছু বলে। বারান্দায় সংলগ্ন স্বর্ণালি বুদ্ধ মূর্তির প্রেক্ষাপটে আমি তাদের স্ন্যাপশট নিই। ছবি উঠে যাওয়ার পর তারা কী কারণে জানি হৈ-হৈ করে ওঠে। কাজরি ও হল্যেন একটু পর লাওসের মন্দির ও সন্ন্যাসীদের ছবিতে ভরপুর একটি অ্যালবাম তাদের দেখায়। ছবির বিষয়টি মনে হয় শিশু সন্ন্যাসীরা ধরতে পেরেছে। একটি বালক উঠে গিয়ে আমাদের জন্য কলাপাতায় করে নিয়ে আসে টোফুর মেঠাই।



তরুণ সন্ন্যাসী আমাদের অপেক্ষা করতে বলে বাঁশবনের ভেতর দিয়ে খাম হাতে কোথায় যেন চলে যায়। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অন্য সন্ন্যাসীদের কাজ দেখি। সমস্ত আয়োজন দেখে মনে হয় শিশু গৌতম টলোমলো পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন, আর তাঁর পদছাপে ফুটে উঠছে গোলাপি পদ্মরাজি। আমাদের বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নদীতীর থেকে বয়ে আসা এলোমেলো হাওয়ায় বেতসের বনে ঝিরিঝিরি শব্দ ওঠে। আমরা অবাক হয়ে দেখি ক্ষুদে সন্ন্যাসীরা বাঁশবনের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে আবার আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়েছে।



শিশু সন্ন্যাসীরা আমাদের সঙ্গ দিয়ে নিয়ে আসে মন্দিরের পেছন দিকে সরু বাঁশবনে ছাওয়া আরেকটি সুপরিসর চত্বরে। এখানে আমাদের ছেড়ে দিয়ে তারা কী কারণে জানি ঘন বাঁশবনের আবডালে হাওয়া হয়ে যায়। আমরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ইতস্তত করে অবশেষে এক পা দু’ পা করে সামনে বাড়ি। প্রাঙ্গণের এ দিকে বেশ কিছু টোপিয়ারী করা বৃক্ষ-স্থাপত্যের আড়ালে জনা কয়েক তরুণ বয়সী ভিক্ষুকে কর্মরত দেখতে পাই। তাদের কাছ থেকে হয়ত মিঃ কাই’য়ের তালাশ পাওয়া যেতে পারে ভেবে আমরা ঐ দিকে যাই। ভিক্ষুরা সিমেন্টের চাতালে ছোট্ট ছোট্ট পদছাপের চারপাশে বেতের ফ্রেমে গোলাপি বস্ত্র খণ্ডে তৈরি পদ্ম ফুলের পাপড়ি বসাচ্ছেন। পদছাপগুলোর শেষ প্রান্তে হেঁটে যাচ্ছে ছোট্ট এক শিশু মূর্তি। আমরা কাছাকাছি হতেই ভিক্ষুরা কাজ থামিয়ে সকলে আমাদের দিকে তাকান। হল্যেন তরুণ এক সন্ন্যাসীর হাতে সুইনের মিঃ কাইকে লেখা চিঠির খামটি তুলে দেয়। তরুণ সন্ন্যাসী আমাদের অপেক্ষা করতে বলে বাঁশবনের ভেতর দিয়ে খাম হাতে কোথায় যেন চলে যায়। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অন্য সন্ন্যাসীদের কাজ দেখি। সমস্ত আয়োজন দেখে মনে হয় শিশু গৌতম টলোমলো পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন, আর তাঁর পদছাপে ফুটে উঠছে গোলাপি পদ্মরাজি। আমাদের বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নদীতীর থেকে বয়ে আসা এলোমেলো হাওয়ায় বেতসের বনে ঝিরিঝিরি শব্দ ওঠে। আমরা অবাক হয়ে দেখি ক্ষুদে সন্ন্যাসীরা বাঁশবনের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে আবার আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়েছে। একটি বালক ভিক্ষুর হাতে পৎ পৎ করে ওড়ে কুমীরের ছাপচিত্র আঁকা এক খণ্ড কাপড়। ছেলে মানুষ ভিক্ষুর কুমীর আঁকা কাপড়টি কাজরিকে দিয়ে সে তাকে তাদের সাথে যেতে ইশারায় ডাকে। কাজরি কাপড়খানা হাতে নিয়ে ঈষৎ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আমাদের দিকে তাকায়। হল্যেন সম্মতি দিয়ে বলে, “ডোন্ট গো ফার ফার এ্যওয়ে। ” আমি তার সাথে যোগ দিয়ে বলি, “ভিক্ষুদের সাথে এ প্রাঙ্গণে খেলো, তাহলে আমরা তোমাকে দেখতে পাব। ” কাজরি কুমীর আঁকা কাপড়টি পতাকার মতো উড়িয়ে ছুটে যায়, তার পেছন পেছন দৌড়ায় পাঁচটি শিশু শ্রমণ।

দ্বিতীয় কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন



বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।