তিনি বললেন যে তিনি একজন অন্ধকার প্রিয় মানুষ। তার অন্ধকার প্রীতি অনেকটা আসক্তির পর্যায়ে চলে গেছে।
- বুঝলেন স্যালি, আমি আসলে একজন অন্ধকার প্রিয় মানুষ।
আমি মাথা নাড়লাম। অন্ধকারে তিনি সেটা দেখতে পাইলেন বলে মনে হয় না। অথবা যেহেতু আমি উনার চেয়ারের পাশে মাটিতে বসছি, উনি হয়ত ধরেই নিলেন উনার যেকোন কথাতেই আমি মাথা নাড়ব। আমি বললাম
- অন্ধকার জিনিসটা খারাপ না, একটা রেস্টের ব্যাপার আছে।
- আমি সেইটা বলি নাই, আমি বলতেছি এডিকশনের কথা। একধরনের তৃষ্ণা বোধ।

undefined
উনি কথা থামায়ে দিলেন। উনার বারান্দাটা ছোট্ট আর চমৎকার। এক কোণায় টবে কী জানি ফুল লাগাইছেন, রাত হলেই মিষ্টি গন্ধ আসে। বারান্দাটাকে গাণিতিক বিচারে পুরোপুরি অন্ধকার বলা যায় না। উনার ফ্ল্যাটের সামনেই রাস্তা। রাস্তার ওইপারে আরো ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটের পাঁচতলায় কে জানি টিভি দেখতেছে। সেই টিভির থেকে নীল আর সাদা মিশানো একটা আলো উনার বারান্দা পর্যন্ত আসে।

undefined
উনি কথা থামায়ে দিলেন। উনার বারান্দাটা ছোট্ট আর চমৎকার। এক কোণায় টবে কী জানি ফুল লাগাইছেন, রাত হলেই মিষ্টি গন্ধ আসে। বারান্দাটাকে গাণিতিক বিচারে পুরোপুরি অন্ধকার বলা যায় না। উনার ফ্ল্যাটের সামনেই রাস্তা। রাস্তার ওইপারে আরো ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটের পাঁচতলায় কে জানি টিভি দেখতেছে। সেই টিভির থেকে নীল আর সাদা মিশানো একটা আলো উনার বারান্দা পর্যন্ত আসে। সেটা এমন অপর্যাপ্ত যে, সেটাকে ঠিক আলো বলা যায় না। কিন্তু তারপরেও উনার বারান্দার টবে লাগানো সাদা ফুলগুলা প্রায় স্পষ্ট বুঝা যায়। উনার হাতের সোনালি ঘড়িটা ঝিলিক দেয়। দূর থেকে কেউ তাকালে এইটাও বুঝবে যে এই বারান্দায় চেয়ারে বসা আর মাটিতে বসা দুটা লোক আছে। আমি পায়ের আঙ্গুল দিয়ে বারান্দার ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা গ্রিল ঘষতে ঘষতে বললাম
- এডিকশনের কথা যে বলতেছেন, আপনে কি অন্ধকার খায়া দেখসেন?
- দেখছি তো।
- কেমন খাইতে?
- আপনে নিজে না খায়া থাকলে বুঝানো যাইব না।
- অন্ধকার কেমনে খায় একটু শিখায়ে দ্যান তো।
- হাতে নিয়ে চাইটা খায়ে ফ্যালেন।
আমি বারান্দা থেইকা ডান হাতের তালুতে একটু করে অন্ধকার নিয়ে খায়া দেখলাম। অন্ধকারের স্বাদ মিষ্টি মিষ্টি , অনেকটা চকলেটের মতো। কিন্তু আবার ঠিক মিষ্টিও না। পানশা পানশা একটা ব্যাপার আছে। আমি দুইহাত ভর্তি করে আরো একটু নিলাম। শুনলাম উনি হাসতেছেন। বললাম
- হাসতেছেন যে...
- আপনে যেমনে খাইতেছেন... বেশি খায়েন না। ঝামেলায় পড়বেন।
- কী ঝামেলা?
উনি আমার কথার উত্তর না দিয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তারপর বললেন
- এডিকশন হয়ে যাবে। আমার মতো অবস্থা হইব আরকি।
- আপনার অবস্থা কি খারাপ?
- বেশ খারাপ। আজকাল মনে করেন যে আলোতে দমবন্ধ লাগে। সাফোকেশন হয়।
- ডাক্তার দেখান না ক্যান?
- আরে ধুউর। এইখানে ডাক্তারে কী করব... আপনের কাছে আগুন আসে?
আমি উনারে লাইটার দিলাম। উনি বিড়ি ধরায়ে একটা গভীর টান দিলেন। আমি বললাম
- এইখানে এত সুন্দর ফুলের গন্ধ, এরমধ্যে আপনে মিয়া সিগ্রেট ধরাইলেন।
উনি বিরক্ত হয়ে বললেন
- ফালতু কথা কন ক্যান। ফুলের গন্ধ আর তামুকের গন্ধ আলাদা। আপনের যেইটা ভালো লাগে সেইটা ন্যান, চাইলে দুইটাই নিতে পারেন।
আমি আলাদা আলাদা করে গন্ধ নেয়ার কোনো উপায় দেখলাম না। এরকম করাটা অসম্ভব বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু আমি চুপ থাকলাম। অন্ধকারে বেশি কথা বলতে ভালো লাগে না।

undefined
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫