ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ১২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ১২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

তৃতীয় খণ্ডের ১১ম কিস্তি
___________________________________


একটি কয়েদখানায় তাকে রাখা হয়েছিল সেখানে আলো ছিল, আবার অন্ধকারাচ্ছন্নও হয়ে থাকতে পারে, কারণ সেখানে একজোড়া চোখ ছাড়া আর কিছুই সে দেখতে পেত না। হাতের কাছে কিছু একটা যন্ত্র অবিরাম ধীর লয়ে টিক টিক শব্দ করে চলত। চোখ দুটো ক্রমেই বড় আর ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত। হঠাৎই বিছানা ছেড়ে ভেসে উঠত তার গোটা শরীর, আস্তে আস্তে চোখ দুটির ভেতরে ঢুকে পড়ত, আর মনে হতো ওগুলো যেন তাকে গিলে খাচ্ছে।

কর্কশ আলোর নিচে ডায়াল ঘেরা একটি চেয়ারে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। সাদা কোট পরা একজন সারাক্ষণ সেইসব ডায়াল থেকে রিডিং নিতেন। বাইরে ভারী বুটের টানা শব্দ। ক্যাচ-ক্যাচ শব্দ তুলে দরজা খুলে গেল। মোমমুখো অফিসার ভেতরে ঢুকলেন, পেছনে পেছনে ষণ্ডামার্কা দুই রক্ষী।
‘রুম ১০১’—বললেন অফিসারটি।
সাদা কোটধারী কিন্তু ঘুরলেন না, উইনস্টনের দিকে ফিরেও তাকালেন না, তখনও তার চোখ ডায়াল গুলোতেই স্থির।



হঠাৎই—উইনস্টন মনে করতে পারে না ওষুধের প্রভাবে, ঘুমের ঘোরে, নাকি সে স্বাভাবিক ঘুমের মাঝে, নাকি পুরোপুরি সজাগ অবস্থাতেই—তার কানে বিড়বিড় করে একটি কণ্ঠ ধ্বনিত হলো: ‘ভয় নেই উইনস্টন, তুমি আমার জিম্মায় আছো। সাতটি বছর আমি তোমার ওপর নজর রেখেছি। এখন ক্রান্তিকাল এসে গেছে। আমিই তোমাকে রক্ষা করব, আমিই তোমাকে সঠিক পথে নিয়ে যাব। ’



একটি বিশাল বারান্দাপথ ধরে তাকে গড়িয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, এক কিলোমিটার প্রশস্ত সেই পথ জ্বলজ্বলে সোনালি আলোয় ঝলমল, চারিদিক থেকে হাসি-ঠাট্টার গর্জন ভেসে আসছে। আর ভেসে আসছে উচ্চস্বরের সব স্বীকারোক্তি। সব কিছুই স্বীকার করে নিচ্ছিল সে। এতদিনে শত নির্যাতনের পরও যা কিছু নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পেরেছিল তাও এবার গড়গড় করে বলে দিল। নিজের জীবনের গোটা ইতিহাস সে তাদের সামনেই আবার তুলে ধরছিল যা তারা আগে থেকেই জানে। তার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীরা, প্রশ্নকর্তারা, সাদা কোটধারীরা, ও’ব্রায়েন, জুলিয়া, মি. চ্যারিংটন সবাই একই করিডোরে অট্টহাস্যে চিৎকার করে করে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছু কিছু বিষয় কখনো কখনো ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখা হতো, কিন্তু পরে তা কী করে যেন ভুলে এড়িয়ে চলে যেত, ফলে আর কখনোই ঘটত না। এক পর্যায়ে সবকিছুই যেন ঠিকঠাক হয়ে যায়, আর কষ্ট-বেদনা নেই, তার তখন শুধুই খালি পড়ে পড়ে থাকা, জেনে যাওয়া, ক্ষমা করে দেওয়া এক জীবন।

শক্ত তক্তার বিছানায় একটু নড়ে উঠল সে, অনেকটা আধা নিশ্চয়তায় মনে হলো, ও’ব্রায়েনের কণ্ঠই শুনতে পেয়েছে। পুরো জিজ্ঞাসাবাদে সে ও’ব্রায়েনকে আর একবারও দেখেনি, তবে তার মন বলত ও’ব্রায়েন ঠিক তার কনুইয়ের কাছে দাঁড়িয়ে, তবে দেখা যাচ্ছে না। ও’ব্রায়েনের নির্দেশেই সবকিছু হচ্ছে। এ যেন তিনিই, যিনি উইনস্টনের জন্য রক্ষীদের নিয়োজিত করছেন, তিনিই ওদের হাতে তার মৃত্যু ঠেকিয়েছেন। এ যেন তিনিই যিনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন উইনস্টন কখন ব্যথায় কাতরাবে, কখন শ্বাস নেবে, কখন তাকে খাবার দেওয়া হবে, কখন ঘুমাবে, কখন তার বাহুতে ওষুধ ঢোকানো হবে। এ যেন তিনিই যিনি প্রশ্নগুলো করছেন আর উত্তর কী হবে তাও জানিয়ে দিচ্ছেন। তিনিই যন্ত্রণাদানকারী, তিনিই রক্ষাকারী, তিনিই অনুসন্ধানদাতা, আবার তিনিই বন্ধু। হঠাৎই—উইনস্টন মনে করতে পারে না ওষুধের প্রভাবে, ঘুমের ঘোরে, নাকি সে স্বাভাবিক ঘুমের মাঝে, নাকি পুরোপুরি সজাগ অবস্থাতেই—তার কানে বিড়বিড় করে একটি কণ্ঠ ধ্বনিত হলো: ‘ভয় নেই উইনস্টন, তুমি আমার জিম্মায় আছো। সাতটি বছর আমি তোমার ওপর নজর রেখেছি। এখন ক্রান্তিকাল এসে গেছে। আমিই তোমাকে রক্ষা করব, আমিই তোমাকে সঠিক পথে নিয়ে যাব। ’

সে নিশ্চিত না, কণ্ঠটি ও’ব্রায়েনেরই ছিল কিনা। কিন্তু এটি ছিল সেই একই কণ্ঠ যা তাকে সাত বছর আগে স্বপ্নের মাঝে বলেছিল, ‘আমাদের দেখা হবে কোনো একখানে, যেখানে কোনো অন্ধকার থাকবে না। ’

তৃতীয় খণ্ডের ১৩ম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।