ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নীলকণ্ঠ পাখি | ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা | অনুবাদ: কল্যাণী রমা

অনুবাদ গল্প ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
নীলকণ্ঠ পাখি | ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা | অনুবাদ: কল্যাণী রমা

১৯৬৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা। ‘স্নো কান্ট্রি’, ‘থাউজ্যান্ড ক্রেনস’, ‘দ্য সাউন্ড অফ দ্য মাউন্টেন’-এর মতো অসাধারণ সব উপন্যাসের জন্য বিখ্যাত হলেও কাওয়াবাতা নিজে বলতেন তাঁর শিল্পকে সত্যিকারভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে প্রায় হাতের পাতায় এঁটে যাওয়া কিছু ছোট গল্পে।



১৯২৩ থেকে শুরু করে ১৯৭২-এর ১৬ এপ্রিল আত্মহত্যা করবার কিছু আগে পর্যন্ত তিনি লিখে গেছেন এমন অনেক গল্প। ‘পাম অফ দ্য হ্যান্ড স্টোরিস’ বইয়ের এই গল্পগুলো সম্বন্ধে কাওয়াবাতা বলেছেন, “অনেক লেখক কবিতা দিয়ে তাঁদের লেখক জীবন শুরু করেন। আমি নিজে কবিতার বদলে লিখে গেছি ছোটগল্প। আমার তরুণ জীবনের কবিসত্তা বেঁচে আছে এই গল্পগুলোর মধ্যেই। ”

‘হাইকু’ যেমন বড় কবিতার সমস্ত সৌন্দর্য মাত্র তিন পঙ্‌ক্তির ভিতর ফুটিয়ে তোলে, ঠিক একইভাবে কাওয়াবাতার ছোট গল্পগুলোও যেন হীরার কুচির মতো। নর-নারীর সম্পর্কের জটিলতা, প্রেম, এবং মানুষের জীবনের বিশাল পরিসর—সব, সব ফুটে উঠেছে এখানে।

ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার এইসব গল্প স্বপ্নের মতো, কুয়াশার মতো। সময়ের মতো, মৃত্যুর মতো। ...একাকীত্ব, ভালোবাসা আর অনুভূতির সূক্ষ্ণতায় কবিতারই মতো।



সেই সূর্য উঠবার পর থেকে নীলকণ্ঠ পাখিটা চেঁচামেচি করে চলেছে।
বৃষ্টি আটকানোর শাটারগুলো খুলতেই তাদের চোখের সামনে পাখিটা পাইন গাছের একটা নিচু ডাল থেকে উড়ে গেল। কিন্তু মনে হচ্ছে পাখিটা আবার যেন ফিরে এসেছে। সকালের জলখাবারের সময় ডানার ছটফটানির শব্দ শোনা গিয়েছিল।
“এই পাখিটা এক মহা অত্যাচার,” ছোট ভাইটা বলে উঠল। নিজ পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো শিখছে ও।
“ঠিক আছে। সব ঠিক আছে। ” ঠাকুমা ওকে থামালেন। “ও ওর বাচ্চাটাকে খুঁজছে। মনে হচ্ছে কাল বাচ্চাটা বাসা থেকে পড়ে গেছে। অনেক সন্ধ্যা পর্যন্ত মা-টা চারপাশে উড়ছিল। ও কি জানে না বাচ্চাটা কোথায়? কিন্তু কী ভালো মা-টা। আজ সকাল হতেই আবার খুঁজতে এসেছে। ”
“ঠাকুমা ঠিক ঠিক জানে,” ইওশিকো বলল।

তার ঠাকুমার চোখ খারাপ ছিল। বছর দশ আগে নেফ্রাইটিসের আক্রমণ ছাড়া সে জীবনে কখনো অসুস্থ হয় নি। কিন্ত তার চোখের ছানির জন্য, সেই ছেলেবেলা থেকেই সে তার বাম চোখ দিয়ে খুব অল্প দেখতে পেত। ভাতের বাটি আর চপস্টিক তার হাতে দিয়ে দিতে হতো। যদিও হাতড়ে হাতড়ে সে বাড়ির ভিতরটাতে চলাফেরা করতে পারত, কিন্তু একা একা সে বাগানে যেতে পারত না।

কখনো কখনো কাচের স্লাইডিং দরজাটার সামনে বসে বা দাঁড়িয়ে, সে নিজের হাতটা মেলে ধরত। কাচের ফাঁক দিয়ে যে সূর্যের আলো এসে পড়ত তার বিপরীতে আঙ্গুলগুলোকে পাখার মতো মেলে ধরে সে তাকিয়ে থাকত। এখন বিভিন্ন কোণে ছড়িয়ে পড়া সেই দৃষ্টির মাঝে সে তার জীবনীশক্তির যতটুকু বাকি ছিল তার সবটুকু জড়ো করবার চেষ্টা করছিল।




আয়নার সামনে বসে ইওশিকো তার নখের নিচের সাদা তারাগুলোর দিকে তাকাল। কথায় বলে যখন নখের নিচে তারা দেখা যায়, তখন তুমি কিছু পাবে। সেটারই চিহ্ন এটা। কিন্তু ইওশিকোর মনে হচ্ছে খবরের কাগজে ও পড়েছে যে তা ভিটামিন ‘সি’র অভাব বা তেমন একটা কিছু। মুখে মেকআপ দেওয়ার কাজটা ভালোই হলো। তার ভুরু আর ঠোঁট সব অপরূপ দেখাচ্ছে। কিমৌনৌ-ও ঠিকঠাক পরা হলো



এই সময়গুলোতে ইওশিকো তার ঠাকুমাকে ভয় পেত। যদিও ঠাকুমাকে পেছন থেকে সে ডাকতে চাইত, তা না করে সে চুপি চুপি পালিয়ে যেত।

এই প্রায় অন্ধ ঠাকুমা শুধুমাত্র নীলকণ্ঠ পাখির গলার স্বর শুনে এমনভাবে কথা বলে উঠল যেন সব দেখেছে। ইওশিকো ভীষণ অবাক হয়ে গেল।

সকালের জল-খাবারের জিনিসপত্র সরাতে গিয়ে ইওশিকো রান্নাঘরে গেল। প্রতিবেশির বাড়ির ছাদ থেকে নীলকণ্ঠ পাখিটি গান গাইছিল।

পেছনের বাগানে একটা চেস্টনাট, দু’ তিনটা পার্সিমান গাছ ছিল। সে যখন গাছগুলোর দিকে তাকাল, দেখল আস্তে আস্তে বৃষ্টি পড়ছে। এ সেই ধরনের বৃষ্টি যাকে কিনা ঘন পাতার ওপর ঝরে পড়তে না দেখলে বোঝাই যায় না।

নীলকণ্ঠ পাখিটা চেস্টনাট গাছটায় সরে এসে বসল, তারপর নিচু হয়ে উড়ে এসে মাটিতে চোখ বুলিয়ে আবার ডালে ফিরে এলো। পুরোটা সময় গান গাইছিল পাখিটা।

মা পাখিটা উড়ে চলে যেতে পারছিল না। ওর বাচ্চাটা আশেপাশেই কোথাও আছে বলে কি?

এই নিয়ে চিন্তা করতে করতে ইওশিকো নিজের ঘরে গেল। ভোর হওয়ার আগে ওর নিজের তৈরি হতে হবে।

বিকালবেলা, ওর বাবা, মা আসছে। সাথে ইওশিকোর বাগদত্ত’র মা।

আয়নার সামনে বসে ইওশিকো তার নখের নিচের সাদা তারাগুলোর দিকে তাকাল। কথায় বলে যখন নখের নিচে তারা দেখা যায়, তখন তুমি কিছু পাবে। সেটারই চিহ্ন এটা। কিন্তু ইওশিকোর মনে হচ্ছে খবরের কাগজে ও পড়েছে যে তা ভিটামিন ‘সি’র অভাব বা তেমন একটা কিছু। মুখে মেকআপ দেওয়ার কাজটা ভালোই হলো। তার ভুরু আর ঠোঁট সব অপরূপ দেখাচ্ছে। কিমৌনৌ-ও ঠিকঠাক পরা হলো।

ও ভেবেছিল মা’র জন্য অপেক্ষা করবে। জামা-কাপড়, সাজ-পোশাক পরায় সাহায্য নেবে। কিন্তু পরে ভেবে মনে হলো নিজে নিজে তৈরি হওয়াই বেশি ভালো।
ওদের বাবা দূরে থাকতেন। ইনি ওদের দ্বিতীয় মা।

যখন তাদের বাবা প্রথম মাকে তালাক দিয়েছিল, ইওশিকোর বয়স ছিল চার আর তার ছোট ভাইয়ের বয়স দুই। তালাকের কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল যে ওদের মা চটকদার কাপড় পরে ঘোরাফেরা করত, আর খুব পয়সা খরচ করত, কিন্তু অস্পষ্টভাবে হলেও ইওশিকোর মনে হলো আসল কারণটা আরো যেন বেশি কিছু, আরো অনেক গভীর।

ওর ভাই, ছেলেবেলায়, ওদের মা’র একটা ছবি খুঁজে পেয়েছিল। বাবাকে ছবিটা দেখাতেই বাবা কিছু বললেন না। কিন্তু অসম্ভব রাগী মুখ করে কুটিকুটি করে ছবিটা ছিঁড়ে ফেললেন।

যখন ইওশিকোর বয়স তের বছর, তখন বাড়িতে তার নতুন মা এসেছিল। পরে, ইওশিকোর মনে হয়েছিল যে তার বাবা তার জন্য দশ বছর একাকীত্ব সহ্য করে দিন কাটিয়েছিলেন। দ্বিতীয় মা ভালো মানুষ ছিলেন। বাড়িতে শান্তি বজায় থাকল।

যখন ছোট ভাই উপরের ক্লাশে উঠল, সে বাড়ি থেকে দূরে হোস্টেলে থাকতে শুরু করল। সৎ মা’র প্রতি তার ব্যবহার চোখে পড়বার মতো বদলে গেল।
“দিদি, মা’র সাথে আমার দেখা হয়েছে। মা বিয়ে করেছে, আজাবুতে থাকে। আসলেই খুব সুন্দর দেখতে রে মা। আমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিল। ”

হঠাৎ এ কথা শুনে ইওশিকো কোনো কথা বলতে পারল না। ওর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, কাঁপতে শুরু করল ও।

পাশের ঘর থেকে সৎমা এসে বসলেন।

“এ তো ভালো কথা, বড় ভালো কথা। নিজের মা’র সাথে দেখা হওয়াটা তো খারাপ না। এটাই স্বভাবিক। আমি জানতাম একদিন এই দিনটা আসবে। আমি তা নিয়ে বিশেষ কিছু ভাবিনি। ”

কিন্তু সৎমার শরীর থেকে সব শক্তি যেন চলে গেল। ইওশিকোর কাছে তার সৎমাকে বড় দুর্বল আর ছোটখাট বলে মনে হলো।

ওর ভাই তড়িঘড়ি করে উঠে চলে গেল। ইওশিকোর মনে হলো ওকে দু’ঘা বসায়।

“ইওশিকো, ওকে কিছু বলো না। ওর সাথে এ নিয়ে কথা বললে ছেলেটা খারাপ পথেই যাবে। ” ওর সৎমা নিচু স্বরে বললেন।

ইওশিকোর চোখে জল এলো।

বাবা হোস্টেল থেকে ওর ভাইকে ডেকে বাড়িতে ফেরত নিয়ে এলেন। ইওশিকো ভেবেছিল যে হয়ত ঘটনা এখানেই থেমে যাবে, কিন্তু না তা হলো না। ওর বাবা সৎমাকে নিয়ে অন্য কোথাও থাকতে শুরু করলেন।

এতে ইওশিকো ভয় পেয়ে গেল। যেন সে পুরুষালী রোষ আর ক্ষোভের নিচে পিষ্ট হয়ে গেল। ওদের বাবা কি ওদেরও অপছন্দ করত প্রথম মার সাথে তাদের যোগাযোগ আছে বলে? ইওশিকোর মনে হতে থাকল যে তার ভাই যে কিনা ভীষণ হঠাৎ করেই নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, সেও বাবার ভয়াবহ পুরুষালী একগুঁয়েমিটাই পেয়েছে।

তবুও ইওশিকোর মনে হতে থাকল যে সে যেন এখন তালাক আর আবার বিয়ে করবার মাঝে বাবার দশ বছরের দুঃখ আর কষ্টটুকু বুঝতে পারছে।

আর তাই, যখন তার বাবা ইওশিকোর কাছ থেকে দূরে চলে গেল আর ফিরে এলো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, খুব অবাক হলো ইওশিকো।

“আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। ছেলের মাকে বলেছি যে এই তোমার জীবনের নানা ঘটনা। তাই বাড়ির বউ হিসাবে না দেখে ওদের উচিৎ হবে তোমার ছেলেবেলার হাসি-খুশি দিনগুলোকে ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা করা। ”

এইসব কথা ওর বাবা ইওশিকোকে বলতেই, ইওশিকো কাঁদতে শুরু করল।

যদি ইওশিকোর বিয়ে হয়ে যায়, ওর ভাই আর ঠাকুমার যত্ন করবার জন্য কোনো মেয়েলী হাত থাকবে না। সেবা শুশ্রূষা হবে না। ঠিক হলো দু’টো সংসার এক হয়ে যাবে। সে কথায় ইওশিকো মন ঠিক করে ফেলল। ইওশিকো বিয়ে শাদীকে ভয় পেত। কিন্তু যখন সত্যিকারের কথাবার্তা শুরু হলো, শেষমেষ তা অত ভয়ংকর মনে হলো না।

যখন প্রস্তুতি শেষ হলো, ইওশিকো ওর ঠাকুমার ঘরে গেল।

“ঠাকুমা, এই কিমৌনৌতে কি লাল রঙটুকু দেখতে পাচ্ছো?”
“আমি খুব হালকাভাবে ওখানে একটু লাল দেখতে পাচ্ছি। কোথায় দেখি?” ইওশিকোকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে, ঠাকুমা ভালোভাবে দেখবার জন্য কিমৌনৌ আর কোমরে জড়ানো কাপড়টার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

“আমি এর মধ্যেই তোমার মুখ ভুলে গেছি, ইওশিকো। খুব ইচ্ছে করে তুমি এখন কেমন হয়েছো তা দেখতে। ”

ইওশিকো ফিকফিক করে হেসে ফেলবার ইচ্ছাটা দমন করল। হালকাভাবে ওর হাতটা ঠাকুমার মাথায় রাখল।

ইচ্ছে করছিল বাইরে গিয়ে বাবা আর অন্যান্যদের সাথে দেখা করতে। খামোখা অপেক্ষা করে বসে থাকতে পারছিল না ইওশিকো। ও বাইরে বাগানে গেল। হাতটা বাড়িয়ে ধরল, হাতের পাতা উপরের দিকে, কিন্তু বৃষ্টি এত হালকাভাবে ঝরছিল যে তা হাতের পাতাকে ভেজাতে পারল না। কিমৌনৌর ঘাগড়া জড়ো করে ইওশিকো মনোযোগ দিয়ে ছোট ছোট গাছগুলো আর বাঁশের ঝাড়ের মধ্যে খুঁজতে থাকল। আরে ওই তো ওখানে এলাচি ঝোপের নিচে লম্বা ঘাসের মধ্যে বসে আছে বাচ্চা পাখিটা।

হৃদপিণ্ড জোরে ঝুকপুক করছে। ইওশিকো হামাগুড়ি দিয়ে আরো কাছে গেল। বাচ্চা নীলকণ্ঠ পাখিটা ঘাড়ের লোমের মধ্যে মাথা গুঁজে আর নড়াচড়া করল না। ইওশিকো হাতের মধ্যে খুব সহজেই পাখিটাকে নিতে পারল। মনে হলো পাখিটার শক্তি যেন সব শেষ। ইওশিকো  চারপাশে দেখল, কিন্তু মা পাখিটা দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই।

ঘরের ভিতর দৌড়ে গিয়ে ইওশিকো ডাক দিয়ে বলল, “ঠাকুমা! আমি পাখির বাচ্চাটাকে খুঁজে পেয়েছি। আমার হাতের ওপর বাচ্চাটা। খুব দুর্বল। ”

“ওহ্‌, তাই নাকি? পাখিটাকে জল দেওয়ার চেষ্টা কর। ”

ঠাকুমা খুব চুপচাপ ছিল।

যখন সে হাতা দিয়ে কিছুটা জল ভাতের বাটিটাতে দিয়ে বাচ্চা নীলকন্ঠ পাখিটার ঠোঁট তাতে ডুবিয়ে দিল, পাখিটা জল খেল, ওর ছোট্ট গলাটা ফুলিয়ে তুলল। তারপর—পাখিটা কি সেরে উঠল? ও গান গেয়ে উঠল, “কি-কি-কি, কি-কি-কি...”

মা পাখিটা ডাক শুনে উড়ে এলো। টেলিফোন তারে বসে গান গেয়ে উঠল। বাচ্চা পাখিটা ইওশিকোর হাতের ভিতর ছটফট করতে করতে আবার গেয়ে উঠল, “কি-কি-কি...”

“আহা, কী ভালো যে মা-টা ফিরে এসেছে! ওকে তাড়াতাড়ি ওর মা’র কাছে ফিরিয়ে দাও,” ঠাকুমা বললেন।

ইওশিকো বাগানে ফিরে গেল। টেলিফোন তার থেকে মা পাখিটা উড়ে এলো, কিন্তু নিজের দূরত্ব বজায় রাখল। চেরী গাছের উপর থেকে ইওশিকোর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকল।
ওকে হাতের তালুতে বসে থাকা বাচ্চা নীলকণ্ঠ পাখিটা দেখানোর জন্য ইওশিকো হাতটা উঁচু করল, তারপর ধীরে ধীরে বাচ্চাটাকে মাটিতে রাখল।

কাচের দরজার পেছন থেকে  ইওশিকো দেখল, মা পাখিটা বাচ্চাটার কান্না শুনে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে ধীরে ধীরে কাছে নেমে এলো। যখন মা-টা কাছের পাইন গাছের নিচের ডালটায় নেমে এলো, বাচ্চাটা তার পাখা ঝটপট করতে থাকল, মা’র কাছে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। এই চেষ্টায় উলট পালট খেয়ে বাচ্চাটা গান গাইতে থাকল।

এখনো মা পাখিটা মাটিতে নামল না।

তবুও তাড়াতাড়িই এক সরলরেখায় সে বাচ্চাটার পাশে উড়ে এলো। বাচ্চাটার আনন্দ সীমাহীন। মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, কাঁপা কাঁপা ছড়ানো পাখায় বাচ্চাটা ওর মা’র কাছে উড়ে গেল। স্পষ্টত মা-টা বাচ্চার জন্য কিছু খাবার এনেছিল।

ইওশিকো চাইছিল যে ওর বাবা আর সৎমা যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। ও ওদের এই দৃশ্যটুকু দেখাতে পারলে বড় খুশি হবে, ও এমনটাই ভাবল।

● লেন ডানলপের ইংরেজি অনুবাদ থেকে



বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।