ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নিজ জন্মতারিখ অন্যের নামে লিখে দিয়েছিলেন রবার্ট লুই স্টিভেনসন

ফারাহ্‌ মাহমুদ, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৫
নিজ জন্মতারিখ অন্যের নামে লিখে দিয়েছিলেন রবার্ট লুই স্টিভেনসন

সম্পত্তির মতো নিজের জন্ম তারিখটিও কি অন্যের নামে লিখে দেয়া যায়? আজব শোনালেও সত্য—এই কাজটি করেছেন বিখ্যাত স্কটিশ সাহিত্যিক রবার্ট লুই স্টিভেনসন। ১৮৫০ সালের ঠিক এই দিনে অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন রবার্ট।

ছোটবেলা থেকেই বুকের অসুখে ভোগা রবার্ট ভগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারি ছিলেন। চল্লিশ বছর বয়সে জন্মস্থান এডিনবার্গের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া থেকে অনেক দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের এক দ্বীপরাষ্ট্র সামোয়ার উপালো দ্বীপে ৪০০ একরের বিশাল জমি কিনে ফেলেন তিনি।

তখন সামোয়ার ইউএস কমিশনারের বারো বছরের মেয়ে অ্যানির সাথে পরিচয় হয় রবার্টের। নিজের জন্মতারিখটা বড়দিনে পড়েছে তাই বড়দিনের জমকালো উৎসবের নিচে জন্মবার্ষিকের আনন্দ ফিকে হয়ে যায় বলে অ্যানির অনেক দুঃখ। তখন রবার্ট করলেন এক আজব কাজ। ঘোষণা দিলেন জন্মবার্ষিকের আর কোনো প্রয়োজন নেই তাঁর। তারপর নিজের জন্ম তারিখটি আইনানুসারে অ্যানির নামে লিখে দেন তিনি।

একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক এবং ভ্রমণকাহিনী রচয়িতা রবার্ট গল্পকার হিসেবেই সুপরিচিত। বেঁচে থাকতেই একজন কীর্তিমান সাহিত্যিক হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা জীবনভর নাজেহাল করেছে তাকে। অসুস্থতার জন্যে রবার্টের ছেলেবেলা প্রায় পুরোটাই কাটে বিছানাবন্দি হয়ে। অসুস্থতার কারণে স্কুলও ছাড়তে হয়েছে তাকে। স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হলে পড়াশোনা চালিয়ে যান প্রাইভেট স্কুলে।

১৮৬৭ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন রবার্ট। পারিবারিক পেশা লাইট হাউজ ডিজাইনার হওয়ার জন্যেই ইঙ্গিনিয়ারিং পড়তে যাওয়া। কিন্তু এই পড়াশোনায় তাঁর একেবারেই মনোযোগ ছিল না। তাই ১৮৭০ সালে রবার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন, সেই সাথে লেখালেখি শুরু করেন পুরো দমে।

‘ট্রেজার আইল্যান্ড’, ‘এ চাইল্ডস গার্ডেন অব ভার্সেস’, ‘কিডন্যাপড’, ‘দ্য স্ট্রেঞ্জ কেস অব ডা: জেকিল এন্ড মিস্টার হাইড’ ইত্যাদি রবার্ট লুই স্টিভেনসনের উল্লেখযোগ্য রচনা। এছাড়া লিখেছেন অসংখ্য গল্প, কবিতা ও ভ্রমণকাহিনী। বিশ্বের প্রায় সকল ভাষায় তাঁর লেখা বিভিন্ন বইয়ের অনুবাদ রয়েছে। তাঁর ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’ ক্লাসিক শিশুসাহিত্য হিসেবে স্বীকৃত। ‘দ্য স্ট্রেঞ্জ কেস অব ডা: জেকিল এন্ড মিস্টার হাইড’ রবার্টের অন্যতম জনপ্রিয় রহস্য উপন্যাস যার মূল উপজীব্য মানুষের ব্যক্তিত্বে ভালো ও মন্দের চিরন্তন লড়াই।

ছেলেবেলা থেকেই শারীরিক অসুস্থতার শিকার রবার্টকে আলস্যের জন্যে অনেক খোঁটা সহ্য করতে হয়েছে। অল্প বয়সেই রবার্ট বুঝতে পারে যে তাঁর জন্মই হয়েছে লেখার জন্যে। প্রচুর পড়ত সে আর লেখালেখির জন্যে নোটবুক রাখত সাথে। শব্দের সাথে বসবাস ছিল রবার্টের। আর পুরো পৃথিবীর কাছে সে ছিল ছন্নছাড়া প্রথাবিরোধী। প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে কখনোই বনিবনা হয় নি তাঁর। ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলে রবার্টের বাবা টমাস স্টিভেনসন তাঁর ওপর খুব অসন্তুষ্ট হন। তবে যত যা-ই হোক না কেন রবার্ট কখনো সমাজের তৈরি করা প্রথা আর চাপিয়ে দেয়া রীতিনীতির কাছে নিজেকে সঁপে দেয় নি।

শারীরিক অসুস্থতা তাঁর ভ্রমণের কৌতূহলকে ছাপিয়ে যেতে পারে নি কখনো। রবার্টের মতে তাঁর জীবন ছিল কবিতার চেয়ে সুন্দর। নিজের লেখা গল্পের মতোই জীবন যাপন করে গেছেন তিনি। উপালো দ্বীপে নিজের কেনা জায়গায় একটা গ্রাম প্রতিষ্ঠা করে নাম দেন ‘ভাইলিমা’। নিজের নাম বদলে রাখেন ‘তুশিতালা’—স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ গল্পকার। স্থানীয়দের মধ্যে তিনি ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু এসবই খুব অল্প সময়ের জন্যে। কারণ এর মাত্র চার বছরের মধ্যে ১৮৯৪ সালের ৩ ডিসেম্বর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হয় এই বিখ্যাত সাহিত্যিকের।

তাঁর ইচ্ছানুসারেই উপালো দ্বীপের পাহাড় ‘ভাইয়ুহ’র চূড়ায় তাঁর কবর হয়। রবার্ট লুই স্টিভেনসন এর স্মৃতির সম্মানে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রাম ‘ভাইলিমা’কে এখন জাতীয় যাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে।



বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৫
এফএম/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।