ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

মুক্তিযুদ্ধ প্রভাবিত চিত্রকলা আন্দোলন কেন হয়নি | শফিকুল কবীর চন্দন

বিশেষ রচনা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
মুক্তিযুদ্ধ প্রভাবিত চিত্রকলা আন্দোলন কেন হয়নি | শফিকুল কবীর চন্দন পেইন্টিং : চন্দ্রশেখর দে

“সৎসাহস জ্যাঠামি নয়, সৎসাহস হচ্ছে দূরকে দেখতে পাবার ক্ষমতা। ” - আহমদ ছফা

শিল্পের তথা শিল্পীর কাজ মনোরঞ্জন করা! রহস্য করা! এমনটাও একপক্ষের মত! ‘রহস্য যদি, তবে আর দায়দায়িত্বের কথা ওঠে কী করে? ওঠে একারণে যে, জাদুরহস্য যাকে চমৎকৃত করে, তা, মানুষের নির্বুদ্ধিতা, কিন্তু শিল্পরহস্য যাকে অভিভূত করে, তা, মানুষের বোধ।

এবং বোধ কথাটির প্রথমপাঠই হচ্ছে দায়িত্ববোধ। ’

মাজে পরস্পরবিরোধী সামাজিক দর্শনের বিরোধ বিতর্ক সংগ্রাম মানব সমাজের সৃষ্ট, কিন্তু আপামর জনগণ তার সংঘাতের বীভৎসতায় দীর্ণ উৎপীড়িত। সদলে মুখোমুখি সংঘাতের অনিবার্যতায় উপনীত হয়। ন্যায় অন্যায় প্রগতি কল্যাণ সেখানে অনিবার্যতায় পর্যবসিত। ফ্যাসিস্ট শাসকের অত্যাচার, লুণ্ঠন, দুর্ভিক্ষ, হত্যা, বলাৎকারের বিরুদ্ধে দ্রোহ প্রতিবাদ প্রতিরোধের শিল্প কালের সাক্ষী হিসাবে যতখানি তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয় এর ভেতরের অন্তর্নিহিত শিল্প উৎকর্ষ। তা কি শিল্পের একধরনের রাজনীতি নয়? এই এক চলমান তর্কের বিষয় বটে। বিশ্বশিল্পের ইতিহাসে এমন অনেক শিল্পীর নাম করা যায় যাঁরা কিনা দায়িত্ববোধের তাড়নায় মানব ইতিহাসের সেসব ক্রান্তিলগ্নে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মর্যাদার প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেছেন। সংঘাতের মধ্য দিয়ে দ্বান্দিক প্রক্রিয়ায় ‘অভিশপ্ত রাজনীতির’ বিরুদ্ধে শাশ্বত মানবিকতার শৈল্পিক আয়োজনে উদ্বুদ্ধ হয়ে রচনা করেছেন কালজয়ী সব শিল্পকর্ম।



ফলত দ্রোহ ও স্বাধিকারের মন্ত্র সঞ্জীবনী চিত্রকলার সমূহ বিস্তৃত অঞ্চলে কোনো নতুন শিল্পভাষার শৈলীর জন্ম দিতে অপারগ হয়েছে! বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কার্যত তা কাহিনী চিত্র বা অলঙ্করণ হিসেবে চর্চিত বলে সমালোচনা আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন নিয়ে হতাশা দুরাশার মতোই শিল্পের এই শাখাটিতেও যথার্থ মুক্তিযুদ্ধ প্রভাবিত চিত্রকলা আন্দোলন বা বলা যায় সামগ্রিক সামাজিক দায়বোধের সাথে উৎসারিত নান্দনিক প্রত্যয়কে উন্মীলিত করতে পারেনি



ফরাসি শিল্পী দ্যালাক্রোয়া-র ‘লিবার্টি লিডিং টু দ্যা পিপল’ (১৮৩০) তা ছাড়া গোইয়ার ‘দ্যা ম্যাসাকার অব দ্য থার্ড অব মে ১৮০৮’, কাথে কোলভিতসের ‘মেমোরিয়াল অব আর্ট লিয়েরকেনেকট’, শিল্পী পিটার পল রুবেন্সের আঁকা ‘নিরপরাধীদের গণহত্যা’, ‘যুদ্ধের আতঙ্ক’ (১৬১১-১৬১২) ও শিল্পী থিওডোর জেরিকোর ‘মেডুসার ভেলা’ (১৮১৮-১৮১৯), পিকাসো ও তার গোয়ের্নিকা শিল্পকর্মটি ইত্যাদি প্রতিবাদী শিল্পের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জয়নুল আবেদিনের মন্বন্তরের রেখাচিত্রগুলি সমগ্র বিশ্বশিল্পের ইতিহাসে মানবিক বিপর্যয়ের এক অসামান্য দলিল হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তেভাগা আন্দোলন ও মন্বন্তরের ছবি নিয়েই বৃহত্তর সামজিক দায়বোধের আঙ্গিনায় প্রবেশ করেছিলেন শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ও শিল্পী সোমনাথ হোর।



সারি সারি মৃতদেহ, এই দৃশ্য নিয়ে একটি মর্মস্পর্শী মন্তব্য ছিল জয়নুলের, ‘আমরা বাঙালিরা শুধু মৃত্যুতে এক হই। ’ একটি ছবিতে তিনি এঁকেছেন জলোচ্ছ্বাসে ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখানো জননেতা মওলানা ভাসানীর প্রতিকৃতি। সৃজনশীল শিল্পকর্মে এভাবে রাজনৈতিক নেতাকে উপস্থাপনের প্রথম দৃষ্টান্ত সম্ভবত বাংলাদেশে জয়নুলই স্থাপন করেছেন।

জয়নুল আবেদিন শুধু তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমেই যে বাঙালি জাতীয়তাবোধের দৃষ্টান্ত রেখেছেন তা-ই নয়, তিনি সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলনেও যুক্ত হয়েছেন। ১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে, অর্থাৎ প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর একমাস আগেই তিনি ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত মওলানা ভাসানীর এক জনসভায় অংশ নিয়ে বক্তৃতা করেন এবং পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত তাঁর ‘হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধি বর্জন করেন। এদিক থেকেও তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তাঁকে সেভাবে আলোড়িত করেছে কি? করলেও তার যথার্থ বহিঃপ্রকাশ নিয়ে সংশয় থেকেই গেছে!

‘যে জয়নুল আবেদিন ’৪৩-এ দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকল এরকম একটা সোস্যাল রিয়েলিটি নিয়ে কাজ করল, সেই জয়নুল আবেদিন কেন ’৭১ নিয়ে তেমন কোনো কাজই করেননি? ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ঢাকাতেই ছিলেন। অথচ একাত্তরটাও বিরাট একটা ধ্বংসযজ্ঞ ছিল। ’
 
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রবীণ শিল্পীদের মধ্যে ছবি আঁকতে সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ বা বলা যায় বাধ্য করেছে শিল্পী কামরুল হাসানকে। যুদ্ধকালীন সময়ে তাঁর আঁকা ইয়াহিয়ার মুখ ‘এই সব জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ শীর্ষক শক্তিশালী পোস্টার অসাধারণ তাৎপর্য বহন করেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সত্তরের দশকের পুরো সময় ধরে কামরুল হাসান মানুষ নির্ভর, বিশেষত নারী বিষয়ক, আধা-বাস্তববাদী অসংখ্য ছবি এঁকেছেন। কামরুল হাসানের ১৯৭২ সালে আঁকা ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শীর্ষক একটি তেলরং ছবি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আঁকা কাজ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

যুদ্ধের অমানবিকতার প্রাণস্পর্শী শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে গিয়ে অনেকেই সত্তর দশক থেকে অদ্যাবধি নানাভাবে চিত্রে, ভাস্কর্যে, স্থাপনায় চেষ্টা করেছেন, করছেন। সেসব বিমূর্ত-আধাবিমূর্ত- অবয়বভিত্তিক কাজ। সত্তরের দশকে আবির্ভূত কোনো কোনো শিল্পীর প্রধান প্রেরণা থাকার কথা অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ। তবে তাঁদের কারো কারো মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিল্প সৃজন হয়ত ওই দশকেই তেমনটি হয়নি বরং হয়েছে পরবর্তী দশকগুলিতে। শিল্পীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি যোদ্ধা হিসেবে অথবা নানাভাবে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছেন এমন শিল্পীও আছেন।

স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই, ১৯৭২ সালে চারুকলা কলেজের বার্ষিক প্রদর্শনীতে তখনকার শেষ বর্ষের ছাত্র চন্দ্রশেখর দে উপস্থাপন করেছিলেন এক অসাধারণ শিল্পকর্ম। অত্যন্ত বাস্তবধর্মী কিন্তু শক্তিশালী প্রতীকী চিত্র। বিমূর্ত চিত্রের বিন্যাসসমৃদ্ধ কাজ। মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য করুণ কাহিনীর একটির মর্মস্পর্শী রূপায়ণ। একটি বাড়ির আধা-খোলা সদর দরজায় সদ্য গুলিবিদ্ধ মহিলার পায়ের পাতা দুটো ও সাদা শাড়ির কিছুটা দর্শকের সামনাসামনি। দরজা গাঢ় সবুজ, দেয়াল ধূসর ও ঘোলাটে সাদা, দেয়ালে আঁচড় কাটা কাঁচা হাতের লেখালেখি ও রেখাচিত্র। বাড়িটা হিন্দু পরিবারের হবে বলেই মনে হয়। কাঠের দরজার সবুজ রঙের ওপর সিঁদুর মাখানো। উল্লম্ব ও আনুভূমিক ক্ষেত্র বিভাজনে অতি সহজ কম্পোজিশন। অত্যন্ত যত্ন করে টেক্সচার তৈরি করা হয়েছে। অসাধারণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে ছবিটি। তরুণ চন্দ্রশেখরের অনবদ্য শিল্পকর্ম।



এ ছাড়াও যেসব মুক্তিযুদ্ধ বিষয় ভিত্তিক শিল্পকর্ম রচনার চেষ্টা করা হয়েছে সেসবে স্বল্প ব্যতিক্রম বাদে কখনো ইলাস্ট্রেশন, পোস্টার, প্রচারণামূলক রচনায় পর্যবসিত বলে অনেকেরই অনুযোগ। সেসবে অস্ত্র, পতাকা, মুষ্টিবদ্ধ হাত, দৌড়, লাশ, কিংবা মাথার খুলি, মাথায় গামছা বাঁধা মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি ঘুরে ফিরে এসেছে। কার্যত যুদ্ধের বিজয়, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর এমন একটা সর্বব্যাপী চেতনা ধারণ করে কিংবা বলা যায় সামষ্ঠিক সাংস্কৃতিক চেতনার মূলে জলসিঞ্চন করতে পারেনি। ফলত দ্রোহ ও স্বাধিকারের মন্ত্র সঞ্জীবনী চিত্রকলার সমূহ বিস্তৃত অঞ্চলে কোনো নতুন শিল্পভাষার শৈলীর জন্ম দিতে অপারগ হয়েছে! বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কার্যত তা কাহিনী চিত্র বা অলঙ্করণ হিসেবে চর্চিত বলে সমালোচনা আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন নিয়ে হতাশা দুরাশার মতোই শিল্পের এই শাখাটিতেও যথার্থ মুক্তিযুদ্ধ প্রভাবিত চিত্রকলা আন্দোলন বা বলা যায় সামগ্রিক সামাজিক দায়বোধের সাথে উৎসারিত নান্দনিক প্রত্যয়কে উন্মীলিত করতে পারেনি।

যেমনটি শিল্পী নিসার হোসেন বলেছেন, ‘...সারা ওয়ার্ল্ড -এ যত রকম চেঞ্জ, যত মুভমেন্ট, এমনকি একেবারে যেগুলো এবস্ট্রাক্ট মুভমেন্ট, সেগুলোর মধ্যেও একটা সামাজিক ইমপ্যাক্ট আছে। অথচ যুদ্ধের পর আমাদের কী হলো? ...মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব আমাদের আর্টের কী চেঞ্জ আনল? কেন আমরা সেই ভাষাটাকেই দেখছি, যা মুক্তিযুদ্ধের আগে ছিল। সেটাই স্টাবলিস্ড হচ্ছে। ’

সংগ্রাম, যুদ্ধ, বিজয় এসব যেমন প্রত্যাশার স্মারক তেমনি স্বপ্নভঙ্গ, অপ্রাপ্তিতে দৈন্যতা, অক্ষমতাকেই প্রকট করেছে! অধিকার আদায়ের সংগ্রাম রাজনৈতিক বিজয় হলেও জাতির চেতনাগত বুদ্ধিবৃত্তিক সাংস্কৃতিক প্রত্যাশার অগম্যতাজনিত হতাশা আছে, অপূরণীয়তা আছে, আছে শিল্পকলা চিত্রকলায়ও। প্রশ্ন হলো এ ব্যাপারে প্রচেষ্টা কেমন ছিল, সামগ্রিকতার বিচারে আদৌ সেই প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল কি? সংক্ষুব্ধতা ছন্দিত লাবণ্যে রূপান্তরিত হয়, চৈতন্যের আলোকিত জয়যাত্রাই মানুষের সৌন্দর্যবোধের উৎস। যেখানে জীবন নন্দিত হয় আবহমানের শিল্পে।

প্রতিটি মানুষের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার পরিধি আছে, যা সমাজ কাল পরিবাহী। শিল্পী যতদিন নিজে কার্যকারণ দিয়ে অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ করতে না পারবে, ঠাহর করতে করতে যদি পাল্টে দেবার প্রতিবাদের বিশ্বাসে স্থিত হতে না পারে তবে পরিস্থিতির ধারাভাষ্য গোছের সেই শিল্পমেধা ক্ষণস্থায়ী হয়, এর বিস্তার ঘটে না! ফলে এজাতীয় শিল্প চর্চায় ঘুণ ধরে এর বিস্তার অভ্রভেদী হতে পারে না।

এখনো ক্ষমতা প্রতিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়! কেউ কেউ বলেন এই ছোট ছোট প্রতিবাদের স্বার্থকতার বৃত্তগুলোকে সঞ্জীবিত রাখাই ললিতশিল্পের কাজ। শিল্প সৌন্দর্যের কৌশলেরও তাই কোনো বিকল্প নেই। বিকল্প নেই মানুষের শিল্পপ্রক্রিয়ার। শিল্পকলা স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখে।

শিল্পীর সচেতন জীবন সমীক্ষা নিজের আত্যন্তিক প্রবাহে জমিন ফুঁড়ে উত্থিত হওয়ার প্রণোদনার ঢঙে চিত্রকলায় কেবল তাৎক্ষণিক স্লোগানধর্মী প্রচার উদ্দীপনায় উচ্চকিত হতেই পারে, হয়েছেও বিস্তর, কিন্তু একটা জাতির ইতিহাসের বিশাল বাঁক বদলের ক্ষেত্রে কালজয়ী সৃষ্টির লক্ষণ কি সেখানে যথাযথ প্রতিভাত? দ্যালাক্রোয়ার স্বাধীনতা, রুবেন্স, জেরিকো, গোইয়ার চিত্রকর্ম বা পিকাসোর গুয়ের্নিকার মতো স্মারকসম সৃষ্টির জন্য বাঙালির বিগত কালের দ্রোহ-স্বাধিকার-যুদ্ধ ও বিজয় ইত্যকার ঘটনাবলী যথেষ্ট কিনা, তা হয়ত আরো বিশ্লেষণের দাবি রাখতেই পারে! যা বাংলার মানুষের লড়াই সংগ্রামকে কালোত্তীর্ণ আবেদনমণ্ডিত শিল্প বিবেকের মর্যাদায় আসীন করতে পারত? হয়ে উঠতে পারত বাঙালির চিরায়ত সংগ্রাম মুখরতার আবেগ মথিত সমষ্টির শিল্প পুরাণ।

‘...যুদ্ধের পরে যুদ্ধের কারণে যে টোটাল ল্যাঙ্গুয়েজের একটা পরিবর্তন আসতে পারে, ধরুন পিকাসোর গুয়ের্নিকা একটা যুদ্ধকে নিয়ে আঁকা ছবি। ল্যাঙ্গুয়েজটা পুরোপুরি বদলে গেল। এরকম ক্রিয়েটিভ স্ট্রাগলটাই কেন হয়নি এখানে?’

হেগেল মনে করতেন শিল্প হলো মানুষের জ্ঞান গম্যি মাপার মাপকাঠি। শিল্পী নিজেও কিছুটা তাই মনে করেন কি? তাই ভাব প্রকাশের নতুন কোনো রূপ আবিষ্কার করলে অন্যদের শিল্পচর্চার সঙ্গে একটা টেনশন থেকেই যায়। এই টেনশন একটি দুটি করে বেড়ে বেড়ে রূপ দেয় নতুন ধরনের শিল্প আন্দোলন। গড়ে ওঠে নতুন চিত্রভাষা। চিত্ররীতি। আর আন্দোলনের সুদূর প্রসারী ঢেউ গিয়ে পড়ে জনতার ওপর। জনতার প্রতিক্রিয়া ফিরে আসে শিল্পীর কাছে। এই প্রতিক্রিয়া কত তৎপর হবে, তা নির্ভর করে সামাজিক পরিস্থিতির ওপর।

‘যদি তুমি ফিরে না আসো,
দেশের প্রত্যেক চিত্রকর বর্ণের অলৌকিক ব্যাকরণ
ভুল মেরে বসে থাকবেন। প্রত্যেক কবির খাতে
কবিতার পঙতির বদলে পড়ে থাকবে রাশি রাশি মরা মাছি। ’

শিল্পী দর্শকের জন্যও অনেকটা কাজ ফেলে রাখেন। উত্তীর্ণ মহৎ শিল্পে এই অব্যক্ত অনির্বচনীয় ভারটুকুই মুখ্যত শিল্পের মূল রসদ। সেখানে শিল্পের রস আছে। অমোঘ রসালঙ্কার জন্ম হয় শিল্পভোক্তার মনে, শিল্পীর দায় কেবল ভোক্তাকে তার সন্ধান বাতলে দেয়া। শিল্পী আয়না বাড়িয়ে দেয়, যে আয়নায় কলা দর্শক নিজেকে দেখার সাথে মুগ্ধতা পাশ কাটিয়ে দেখেন ছাই চাপা আগুন, আর সেই উস্কে দেয়ার উস্কানিটুকুই দ্রোহী শিল্পের কাজ।
 
একটি দেশের জাতির রাষ্ট্রিক উদ্বোধনের যে সাংঘর্ষিক বিদ্রোহাত্মক সংগ্রামী যুদ্ধের জাগরণ তার মর্মমূলীয় ভাষা আত্মস্থ করে ইতিহাসের সেই বিশেষ ক্ষণের মানবমুক্তির তথা অত্যাচার নিগ্রহের নিগড় থেকে পরিত্রাণের পরিসমাপ্তি তথা বিজয় অর্জন এই বৃহত্তর চিন্তার সঙ্গে নিজের সৃজনকর্মকে ওতপ্রোত করে নিতে পারাই স্মরণযোগ্য দ্রোহের আত্মপ্রেরণাচালিত শিল্পীর শিল্পিত উৎসর্জনের প্রতিভাস বলে চিহ্নিত হতে পারে।

উদ্ধ্বৃতি

১. রণজিৎ দাশ

২. শিল্পী নিসার হোসেন
৩. নজরুল ইসলাম
৪. ৫. শিল্পী নিসার হোসেন
৬. শামসুর রহমান, যদি তুমি ফিরে না আসো



বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।