জানালার কাচে কুয়াশার ছোঁয়া কিংবা পথে ও ঘাসে শিশিরের মেলা দেখে কে না আনন্দ পায়? শীতকালে মাঝে মধ্যে সুর্যিমামা তো দেখাই দেন না। কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে যেন পুরো গ্রাম-শহর-মানুষ আর মানুষের মন! ‘এক মাঘে শীত যায় না’—বাঙালির এই প্রবাদের খবর অনেকেরই জানা।
‘দ্য প্যারিস উইন্টার’ উপন্যাসে ইমোজেন রবার্টসন বিশ শতকের প্যারিসের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। কাহিনীতে তিনি নায়িকার একাকিত্ব এবং ক্ষুধার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। ইলানা তান রচিত রোমান্স কমেডি ‘উইন্টার ইন টোকিও’ বেশ সাড়া জাগানো কাহিনী। ‘হ্যাপী এন্ডিং’-এর মধ্য দিয়ে এখানে শীতের ইতিবাচকতাকে পরিবেশন করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাকে আশ্রয় করে জ্যান টারল্যু লিখেছেন ‘উইন্টার ইন ওয়ারটাইম’। জার্মান বাহিনীর হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হল্যান্ডবাসীর শীত ও ক্ষুধার যন্ত্রণা স্থান করে নিয়েছে এই ফিকশনে। ১৯৪০ সালে স্প্যানিশ মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর ইউরোপে ফ্রান্স সেনাবাহিনীর উপস্থিতির প্রেক্ষাপটে সি জে স্যানসম লিখেছেন ‘উইন্টার ইন মাদ্রিদ’। গ্রন্থটি আন্তর্জাতিক বাজারে বেস্টসেলারের মর্যাদা লাভ করেছে
বাংলা কবিতায় শীত প্রবেশ করেছে মধ্যযুগে—বিশেষ করে মঙ্গলকাব্যে নায়িকার বারো মাসের কষ্ট-বর্ণনার অনিবার্য-পরিসরে। ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বলেছেন: ‘পউষের প্রবল শীত সুখী যেজন। / তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ ॥/ ফুল্লরার কত আছে কর্মের বিপাক। / মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক ॥’ পরবর্তীকালে আধুনিক কবিরাও শীতকালের বন্দনা কিংবা বর্ণনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: ‘শীতের হাওয়া হঠাৎ ছুটে এলো। / গানের হাওয়া শেষ না হতে। / মনে কথা ছড়িয়ে এলোমেলো। / ভাসিয়ে দিল শুকনো পাতার স্রোতে। ’ শীতের শেষে বসন্তের শুরুকে আবাহন করেছেন বোধকরি কবি। অন্যত্র তিনি লিখছেন: ‘এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তেরই জয়’। শীতকে তিনি মৃত্যুর প্রতীকেও প্রয়োগ করেছেন। রবিবাবু ‘শীতের প্রবেশ’ কবিতায় লিখেছেন: ‘শীত, যদি তুমি মোরে দাও ডাক দাঁড়ায়ে দ্বারে। / সেই নিমেষেই যাব নির্বাক অজানার পারে। ’ জসীম উদ্দীনের কবিতায় শীতকে আমরা পাই আমাদের নিজস্ব ঋতুরূপে। শীতকালের প্রবল ও আন্তরিক বর্ণনা তার কবিতায় যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে, বাংলা সাহিত্যে আর কোনো কবির রচনায় তেমনটা হয়নি। ‘রাখাল ছেলে’ কবিতা থেকে খানিকটা পাঠ নেওয়া যেতে পারে: “ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে,/ সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে। / আমার সাথে করত খেলা প্রভাত হাওয়া, ভাই,/ সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই। / চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দুখান পা,/ বলছে ডেকে, ‘গায়ের রাখাল একটু খেলে যা!’... সরষে বালা নুইয়ে গলা হলদে হাওয়ার সুখে,/ মটর বোনের ঘোমটা খুলে চুমু দিয়ে যায় মুখে!/ ঝাউয়ের ঝাড়ে বাজায় বাঁশী পউষ-পাগল বুড়ী,/ আমরা সেথা চষতে লাঙল মুর্শিদা গান জুড়ি। ” তার ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতায় আছে শীতের অনুষঙ্গ: ‘তুমি যদি যাও—দেখিবে সেখানে মটর-লতার সনে,/ সীম—আর সীম—হাত বাড়ালেই মুঠি ভরে সেইখানে। / তুমি যদি যাও সে-সব কুড়ায়ে,/ নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,/ খাব আর যত গেঁয়ো চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,/ হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব জনে জনে। ’
প্রকৃতির কবি, রূপসী বাংলার রূপকার জীবনানন্দ দাশ ‘শীতরাত’ কবিতায় লিখেছেন: ‘এইসব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;/ বাইরে হয়ত শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা। ’ তার কবিতায় ঘুরে ঘুরে আসে ‘পউষের ভেজা ভোর’, ‘নোনাফল’, ‘আতাবন’ ‘চুলের উপর তার কুয়াশা রেখেছে হাত’, ‘ঝরিছে শিশির’, ‘পউষের শেষরাতে নিমপেঁচাটি’। ‘এইসব ভালো লাগে’ কবিতায় তিনি লিখেছেন: ‘জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালি রোদ এসে/ আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়,—আমার কাতর চোখ, আমার বিমর্ষ ম্লান চুল—/ এই নিয়ে খেলা করে: জানে সে যে বহুদিন আগে আমি করেছি কী ভুল/ পৃবিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে,/ পউষের শেষরাতে আজো আমি দেখি চেয়ে আবার সে আমাদের দেশে/ ফিরে এলো; রং তার কেমন তা জানে ওই টসটসে ভিজে জামরুল,/ নরম জামের মতো চুল তার, ঘুঘুর বুকের মতো অস্ফুট আঙুল। ’ কবিতা লেখা আর শীতরাতের হিম-প্রখরতা যেন জীবনানন্দের ভাবনায় একাকার হয়ে আছে। জানাচ্ছেন সে কথা: ‘এ-সব কবিতা আমি যখন লিখেছি ব’সে নিজ মনে একা;/ চালতার পাতা থেকে টুপ্ টুপ্ জ্যোৎস্নায় ঝরেছে শিশির;/ কুয়াশায় স্থির হয়ে ছিল ম্লান ধানসিঁড়ি নদীটির তীর;/ বাদুড় আঁধার ডানা মেলে হিম জ্যোৎস্নায় কাটিয়াছে রেখা/ আকাঙ্ক্ষার; নিভু দীপ আগলায়ে মনোরমা দিয়ে গেছে দেখা/ সঙ্গে তার কবেকার মৌমাছির... কিশোরীর ভিড়/ আমের বউল দিল শীতরাতে;—আনিল আতার হিম ক্ষীর;/ মলিন আলোয় আমি তাহাদের দেখিলাম,—’ শীতের সাথে শরীরের ওমের যে সম্পর্ক, তাও ভুলে যাননি জীবনানন্দ। লিখেছেন সে কথা: “হিমের রাতে শরীর ‘উম্’ রাখবার জন্য দেশোয়ালীরা/ সারারাত মাঠে আগুন জ্বেলেছে। ” সুফিয়া কামালের কবিতায় শীতের জড়তা-কষ্ট-বিপন্নতা রূপ লাভ করেছে ব্যক্তিক অনুভবের আতিশয্যে। প্রেম আর প্রকৃতি যেন তার কবিতায় একাকার হয়ে আছে। জীবনের শীত আর প্রকৃতির হিম যে এক, তা বুঝতে পাঠকের একটুও অসুবিধা হয় না। কবি লিখছেন: “কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী—/ গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে/ রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনোমতে। ” শামসুর রাহমানের ‘রূপালি স্নান’, ‘তার শয্যার পাশে’ কবিতা দুটিতে আছে শীতের অনুষঙ্গ। রূপালি স্নান’ কবিতা থেকে খানিকটা উদ্ধৃত করছি: ‘শিশিরের জলে স্নান ক’রে মন তুমি কি জানতে/ বিবর্ণ বহু দুপুরের রেখা মুছে ফেলে দিয়ে/ চ’লে যায় এই পৃথিবীর কোনো রূপালি প্রান্তে?/ নোনাধরা মৃত ফ্যাকাশে দেয়ালে প্রেতছায়া দেখে, আসন্ন ভোরে/ দু’টুকরো রুটি/ না-পাওয়ার ভয়ে শীতের রাতেও এক-গা ঘুমেই বিবর্ণ হই,/ কোনো একদিন গাঢ় উলাসে ছিঁড়ে খাবে টুঁটি/ হয়ত হিংস্র নেকড়ের পাল, তবু তুলে দিয়ে দরজায় খিল/ সত্তাসূর্যে যেসাসের ক্ষমা মেখে নিয়ে শুধু গড়ি উজ্জ্বল কথার মিছিল/ হয়ত কখনো আমার ঠান্ডা মৃতদেহ ফের খুঁজে পাবে কেউ/ শহরের কোনো নর্দমাতেই;—সেখানে নোংরা পিছল জলের/ অগুনতি ঢেউ/ খাব কিছুকাল। ’ আল মাহমুদ লিখেছেন: ‘কখনো ভোরের রোদে শিশিরের রেনু মেখে পায়/ সে পুরুষ হেঁটে যায় কুয়াশায় দেহ যায় ঢেকে। ’ আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখেছেন: ‘শীতের ঢেউ নামি আসবে ফের/ আমার বুড়ো হাড়ে ঝনাৎকার। ’ মহাদেব সাহা বলেছেন: ‘শীতের সেবায় তবে সেরে উঠি’। আবিদ আজাদ বলেছেন: ‘সব মরবে এবার শীতে/ কেবল আমার ফুসফুসের পাতাঝরার শব্দ ছাড়া। ’ রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ লিখেছেন: ‘আমিও সারারাত মৃত মানুষের শীতে—শীতার্দ্র হয়েছিলাম। ’
রবীন্দ্রনাথ ঋতুভিত্তিক নাটক লিখেছেন। ‘রক্তকরবী’ (প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ১৯২৬) শীতকালের নাটক। কৃষিনির্ভর সভ্যতার উদারতাকে বোঝানোর জন্য নাট্যকার ফসলকাটার গান সন্নিবেশ করেছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যাদের জন্য এই গানের আয়োজন, তাদের কানে কোনোকালেও গানের বাণী পৌঁছায় না। তারা গান শোনে কি-না কিংবা গান তাদের আদৌ টানে কি-না, সে বিষয়েও রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। নাটকটির ঘটনার কাল পৌষমাস; ফসল কাটার ও নবান্নের প্রবল মৌসুমের প্রাক্কাল। শীতকালে যেমন ফসল কাটার ধুম নামে, তেমনই চলে খোদাইকরের খোঁজাখুঁজির ব্যস্ততা। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া এই দ্বন্দ্বের স্বরূপ রবীন্দ্রনাথ কৌশলে নাটকের ক্যানভাসে তুলে এনেছেন। যাদের কানে ফসল কাটার গানের শব্দ পৌঁছে না, তারা যে কৃষিতন্ত্র থেকে কত দূরে রয়েছে, কিংবা বলা চলে নিজেকে কিভাবে দূরে সরিয়ে রেখেছে, তা সহজেই অনুমান করা চলে। পৌষের ফসল কাটার গানের খানিকটা শোনা যাক: ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে—আয় রে চলে,/ আয় আয় আয়। / ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে,/ মরি, হায় হায় হায়। .../ মাঠের বাঁশি শুনে শুনে আকাশ খুশি হলো—/ ঘরেতে আজ কে রবে গো। খোলো দুয়ার খোলো। ’
বাংলা উপন্যাসেও আছে শীতের উপস্থিতি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্’র ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসে শীতের বর্ণনা তার পাঠককে আকৃষ্ট করে। খানিকটা পাঠ নেওয়া যাক: ‘শীতের উজ্জ্বল জ্যোৎস্নারাত, তখনো কুয়াশা নামে নাই। বাঁশঝাড়ে তাই অন্ধকারটা তেমন জমজমাট নয়। সেখানে আলো-অন্ধকারের মধ্যে যুবক শিক্ষক একটি যুবতী নারীর অর্ধ-উলঙ্গ মৃতদেহ দেখতে পায়। অবশ্য কথাটা বুঝতে তার একটু দেরি লেগেছে, কারণ তা ঝট্ করে বোঝা সহজ নয়। পায়ের ওপর এক ঝলক চাঁদের আলো। শুয়েও শুয়ে নাই। তারপর কোথায় তীব্রভাবে বাঁশি বাজতে শুরু করে। যুবতী নারীর হাত-পা নড়ে না। চোখটা খোলা মনে হয়, কিন্তু সত্যিই হাত-পা নড়ে না। তারপর বাঁশির আওয়াজ সুতীব্র হয়ে ওঠে। অবশ্য বাঁশির আওয়াজ সে শোনে নাই। ’
আমেরিকান-ইংরেজ কবি রবার্ট ফ্রস্ট বলেছেন—‘Stopping by woods on a snowing evening’. সোভিয়েত লেখক চেখভ বলেছেন—‘মানুষ সুখী হলে জানতে চায় না—এটি শীত না বসন্ত’। প্রায় ৪ শত বছর আগে শেক্সপিয়ার ‘Winter tell’ নামে একটি নাটক লিখেছিলেন। ইংরেজ কবি শেলী বলেছেন: ‘Oh, wind, if winter comes, can spring be far behind’. শেলীর এই ভাবনার সাদৃশ্য পাওয়া যায় কবি নজরুলের শীত-বন্দনায়। ‘শীতের সিন্ধু’ কবিতায় লিখেছেন তিনি: ‘ওগো মোর লীলা সাথী অতীত বরষার। / আজিকে শীতের রাতে নব অভিসার। ’ জাপানি কবি বাশো তার হাইকুতে পৃথিবীর অষ্টমাশ্চর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন: ‘অষ্টদৃশ্য বেশ/ সাতটি কুয়াশায় ঢাকা/ একটির ঘণ্টা ঢং ঢং। ’—তার মানে কী দাঁড়ায়? আমাদের চারপাশের জাগতিক বিষয়াদির, সৌন্দর্যের, ভালোলাগার বেশিরভাগই শীতের কুয়াশায় আচ্ছন্ন। সেসবের দেখা পেতে হলে কি আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে—অন্তত কুয়াশার সরে যাবার মতো সূর্যালোকের সকাল পর্যন্ত?
‘দ্য প্যারিস উইন্টার’ উপন্যাসে ইমোজেন রবার্টসন বিশ শতকের প্যারিসের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। কাহিনীতে তিনি নায়িকার একাকিত্ব এবং ক্ষুধার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। ইলানা তান রচিত রোমান্স কমেডি ‘উইন্টার ইন টোকিও’ বেশ সাড়া জাগানো কাহিনী। ‘হ্যাপী এন্ডিং’-এর মধ্য দিয়ে এখানে শীতের ইতিবাচকতাকে পরিবেশন করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাকে আশ্রয় করে জ্যান টারল্যু লিখেছেন ‘উইন্টার ইন ওয়ারটাইম’। জার্মান বাহিনীর হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হল্যান্ডবাসীর শীত ও ক্ষুধার যন্ত্রণা স্থান করে নিয়েছে এই ফিকশনে। ১৯৪০ সালে স্প্যানিশ মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর ইউরোপে ফ্রান্স সেনাবাহিনীর উপস্থিতির প্রেক্ষাপটে সি জে স্যানসম লিখেছেন ‘উইন্টার ইন মাদ্রিদ’। গ্রন্থটি আন্তর্জাতিক বাজারে বেস্টসেলারের মর্যাদা লাভ করেছে। এক এতিম যুবক এবং এক অন্ধ যুবতী, যারা ভালোবাসায় অস্থাহীন—তাদের মেলোড্রামা সাউথ কোরিয়ার জনপ্রিয় নাটক ‘দ্যাট ইউন্টার দ্য ইউন্ড ব্লোওজ’। ২০০৬ সালে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত ‘ডেড অব ইউন্টার’ নামক ছোটগল্পে অস্ট্রেলিয়ান লেখক স্টিফেন ডিডম্যান শীতকে বিদায় জানানোর জন্য প্রস্তুতির কথা বলেছেন। আর রেবেকা কে ওকোনর তার ‘ওয়ান মোর ইউন্টার’ গল্পে আহ্বান জানিয়েছেন নতুন কোনো শীতকে। তার জীবনধর্মী কাহিনীটি পাঠকের মন ও হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে।
শীতকাল এমন এক সময় যখন সারা পৃথিবী সম্ভবত ঘুমের ঘোরে প্রবেশ করে। ঠান্ডা বাতাস, শক্ত মাটি আর মৃতপ্রায় গাছ-গাছালিতে আচ্ছন্ন এই সময়ে যেন তেমন কিছুই করার থাকে না। তবে শীত আমাদেরকে এমন কিছু ভাবতে অনুপ্রাণিত করে যা আমরা এতদিন অবহেলায় পেছনে ফেলে রেখেছিলাম। সৃজনশীলতার বিকাশ এবং কল্পনার ক্ষতিপূরণেরও সময় এটি। শীতকে কেউ কেউ ‘নীরবতা ও অন্ধকারের অনুভূতি’ বলে প্রকাশ করতে চান। পৃথিবীজুড়ে কবিরা শীতকাল নিয়ে যে সাহিত্য রচনা করেছেন, তাতে পাওয়া যায় মানুষের সম্পর্কের প্রতি বিশেষ মনোযোগ বা সম্পর্ক নবায়নের বিভিন্ন প্রসঙ্গ ও মাত্রা। শীতের স্বপ্ন আছে; আছে প্রসন্নতা-বিষণ্ণতার আবহ। শীতের সঙ্গীত উৎসব কিংবা শীতকালে সিনেমা দেখার আনন্দও সারা পৃথিবীতে মানুষকে আনন্দ দিয়ে আসছে। শীত আমাদের ক্লান্তির, অসহায়তার এবং বিপন্নতামোচনের কাল। অভিবাদন, হে শীতকাল!
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬