সুবর্ণ মৌমাছি
এভাবে কিছুই হবে না জেনো,
অনন্তকালেও পৌঁছা যাবে না দ্বিগবলয়ে!
টেক্সটাইল সভ্যতা কতদূর?
প্রযুক্তির স্পন্দন ভরা পাঁজরে কি প্রাণ থাকে?
ইত্যাদি জেনে তোমার কী কাজ—
মানুষ স্পর্শ করেছে চন্দ্রের মৃত্তিকা,
শল্য কারিগরেরা মৃত হৃৎপিণ্ড বদলে
জুড়ে দিচ্ছে অনুভবের আশ্চর্য যন্ত্র;
তুমি বরং বসে থাকো—
হিমায়িত লাশের মতো সঞ্চালনহীন
কবরের আবাসিক বিন্যাস ভালোবেসে বেসে,
মৃত্যুর গহীন শিলাভূমে সবুজ অঙ্কুরের মতো
চয়ন করো—
আনন্দলোকে বিলুপ্ত বিষাদ মঞ্জুরি,
কনে দেখার আলোয় দীপ্র খোয়াব!
কনকচাঁপার হিংস্রতার মতো নির্মম যুবতী
শরীরে উপগ্রহের ষোলকলা আন্ধার,
তুমি বিকর্ষণ বোধ করো!
যে পানপাত্রে টলটলে আরক
ধরা যাক—সে এক অপরূপ কাচের কুমারী,
তুমি কিংবদন্তির প্রেমিক যুবা
পান করো আনন্দিত দংশন মুদ্রা;
অথবা ঝড়ো মানুষ—
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বাতিল বিমানের মতো
পরিত্যাগ করো—
উপশমের আফিম;
কৃত্রিম পর্যবেক্ষণের মর্মমূল থেকে
ছিঁড়ে আনো অদৃশ্য বীজাণু,
জৈবিক ঘুমঘোর থেকে অতন্দ্র মুহূর্ত!
মনে করো—তোমার করতলে
সৌভাগ্যের মশাল জ্বলা কোনো স্থাপত্যই নেই,
মণীষা, বিত্ত ও বিক্রম সুলভ নয়—
নয় এ জন্মে অন্তত
অথবা তুমিই সৌভাগ্যবান পুরুষ শতাব্দীর,
অন্যরকম অন্যমনস্ক স্থবির,
পাণ্ডুলিপির মতো নির্জন গভীর,
ঝড়ো হাওয়ায় হাওয়ায় উদাসী উন্মন,
কৌমার্যের মতো নিদাঘ নির্জন;
স্তব্ধতার আন্ধার মৌচাক ঘিরে জেগে থাকো
সুবর্ণ মৌমাছি!
প্রবাল দ্বীপ
মানুষের সব আকাঙ্ক্ষা প্রগাঢ় হয়—
বালুকণা ..জমে জমে তারামাছ
সমুদ্রফেণা..
প্রবাল দ্বীপের মতো—
বৃহস্পতিবারের অতন্দ্র্র রাতে
কিছু সময় কাটে
অপেক্ষায় ..ক্লান্তিতে নিঃসঙ্গ
হয়ত শনিবারের ঊষায় পূর্ণ হয়
ইস্পিত তিয়াস।
স্বপ্নের ঘাসফুলে বসে প্রজাপতি,
জ্বলে কাঙ্ক্ষিত প্রসূন—
তথাপি চির অতৃপ্ত মানুষ
মউ মউ সুরভিতে মদির হতে পারে না;
অপরাজিতার নীল
আর গোলাপের সুরভি নিয়ে
সে পান করে পাত্র পাত্র সোম,
অফুরান আফিম ক্রিয়াশীল হয় যথারীতি,
তবু তার চেতনায় ঝরে না মেঘ,
স্নায়ুবিক আবেগে কাঁপে না শরীর,
নেশাগ্রস্ত হতে সে পারে না কিছুতেই!
বিত্ত ও সুরম্য বিক্রম
নিবেদিতা যুবতীর মতো
আরতি মুদ্রায় নতজানু হয়,
সে পৌরুষের তীব্র বল্লমে বিদ্ধ করে
সবুজ যোনি,
করতলে উড়ায়—
কবুতরের মতো চিত্রিত মোহর,
তথাপি হৃৎপিণ্ডের দুর্গম শিবির
খুঁজে পায় না
পায় না সে কিছুতেই!
তার করোটি ও পাঁজরের লোহিত আবিরে
গভীর গভীর আঁধার,
কিঞ্চিত বিলম্বে হলেও জ্বলে
সোনালি ঝাড় লণ্ঠন,
বিকীর্ণ রশ্মিতেও আলোকিত হয় না
বিষণ্ণ অক্ষিগোলক!
যে পবিত্র পাথর মহার্ঘ ও দুর্লভ
তক্ষশীলার চন্দ্রকান্তমণি জ্বলে
তার অনামিকায়
বিচ্ছুরিত আভায় দশা কাটে না শণির,
এত অশ্রু.. ..অর্চনা অন্তর্দাহ
শুভ হন না দেবরাজ বৃহস্পতি!
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত মৌসুমের মতো
আকাশ পরিক্রমায় যথারীতি
সিংহ, কর্কট, বৃশ্চিক রাশি
উড়ান স্বর্ণনীল সবুজ নাক্ষত্রিক প্যারাসুট.. ..
অফুরান বিপন্ন মানুষ পায় পরিত্রাণ,
চন্দ্রভূকেরা স্পর্শ করে মৃত্তিকা,
হতাশ দেবালয়ে জ্বলে উৎসাহের দীপ.. ..
কিন্তু কোনো মূল্যেই
আসে না
আসে না
তার সুরভীত শুভলগ্ন!
ডানাভাঙ্গা চিল
শুধু কি কিছু স্বপ্নে অঞ্জলি দেব কেবল
উদ্বেলিত হবে না কৌতূহল?
নৌবন্দরের ব্রথেলে নিহত হবে গ্রিক খালাসি
প্রত্নতাত্ত্বিকরা নীল অববাহিকার সুড়ঙ্গে খুঁজবে
ফারাও বালিকার কঙ্কাল,
যুবকেরা পাঠ করবে স্নায়ু হিম করা থ্রিলার
সব কিছু জেনেও রোমাঞ্চিত হব না
সমগ্র সত্তা যেন এক মলিন নিউজ পেপার;
কিছুতেই ছড়াব না—
বৃহস্পতির আলোক চিত্রের মতো
টাটকা ঘ্রাণ,
প্রাণের ভেতরে প্রাণ..
রক্তস্রোতের নব্য ধারায়—
ঝিনুক, প্রবাল, সীল শিকারীর মতো
সক্রিয় হব,
অতল থেকে তাপমান যন্ত্রে পরিমাপ করব
উত্তাপ ও হিম শীতার্থতা.. .. ..
বুকের ভেতরে পারদের মতো ভারী বিমর্ষতা
জৈবিত সত্তায় আলোছায়া গ্রহণ,
ঝিঁঝিট রাগের মতো বিষণ্ণতা,
পেশী ও উচ্ছ্বাসের দুরন্ত তুরঙ্গ—
কিছুতেই অতিক্রম করতে পারে না
বল্গার গ্রহণ বলয়।
পারদের উত্থান পতনে হে পরিমিত পরিচয়—
হেরেম বালিকার উচ্ছ্বাসের মতো
তোমার ডানাহীন গাঙ্গচিল উড়ে.. .. ..
উড়ে জর্ডান, তাহিতি, ককেশাসে
ডানা ভাঙ্গা স্মৃতির জমিনে তুমি জ্বালো.. .. ..
হলুদিয়া পাখির রেশমী পালক
মসলিন
ইলিশের চোখ
তক্ষকের নীল সংগীত;
স্বপ্নের সুরভিত অঞ্জলিতে বাজে
যুগ যুগ.. ..ঝিঁঝিট যন্ত্রণা
উড্ডীন বাসনা বিপন্ন বিষণ্ণ গ্রহণ বলয়ে বিদ্ধ
সিদ্ধ পুরুষের মতো হাসতে পারো না তুমি,
আধ নেভা ধূপের ধুম্র পিলসুজে জ্বলে দীর্ঘশ্বাসের ইন্ধন,
ডানাভাঙ্গা চিলের চোখে জমে
শবনমের রূপোল জ্যোতিষ্ক—
তুমি উড্ডীন হতে পারো না
পারো না কিছুতেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬।