ষাঁড় ও সূর্যাস্ত
আমরা দু’জন অদিনের আগন্তুক, হারাধনের পিতার মতো হাবা জ্ঞানী
শীতে ষাঁড়ের সাহসী নৃত্য দেখেছি, হাওড়ের সূর্যাস্ত দেখেছি।
জানি আমরা, যে জন্মাবার সে জন্মেছে।
দু’রকমভাবে বোকা নদীটার পাড়ে। নদীর নাভিতে থাকবে একক বালুচর।
সেখানে কবিতা পড়বে বিদেশি হ্যাট পরা পাগল। সেখান থেকে ১ দল
মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধ যৌবনকে অভিশাপ দিয়ে বেগুনি মিছিল নিয়ে ছুটবে গুদাম
ঘরে।
আমরা শুনব বালির গভীরে শিশুর হীরক কান্না। সন্দেশের মতো সূর্যটার পাশে
মাছি দেখতে দেখতে ভাবব—লাইব্রেরির পর লাইব্রেরি ঘেটে কেবলই হচ্ছে
জানা, এ জগতে বহু কিছুরই নাই দরকার।
জগত লঞ্চের ভিখিরির গানে স্কুলছুট আর লাইসেন্সহীন হতে চাচ্ছে।
শবেবরাত
এবারের শবেবরাতে কলোনির ছেলেদের সাথে
মোল্লাপাড়ার ছেলেদের মারামারি হলো।
সারা রাত আমি তারাবাতি জ্বালালাম,
নিজ হাতে বানানো মরিচা বোম ফুটালাম।
ভিখিরিদের দিলাম ৫০ টাকা। নামাজ পড়লাম ১২ রাকাত।
আমার একটি তারাবাতি উড়ে গেল চাঁদের দেশে, তিনটা মরিচা হারাল
গোপালদের বাড়ির উঠোনে। গোপাল আর আমি পেট ভরে খেলাম
সুজি-গাজরের হালুয়া, গরুর মাংস, চালের রুটি।
এবারের শবেবরাতে হারিয়ে গেল আমার গোল টুপি,
পাঞ্জাবিতে লাগল মাংসের ঝোল। তবু ওই পাঞ্জাবি পরে
পরদিন কিনলাম বউবাজারের পাঙ্গাস। নিজের কণ্ঠস্বরকে
মনে হলো অন্যের কণ্ঠস্বর।
আগামী শবেবরাতে চাঁদে যাব খুঁজতে উড়ে যাওয়া তারাবাতি।
কাঠঠোকরা শিকারী
তোমাদের বাসা থেকে আমি বাংলা কোরআন চুরি করেছি।
শহরের বড় লাইব্রেরি থেকে চুরি করেছি—বাইবেল, গীতা,
ত্রিপিটক আর বিশ্বযুদ্ধের কৌশল। ধর্মগ্রন্থ চুরি আমার নেশা।
বোকা আইভান আমার প্রিয় বন্ধু। আমরা দু’জন পাথর কুড়াই, অন্ধের
চোখে বৃষ্টি মাখি আর ঘুরে ফিরে দাঁড়াই তালা দেয়া দরজার সামনে।
বন্ধ ঘরের গল্প খুঁজি। কল্পনাপ্রবণ শিশুর মতো আঁতকে উঠে বানাই
কাঠঠোকরা শিকারের বন্দুক, ট্রিগার টিপলে যার বের হয় সঙ্গীত।
রেফ
আদিম শিকারী কালো ভালুকের পিঠে বসিয়ে যায় রেফের মতন
তীক্ষ্ণ ফলা।
বকের পালক খুঁজতে গিয়ে থামি পাহাড়ি চাঁপাগাছের সামনে।
চাঁপাগাছ যেন দুপুরের ভুঁড়িঅলা মাতাল। মৌমাছির গুঞ্জনে শোনায়
শের-শায়রি; দূর-দুপুর থেকে ভেসে আসে ব্রেকফেল সাইকেলের ক্রিং।
‘ইউরেকা’ বলে চিৎকার করে লাল কিশোরী—
নামতাক্লাস থেকে পালানো ফিনিক্স চাঁপাগাছকে ভাবে মির্জা গালিব।
চাঁপাগাছ আর ভালুকের পিঠে রেফ দেখতে আসে ১০০ নোবেল জয়ী।
গোধূলীবেলার চতুর্দশপদী : ২
ডালিমের ডানা থেকে ঝুম বৃষ্টি পড়ে।
শুনি দূর-শিল্পগাছের ঘোষণা :
‘ধ্বংস হবে ভূ-কম্পনে নগর সভ্যতা। ’
তুমি বলো : জগত আশ্চর্য যুক্তিহীন
গড়ে ওঠে আবার মিলিয়ে যায় ফুঁ-তে।
আমি কেঁপে উঠি, ডালিম গাছের পাতা
ছিঁড়ি। আমার কোপানো দিঘিতে একাকী
সিংহ আসে পানি পান করতে। লণ্ঠন
জ্বেলে মধ্যরাতে শুয়ে পড়ি ঐ দিঘিতে।
লক্ষ বছরের মমি থেকে এক লাফে
বেরিয়ে সমুদ্র-নাবিক শোনায়, ‘ভাড়া
করা এ বিশ্বে জীবনভর কিছু অপরাধ
মানুষই করে। ইতিহাসের পৃষ্ঠায়
নাচে ঝরা ফুল, কাটা মাথা সম্রাটের। ’
জাফলং
সীমান্তে হাওয়া নাচে, পাখি ওড়ে এপার-ওপার।
এদেশে ঘুঘু ডাকলে শোনা যায় ওদেশে। ওখান থেকে
সাদা-ভারী পাথর ভেসে আসে এদেশে। পাথর তুলি বোটে,
খাসিয়া মেয়েরা পাহাড়ি পানিতে গোসল করে।
তামাবিল সীমান্তে দু’বাংলার টহলদার বন্দুক কাঁধে গল্প করে
নো-ম্যানস ল্যান্ডে গরু ঘাস খায়, পাখি গান গায়।
জাফলংয়ে দাঁড়িয়ে ভারতের বড় বড় পাহাড়ের ছবি তুলি
আমরাও যে ছিলাম ওই পাহাড়ের অধিকারী।
আহা, ওই পাহাড় ছুঁতে গেলেই গায়ে লাগে গুলি!
বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
টিকে/