প্রথম কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন
বিকেলবেলা।
‘চ্যানেল পি’ টিম স্কুলের দিকে যায়।
তাদের হালকা চা-নাস্তা দেয়া হইছে।
হাফিজুর মাস্টার: আপনারা সন্মানিত লোক, আসবেন বইলা আসবেন না? ঢাকা থেকে আসছেন। আপনারা তো আমাদের মেহমান।
- আজিম স্যার গেল কই।
আজিম স্যার বাথরুমে। পিয়নকে পাঠায়। আজিম স্যার আসে। নিজের জামা ঠিক করতে করতে,
- আপনারা আসবেন জানলে একটু ভালো পোশাক আশাক পরে আসতাম আর কি। টিভিতে দেখাবে হাজার লোক দেখবে। আমাদের ছ্যাদাকুলের ইজ্জত!
হাফিজুর: হইছে তোমারে সুন্দর লাগতেছে আসো।
আজিম স্যার: ছ্যাদাকুল...
সানু সংশোধন করে দেয় ‘ছাদেকুল্লা’
আজিম স্যার: হ্যাঁ ছাদিকুল্লাহ্ তো এই স্কুলেরই ছাত্র...
আসলে ওর ব্যাপারে কী ভালো কইব কোনো স্যার কিছু খুঁইজা পায় না। সে ভালো ছাত্র আছিল না। ফেল করত আর পাখি মারত। কী বলবে? কোনো স্মৃতিই নাই তারে নিয়া। ক্লাসই করত না। স্মৃতি বলতে তারে পিটায়ছিল। সেটা বাদ রেখে বলে যায়।
তারপর কী হইল, টিভিতে প্রতিবেদন প্রচারের পর কী প্রতিক্রিয়া হইল সেদিকে না যাই। আমরা বরং সাতকানা গ্রামে থাইকা যাই। এরপরে সেখানে কী কী ঘটে—ঘটতেছে বিচ্ছিন্নভাবে যদি আমরা ড্রোন ক্যামেরা দ্বারা উপর থেকে কোনো ডিরেক্টরের চোখ দিয়া বা সানু ডিরেক্টরের চোখ দিয়াই যদি পর্যবেক্ষণ করি, সমস্তটা পাই
আজিম স্যার: ছাদিকুল্লাহ্ খুবই ভালো ছেলে আর কি। স্কুলেও তার কোনো ব্যাড রেকর্ড নাই। পড়ালেখা কম বুঝত। আমি বুঝাইতাম... আমি এক্সট্রা একটা কেয়ার নিতাম। কারণ তারে দেইখা আমার মনে হইছিল এইটা আগুন। একদিন কিছু করবে। খালি একটা ঘষার দরকার।
একবার অঙ্কে ফেল করল। আমার কাছে আসল...
আজিম স্যার গল্প বানাইতে থাকে... সানু ইশারা দিয়া নয়নরে ক্যামেরা অফ করতে বলে।
হুদাই ফুটেজ খায়া লাভ নাই।
‘আইচ্ছা ঠিক আছে’ বলে সানু বিদায় নিতে যায়।
আজিম স্যার: সব ঠিকঠাক ছিল?
সানু: একদম পারফেক্ট।
আজিম স্যার: আপনারা সন্মানিত লোক, হঠাৎ করে আসছেন খাতিরও করতে পারলাম না।
সানু: না না ঠিকাছে। ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলা গেলে ভালো হইত আর কি। তাদের মধ্যে ছাদেকুল্লার প্রভাব, তার ব্যাপারে এখনকার জেনারেশানের কী চিন্তা-ধারণা এগুলা তো জাতি জানতে চায়।
আজিম স্যার আফসোস করে, তা তো অবশ্যই। কিন্তু পুলাপান যে অণুপ্রানিত হবে বন্দুক পাবে কই? সমস্যা না!? কালকের দিনটা থাকবেন না? থাইকা যান। এক্কেবারে নিয়া যান। আমি রাইতের মইধ্যে সবাইরে জানাই রাখি। সবাই রেডি হয়া আসুক।
সানু: জানায় রাখার দরকার নাই। দেখি যদি থাকি আসব।
অঞ্চলের ইয়ং জেনারেশানের সাথে কথা হয়।
জাবেত: আমরা তো জানি সে ছুটিং করে।
সানু: হ্যাঁ শ্যুটিং করে।
রাম: না মানে নায়িকা লইয়া করে, গুণ্ডাদের গুলি কইরা মারে। নায়ক আর কই?
সানু: ওহ!
নয়নের ক্যামেরা কেঁপে ওঠে। সানু পিছনে ফিরে দেখে নয়ন হাসতে হাসতে ফ্রেম ধরতে পারে না।
সানু: নয়ন তুমি তোমার দায়িত্বে থাকো।
নয়ন: ‘জি ওস্তাদ’ বলে আবার পজিশনে ফিরে যায়। কিন্তু কিন্তু হাসির কারণে ফ্রেম কাঁপতে থাকে। তারপর ধুপ কইরা হাইসা দেয়।
সানু: সে নায়কই তো। শুট করে মানে গুলি করা খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে সোনা জিতছে। দেশের জন্য সন্মান আনছে। নায়ক না?
সবাইকে বোঝানোর পর তারা বুইঝা ফেলে।
- এই খেলা জীবনে ভাবি নাই। গ্রামের কেউ ভাবে নাই।
সানু: তো ছাদেকুল্লা কেমনে ভাবল? ছোটবেলায় কী খেলত সে?
সুজন: কাবাডি বালো খেলত কাবাডি।
রাম: হ তরে কইছে। এই বডি লইয়া কাবাডি।
(সানুর দিকে ঘুরে) - স্যার সে সাতচারা হেভি খেলত। স্কুল পলাইয়া আইসা সাতচারা মাতচারা খেলত। অবশ্য আমরাও স্কুলে কম যাইতাম।
সানু: সে তো ক্রিকেটারও হইতে পারত কী বলেন?
জাবেত: তা হয়ত। কিন্তু তারে লইত কে?
সবার মইধ্যে হঠাৎ সাতচারা খেলার একটা ধুন ওঠে। সানুদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। সানু: আপনারা খেলেন আমরা দেখি।
নয়ন শুট করে।
বিদায়পর্ব শেষ করে তারপর আবার কাদা পার হয়ে ওরা চলে যায়।
তারপর কী হইল, টিভিতে প্রতিবেদন প্রচারের পর কী প্রতিক্রিয়া হইল সেদিকে না যাই। আমরা বরং সাতকানা গ্রামে থাইকা যাই। এরপরে সেখানে কী কী ঘটে—ঘটতেছে বিচ্ছিন্নভাবে যদি আমরা ড্রোন ক্যামেরা দ্বারা উপর থেকে কোনো ডিরেক্টরের চোখ দিয়া বা সানু ডিরেক্টরের চোখ দিয়াই যদি পর্যবেক্ষণ করি, সমস্তটা পাই।
ব্যক্তিগতভাবে এবং সমিতিসূত্রে টাকা পায় যারা তাদের গলা সবচাইতে বড়। কুতুবের গলা বড়। সবচাইতে বড় ক্ষতি হয়া গেল ওইসময় গঞ্জে যাওয়া মিস্টারের। সে শুধু আইসা গল্প শুনতাছে। তার ক্রেডিট লয়া লইছে কুতুবে। আর কিশোর লেভেলে একটা হইমই উইঠা গেছে, যেমনে হোক একটা বন্দুক তো লাগে। আর নীরবে লারাচারা পইড়া গেছে মাইয়াদের মনে। সবার স্পৃহা ছ্যাদা কবে আইব গ্রামে। সেই আঁশ মিটাইতে বা পিরিত দেখাইতে কেউ কেউ ছ্যাদার বাপরে যেখানে পায় ধরে। কেউ কেউ ছ্যাদাদের বাড়ি যায়।
তারা আশা দেয়।
আসেন তো দেখি কী মচ্ছব হইতেছে।
ড্রোন পয়লা যায় ছ্যাদার পাওনাদার চাচার কাছে।
ছ্যাদার পাওনাদার চাচা ধইরা লইছে এই টাকা আর পাইত না। খুঁজতে গেলে উল্টা শরম। যেমনে সাংবাদিক, পুলিশ লইয়া ঘুরতাছে।
স্থান: ‘সাতকানা আলো সমিতি’।
বিপদে পইড়া কথা শুনতে হয় এলাকার ‘সাতকানা আলো সমিতি’র কালেক্টর কাম অ্যাডভাইজর কাম অফিসারনি উর্মি আপাকে। সে-ই টাকা দিছিল আর টাইমমতো টাকা তোলার কথা তার। সমিতির চেয়ারম্যান জুলমানের লগে তার আলগা পিরিতের কথা চাউর আছে তাই সে কিছু কইতে পারে না। সেই খোঁচা দিয়া ঝাড়ে একাউন্টেন্ট সুবল।
- এলা। এলা কী হইব?... লাটে উডুক সব। কেউ কোনো কাম করতেছে না, কোনো টাকা আসতাছে না। কেমনে কী? পরে যখন আটকায়া যামু কই যাইবা? পুলিশে দরলে তো বালই, তার আগে পাবলিকে ছিঁড়ালাইব।
উর্মি: এত অস্থিরের কিছু নাই। কবি দিয়া দিব কইসে, আমার দুলাভাইরটাও বিদেশ থেইকা টাকা পাঠাইয়া দিছে আসতে টাইম লাগতেছে। আর ছ্যাদা তো আইতাছেই।
সুবল: সব আইতাছে। সবখালি আইতাছে। এদিকে আমার ট্যাক খালি। ডেলি খানাদানা-অফিসের খরচ চলতাছে। আর জাহাজ ভইরা টাকা আইতাছে।
উর্মি জুলমান, সুবল, শ্যামাসহ সমিতির কজনরে বোঝায়, শুধু আইতাসে না, বড় সুযোগ আইতাছে।
- ছ্যাদার মোবাইলে কথা কইছি। ডোনেশান লমু।
সবাই কনভিন্স হয়। এরে ওরে ফোন কইরা পটানোতে উর্মি ফার্স্ট। এর লাইগা উর্মিরে এই দায়িত্ব দেয়া হইছিল।
এতক্ষনে জুলমানের গলা বড় হয়।
- বাহ্ উর্মি বাহ্। তুমি একটা মাল...বিকা। এইটা একটা ফুল আর কি...
কী সুবল, চা-সিঙ্গারা কিছু আইব নাকি? বুঝলাম না কিন্তু। তোমার কিন্তু মনোযোগ কইমা গেছে। এনার্জি লাগবে তো নাকি। ফুয়েল ছাড়া স্পিডের মধ্যে কেমনে থাকব? আর শোন উর্মি, তুমি ছ্যাদার লগে যোগাযোগ রাইখা যাও। আপডেট জানাইবা।
শেলীর দিকে যাই একটু।
স্থান: ডোবা আর ডিবার মাঝখানে মিলনস্থল।
শেলীর লাভার আব্দুল গিলানী তুফান ফুটবলার। আজ তাদের ম্যাচ ছিল বাঁশপাড়ার লগে। সে শেলীর লাইগা একটা চাম্পাক ফুল লইয়া হাজির হয়। এই ফুল টিপ দিয়া মধু খাওয়া যায়। শেলী কোনো কথা কয় না ডিরেক্ট অ্যাকশনে যায়,
- কয়টা গোল খাইছো?
তুফান: পয়লাই খারাপ কথা। গোল খামু তুমি ধইরাই নিছো।
শেলি: জিতলে এতক্ষণ! জিতলে মিছিল কইরা আইতা। ড্রাম পিটায়া যাইতা আমার বাসার সামনে দিয়া। কানের পর্দা ফাটায়া ফেলতা। কয় গোল খাইছো?
তুফান: এবার মাঠটা...
শেলি: কোনো অজুহাত না। আর কমু না, সোজাসাপ্টা জানতে চাই কয় গোল?
তুফান: এগারো গোল।
মাঠটা ডিলা আর চিনা পাত্থরে ভরা...
শেলি: এ-গা-রো-টা! পেট ভরছে!? আর জায়গা আছিল না?
তুফান: এই দুঃখের সময় কই তুমি সান্ত্বনা দিবা... খোঁটা দিতাছো।
শেলী, হায় হাসান, হায় হোসেন করতে থাকে।
- হায় আল্লাহ্ আমার বান্ধবীরা তো আমারে জ্বালায়া খায়ালবো। আমি কই যাইতাম... কার লগে সম্পর্ক করি...
তুফান: মানে কী? এসব কী?
শেলী: এসব কী? এগারোটা গোল খাইছো। আমার মান ইজ্জত কই। কারে তোমার কথা কমু। আচ্ছা, তুমি ফুটবল খেলো কিল্লাইগা... এইটা একটা খেলা! বাইশজনে মিলা একটা বলরে মলামলি। ছ্যাদা গুল্লি কইরা সব ছ্যাদা করে ফেলতেছে। গুলাগুলি করলেও তো এতদিনে ছুটিং করতে পারতা। সারা দুইন্না ফালাইতেছে তারে নিয়া... আহারে কী ভদ্র একটা পুলা। তার লগে ঠিকমত কথা কওন দূরে থাক পাত্তাই দিলাম না জিন্দেগিতে। আমার কপালে জুটছে তেরো গোল খাওয়া তুফান।
তুফান: এগারো।
শেলী: এই তুমি চুপ করো। আমার বাপ-মারে কি কইবা? ‘শেলীরে ভালোবাসি, আমি এগারো গোল খাইছি’।
তুফান: গোল আমি একলা খাইছি নি?
শেলী: সজ্ঞলে মিল্লা খাইছো। খুব ইজ্জত কামাইছো। গুষ্টি উদ্ধার করছো।
তুফান: তুমি কিন্তু বেশি করতেছো। তুমি যে পরীক্ষায় আন্ডা মারলা আমি তোমারে নিয়া ঠাট্টা মশকরা করছি?
শেলী: কী! আমি পরীক্ষায় আন্ডা মারছি সেই খোঁটা দেও! সেটা তো ছারে খাতা নিয়া ফেলছিল...
তুফান: আরে নিব না কী করব, ছায়ার ভিতর কইরা নকল নিছো... তখন যে তোমারে চিপায় নিয়া ছায়া-ব্লাউজ খুইলা নকল বাইর কইরলো... ছি ছি। তখন আমার ইজ্জত কই আছিল।
শেলী কাইন্দা দেয় পারলে, - কী?! তুমি আমার উইক পয়েন্টে খোঁচা দেও। মনের মইধ্যে এই...
তুফান: আরে রাখ, বহুতক্ষণ কইছো খালি শুনছি। এইবারও ওই আন্ডা পাইবা। এবারের আন্ডা আরো বড় হইব। আইছে...
শেলী কাঁদতে কাঁদতে চইলা যায়।
সাদিয়ার অবস্থান।
ছ্যাদার গর্বে গর্বিত শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসা ছ্যাদার পিয়া সাদিয়ার কী খবর?
সাদিয়া কাউরে কিছু বলতে পারে না ছটফট করে। সখিরা ছ্যাদা ভাইর গল্প করে সে শুনে, যত শুনে আরো শুনতে ভাল্লাগে। কইতেও পারে না সইতেও পারে না পুলকিত হয়। সাদিয়া শ্বশুরবাড়ি থেকে না বলে আনা জামাইর একটা ঘড়ি সুন্দর করে রোমান্টিক একটা প্যাকেট করে আলাদা করে রাখে। ছ্যাদা আসলে দিবে।
সাদিয়া আসছে শুনে রাজ্জাক নাম্বার যোগাড় করে ফোন দিয়ে বসে।
আননোন নাম্বার দেখে সাদিয়ার মনে হয় এটা ছ্যাদাই হবে। তার মন বলতেছিল ছ্যাদা ফোন করবে।
সাদিয়া: হেলো।
রাজ্জাক কথা কইতে পারে না। কিছুক্ষণ নীরব থাকে।
সাদিয়া আরো আপন করে বলে, হেলো কথা কও।
রাজ্জাক সাহস পায়, হেলো সাদিয়া।
সাদিয়া: আমি জানতাম তুমি ফোন করবা।
রাজ্জাকের কইলজা ধইরা যায়। ফোনটা কানের থেকে নামায়া বুকে ধরে।
রাজ্জাক: তুমি জানতা... কেমনে জানলা?
সাদিয়া: তোমারে স্বপ্নে দেখছি।
রাজ্জাক: কী স্বপ্ন দেখছো?
সাদিয়া হাসে বলতে পারে না।
রাজ্জাক: বলো না বলো না। তোমার নাকের দুলের কসম লাগে।
সাদিয়া: যাহ্। লজ্জা করে।
রাজ্জাক: এই যে আমি চক্ষু অফ করলাম। বলো তোমার ঠেং ধরি।
মনে মনে সাদিয়ার ফর্সা ঠেং কল্পনা করে উত্তেজিত হয় রাজ্জাক।
সাদিয়া: স্বপ্নে দেখছি, তোমার মাথার উপর ডাব রাইখা আমি দূর থেইকা বন্দুক দিয়া গুলি করতেছি।
উত্তেজনার মইধ্যে একটা গুলির শব্দে রাজ্জাক কল্পনা থেইকা বাস্তবে আসে।
রাজ্জাক: ডাব... বন্দুক! বন্দুক কেন?
সাদিয়া: মনে নাই একবার তুমি একবার আমাদের ডাব চুরি করতে গিয়া ধরা খাইলা পরে ডাবসহ পুকুরে পড়লা।
বলে খিখি করে বিশ্রিভাবে হাসে সাদিয়া। রাজ্জাক ভেবে পায় না সে কবে ডাব চুরি করল কবে পানিতে পুকুরে পড়ল।
তারপরেও সাদিয়া যখন কইতেছে সে ব্যাপারটা মাইনা নেয়।
সাদিয়া: জানো তোমারে টিভিতে দেইখা সবাই আমারে ক্ষেপায়।
রাজ্জাক: আমারে... তোমারে...
রাজ্জাক বুঝতে পারে গণ্ডগোল হয়া গেছে। তারে ছ্যাদা মনে করছে। সবখানে ছ্যাদা। তবুও তো সাদিয়া কথা কইতেছে। এই ভেবে কথা চালায়া যায় রাজ্জাক। পরে ঠিক করে নিবে।
রাজ্জাক: তুমি যে আমার লগে কথা কইতেছো তোমার জামাই জানলে কিছু বলবে না?
সাদিয়া: আরে ধুর, ওই খাটাশে জানলে তো। ওই যৌতুকখোরের সংসার করুম না আমি। আমার কী সুন্দর ভবিষ্যত আছিল। নষ্ট করছে এই খাটাশ। বিয়া করার লাইগা আমার পুলার অভাব আছিল। বাপ-মা জোর কইরা করায়া দিছে। কোনোদিন সুখি হইতে পারি নাই জানো।
ফড়ফড় কইরা বইলা যায় সাদিয়া।
- তুমি আমারে মনে রাখছো জান!?
রাজ্জাকের মাথা ঘুরায়।
সাদিয়া: আমি তুমারে কোনোদিন বুলি নাই চাঁদা, বিশ্বাস কর। তোমার লাইগা একটা গিফ রাকসি।
রাজ্জাক: আচ্ছা শুনো, আমি এখন রাখি। এখন গুলি করতে যাইতে হবে। পরে কথা হবে।
সাদিয়া: হ তুমি তো অনেক বিজি। খোদাহাফেজ।
রাজ্জাক ফোন রেখে কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর ভাবে মন্দ কী। কথা কইতে কইতে পরে বইলা দিয়ে ঠিক করে নেবে।
স্থান: বন্ধুদের ডেরা
সেদিকে আসতেছি। যাদের হক সবার আগে/সবচেয়ে বেশি সেই ইয়ার দোস্তরা কই?
ছ্যাদার আদতে কোনো দোস্ত আছিল না। জুনিয়ররা তারা তাদের দোস্ত দাবি করে কিন্তু তাদের গলা অনুচ্চ। গলার স্বর সবচেয়ে উচ্চ যে সিনিয়রদের তাদের ঠাঁট-বাটে টেকা দায়। তারা দাবা খেলে আর বলে ছ্যাদা তাদের ক্লোজ ফেরেন্ড। কবে তাদের সাথে খেলতে আসছিল, কেমন খেলত, কই কই ঘুরত এসব। যদিও ছ্যাদাকে কোনোদিন খেলায় নেই নাই। ছ্যাদার নাম্বার নিয়ে কল করে বসে জুয়েল। যাকে ছ্যাদা জুয়েল ভাই বলত।
জুয়েল ভাই: হ্যালো ছ্যাদা... ছ্যাদা তো?
ছাদেকুল্লাহ ‘ছ্যাদা’ শুনে যা-তা লেভেলের বিলা হয়। বুঝতে পারে সাতকানা থেকে কেউ।
জুয়েল ভাই: আরে ছ্যাদা... কেমন আছিস দোস্ত? ব্যস্ত দোস্ত? হ ব্যস্ত তো থাকবি দোস্ত। ভুলে গেছিস দোস্ত।
প্রত্যেকবার একবার করে দোস্ত। জুয়েলকে চিনতে পারে না সে।
জুয়েল ভাই: চিনতে পারিস নি? আরে দোস্ত জুয়েল...
নানা পরিচয়ের পর চেনার একটা ভান করে সে। জুয়েল ভাইয়ের কাছে আমিরের কথা জিজ্ঞেস করে। তার দোস্ত বলতে আরেক ফেল্টুস আমির।
জুয়েল ভাই: আরে ধুর। সে তো বাজারে শাক বেচে।
আমিরের ব্যাপারে কোনো গুরুত্বই দেয় না জুয়েল ভাই। এই আমির কাউরে কিছু কইতেই পারে না। কেউ পাত্তাই দেয় না।
জুয়েল ভাই কয়া যাইতে থাকে, তুই তো এখন বিখ্যাত। তোরে টিভিতে দেখায়। দুয়া করি দোস্ত আরো বড় হ। খালা-খালুরে ফোন দিস? ওদের সাথে যোগাযোগ রাখিস।
পিরিত দেখাইতে গিয়া মায়ের চাইতে মাসির দরদ বাইড়া যায়। তারপরও নিজের অঞ্চলের মানুষ, বাবা-মা এখনো ওখানে থাকে...
জুয়েল ভাই জানতে চায়, তুই কবে আইবি দোস্ত।
দোস্ত দোস্ত শুনে ছ্যাদা একটু অপ্রস্তুত একটু লজ্জিত হয়।
- এই তো ফেব্রুয়ারি একুশে আসার প্ল্যান আছে।
জুয়েল ভাই: কী বলিস দোস্ত। তোরে জন্য তো তোরণ বানাইতেছি। আয় আয় দেখ কী করি।
তার লগে বহুত কথা হইছে, তারে চিনার পর কী করছে ছ্যাদা, শুধু তারে কইছে কবে আইতাছে, কাউরে কইতে না করছে। এসব কয় বন্ধুমহলে। খবর পুরা গ্রাম হয়া যায়। সবার মইধ্যে চঞ্চলতা বিরাজ করে। এ খবর চাচার চায়ের দোকানে আসলে মিস্টার বলে, আমি তো আগেই বলছিলাম। মানে বলি নাই জানতাম কিন্তু বলতাম আর কি।
স্থান: জ্বলনবিল
বেং দল আর চেং দল মুখোমুখি। অমীমাংসিত পুকুর নিয়া কাইজ্জায় বেংদল চেংদলের খলিফা মিয়ারে মাইরা মাথা ফাঠায়া দিছে। খলিফা মিয়াও হুমকি দিছে ছ্যাদার বাপ তার আত্মীয়। ছ্যাদারে ছুডুবেলায় কোলে নিছি। ছ্যাদা র্যাব লইয়া আইতাছে। পুকুর তো পুকুর বেংদলের সবগুলার বাঙ্গি ফাঠানো হবে। তারা ছ্যাদার লগে যোগাযোগ করে।
এই যজ্ঞের মইধ্যে ছ্যাদা গ্রামে যাবার প্রস্তুতি লয়। শপিং করে। ককটেল খেয়ে রাতে মাতলামি, ফুর্তি করে। চুর হয়ে গাড়ি লইয়া বাইর হয়। সেইটাই হের কাল হয়।
পুলিশ ধরে।
সে গাড়িতে বসে চিৎকার করে,
- কে আমার গাড়ি আটকায় কে? সে জানে কার গাড়ি আটকাইছে... ওই ডাক হেরে...
গাড়ি থেকে নামে।
- কী? চেক করবা? তুমি কে? এই তোমার বাড়ি কই? কোন থানা?
ব্যাস।
গ্রামে ছ্যাদার খবরে মুখিয়ে থাকা গ্রামবাসি দেখে, ছ্যাদা মদ খেয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে পুলিশের কাছে বন্দুকসহ গ্রেপ্তার হয়। অনৈতিক, উছৃঙ্খল আচরণের জন্যে ফেডারেশান থেকে বরখাস্ত আর তাদের অজান্তে রাইফেল নিয়া কেন বের হলো তার কারণ দেখানো নোটিশ দেয়া হইছে। টিভি-টকশোতে বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক বিরোধীপক্ষ তার স্বর্ণ জয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সে বয়স লুকিয়ে অংশ নিছে বলে অভিযোগ ওঠে।
পর্যায়সারণী
১.
সবার আগে ব্লাস্ট করল মিস্টার।
- আমি আগেই কইছিলাম। আগেই কইছিলাম আগেই কইছিলাম...
চাচা ক্ষেপে, আজাইরা প্যাঁচাল রাখেন। বাকি টাকা দেন। চাইর মাসের বাকি এখাজার তিনশ’ সত্তুর টাকা।
২.
ছ্যাদার সিনিয়র বন্ধুবান্ধবরা জুয়েলকে বাসায় না পেয়ে তোরণের ওইখানে যায়।
ওইটার সুপারভাইজার মিশু ওদের পেয়ে বলে, ভাই আর কিছু টাকা লাগবে, টেপ কিনতে হবে।
- টেপের মায়েরে বাপ
তোরণের উপরে থাকা ওদের ডাক দেয়।
- ওই নাম। নাম। তোরণ বানাইতে হইব না নাম।
ওরা ভয়ে নামে না।
৩.
সমিতির উর্মি লক্ষাধিক টাকা লয়া লাপাত্তা। জুলমানরে বাইন্ধা রাখা হইছে।
৪.
রাজ্জাক সুযোগ পেয়ে সাদিয়ারে ফোন করে। সাদিয়ার মা ধরে, ওই ছ্যাদা আমার মাইয়ার সংসার ভাঙ্গোস। তুই আর কখনো সাদিয়ারে মদ খায়া মোবাইল করবি তো তোর বাপ-মার বিয়া ছুটায়া দিমু।
৫.
তুফানরা আবার গোল খেয়ে আসে। এবার মাত্র ৪ গোল খায়।
শেলী সাহস দিবে চিন্তা করে।
- গোল খাইছো তো কী হইছে... সামনে ভালো খেলবা আমি জানি। গুলাগুলির চাইতে বালো। তুফান কথা না বলে মুড করে বসে থাকলে শেলী হুট করে চুমা দিয়ে বসে। দিয়েই দৌড়।
৬.
স্কুলের পুলাপানরা মেলা থেইকা বন্দুক কিনছিল। মাস্টাররা সব জমা নিয়া ফালায়া দিছে। এসব ধ্বংসাত্বক নাফরমানি খেলা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।
৭.
ছ্যাদার বাবা-মা বা আত্মীয় পরিচয়দানকারী প্রকাশ্যে বের হতে পারে না। ছ্যাদার বাবা-মা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে—কারা যেন ছ্যাদার বাসার সামনে হাগু করে রাখে।
৮.
চেংদল আর বেংদলের হুমকি-হামলা উত্তেজনা চরমে পৌঁছে।
শুধু সাদিয়া শ্বশুরবাড়ি রয়ে যায় সাতকানায়। কোত্থাও যায় না। কারো অপেক্ষায় থাকে।
বেশ জল ঘোলার পর হালকা জরিমানা খেয়ে সবকিছু থেকে অব্যাহতি পায় ছাদেকুল্লাহ। তার ক্যারিয়ারের ক্ষতি করার জন্য করা অপবাদ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
বিরোধীদের মুখবন্ধ।
অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে সে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬