ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কুমির ও ব্রেকিং ব্যাড | সালেহ মুহাম্মাদ

গল্প ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৬
কুমির ও ব্রেকিং ব্যাড | সালেহ মুহাম্মাদ

মরা নৌকায় উঠলাম তিনজন। একজন নৌকাটি চালাতে থাকেন বইলা আমরা বাকি দুজন চুপচাপ বসে চালিত হই।

আমার মনে হয় ব্রেকিং ব্যাডের ঐ সিনটার কথা, যে ওয়াল্টার গুলি করল মাইকরে তারপর কেমন অবাক হয়ে গেল। আমার মনে হইতে থাকে এক্ষণ এরকম একটা কিছু ঘটব। তখন একজন বললেন যে,

- এই পানিতে বুঝলেন কুমির আছে।

আমি কুমির দেখার জন্যে, জল পানে তাকাই, নৌকা থেইকা ঝুঁকে। টলটলে ঘন সবুজ জল। পাতাপুতা চিপসের প্যাকেট বোতল ভাইসা ভাইসা ঘুরে। এসবের ভিতরে কই কই কুমির লুকায় আছে কে জানে। আমার মনে হইতে থাকে ব্রেকিং ব্যাডে ওয়াল্টার গুলি করছে মাইকরে। তারপর খুব অবাক হইছে। ধানমন্ডি লেকের এই পানি আমি আগেও কত দেখছি। লেকের পাড়ে বসে বসে তাকায় থাকছি পানির দিকে। কিন্তু নৌকায় বইসা মনে হইতাছে এই জল খুব জংলি ধরনের। পাড়ে বসে দেখা শান্ত পোষ্য জল না। জলের গভীরে গভীরে নানান কাণ্ড ঘইটা যাইতাছে। আমি কইলাম যে,



আমাদের আশেপাশে আরো লোকেরা নৌকা নিয়ে ঘুরছে। আমার তাদেরকে সুখি-সুখি লোকজন মনে হইল। আমি চিন্তা কইরা দেখলাম, চালকের ভিত্রে কোথায় জানি ব্রেকিং ব্যাডের মাইকের মতো একটা মিল আছে। অপরজন যে ছিলেন উনার সাথে কারো তেমন মিল পাইলাম না



- ফাউল কথা কেন যে বলেন না ভাই। আপনাকে কে বলছে কুমির আছে।
- কুমির আছে। আমি নিজে একদিন দেখেছি। আপনাদেরকে নৌকায় ওঠার আগে কই নাই যে আপনারা আবার ভয় পাবেন।

যিনি নৌকাটা চালাইতেছিলেন তিনি দেখলাম প্যাডেল করা বন্ধ রাখছেন। আমি খেয়াল কইরা দেখলাম যে, আমরা লেকের একদম মাঝখানে। চালক একটা সিগারেট ধরালেন। আমার মনে হইল এখন কিছু হইব। আমার নিজেরে লাগল ব্রেকিং ব্যাডের ওয়াল্টারের মতো। যে অদ্ভুত আগ্রহ নিয়ে ওয়েইট করতেছে ভয়ংকর কিছুর জন্য। অন্যজন চিৎকার কইরা উঠলেন,

- ঐ যে দেখলেন দেখলেন।
আমার বিরক্তি ঘটল। বললাম যে,
- আপনে নেশাটেশা করে আসছেন নাকি?
- আদ্ধুউর মিয়া। কুমির একটা ভেসে উঠে চলে গেল। দেখলেন না আপনারা।
চালক বললেন যে,
- এই পানিতে আপনার, কুমির থাকাটা সম্ভব না। তাছাড়া কুমির তো ডলফিন না যে ভেসে উঠেই ডুব দিবে। কুমিরের কায়দা ভিন্ন।
অপরজন বললেন যে,
- আপনেও তাইলে কুমিরের বিষয়ে আমাকে অপোজ করছেন?
আমি সুবিধাজনক একটা জায়গায় থাকার জন্যে তাড়াতাড়ি কইলাম যে,
- আমি কিন্তু অপোজ করতেছি না। কিন্তু আপনে আমাকে কুমির দেখাতে না পারলে ঠিক সাপোর্টও দিতে পারতেছি না।
আমরা তিনজন চুপ কইরা আছি। জলমধ্যে সূর্য প্রখর হয়। আমরা ঘামতে থাকি। চালক সিগারেট শেষ করে বলেন যে,
- ফিরে যাবেন? নাকি আরেকটু ঘুরবেন আপনারা।
অপরজন বললেন যে,
- আরেকটু থাকি। বাতাস আসতেছে কেমন একটা আমার খুব ভাল্লাগতেছে।

আমাদের আশেপাশে আরো লোকেরা নৌকা নিয়ে ঘুরছে। আমার তাদেরকে সুখি-সুখি লোকজন মনে হইল। আমি চিন্তা কইরা দেখলাম, চালকের ভিত্রে কোথায় জানি ব্রেকিং ব্যাডের মাইকের মতো একটা মিল আছে। অপরজন যে ছিলেন উনার সাথে কারো তেমন মিল পাইলাম না। অপরজনের ওপর আমার বিরক্তি ঘটল। উনাকে একদম ফালতু একটা লোক মনে হইতে লাগল।

অন্য নৌকার লোকেরা আমাদের ডেকে ডেকে নানান কথা জিগ্যেস করে। আমাদের মধ্যে একজন, তাদেরকে জানায় যে, এই জলে কুমির আছে, তাই একটু সাবধানে থাকতে। অপরজন বললেন, ধানমন্ডি লেকের পানিতে কুমির কী কারণে বংশরক্ষা করতে পারবে না।

আমার খুব অস্থিরতা হয়। মনে হয় ব্রেকিং ব্যাডের ঐ সিনটা ছিল যে ওয়াল্টার গুলি করছে মাইকরে আর তারপরে অরা বইসা আছে আর ওয়াল্টার বলতেছে, “আই এম সো সরি মাইক...”। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি যে এখন একটা মহান সময়, একটা কিছু ঘটব এই এক্ষণ।

ধানমন্ডি লেকের জলে ভুশ করে একটা কুমির ভেসে উঠল। ওটা আগাচ্ছে আমাদের নৌকার দিকে।



বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৬
টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।