ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

রমেন দাশগুপ্তের ‘একসঙ্গে’ প্রসঙ্গে

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৬
রমেন দাশগুপ্তের ‘একসঙ্গে’ প্রসঙ্গে

‘সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে, স্লোগানের শব্দে চাপা পড়ে গেছে জামালখানের অমলউদ্ভবা কুমারী ম্যারিয়েট চার্চের ঘণ্টা। মসজিদ মন্দির গীর্জায়, রাজনীতির ঠাঁই নাই/ তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি/ পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা।

’ চট্টগ্রামের জামালখানবাসী এমন স্লোগান একদিনই শুনেছে। একটিই দিন ছিলো যেদিন গির্জার ঘণ্টা ছাপিয়ে স্লোগান শোনা যাচ্ছিলো। রমেন দাশগুপ্তের ‘একসঙ্গে’ বইটিতে এমন দিনটির বর্ণনা রয়েছে। আর তা থেকে বুঝেই নেওয়া যায় তিনি লিখেছেন গণজাগরণ মঞ্চ প্রসঙ্গে।

রমেন দাশগুপ্তের এই বই কিন্তু কোনও রাজনৈতিক নিবন্ধ নয়, এট এক প্রেমের উপন্যাস। যাতে দেশপ্রেম ও নর-নারীর প্রেম দারুণভাবে মিশে গেছে।

বইটির এ পৃষ্ঠা ও পৃষ্ঠা ওল্টালে যেখানে সেখানে আটকে যেতে হবে। অনুচ্ছেদে অনুচ্ছেদে রমেন দাশগুপ্তের ভাষায়, ব্যকরণে ও বর্ণনায় আর ঘটনার ঘনঘটায় এমন আটকে যাওয়ার রসদ বর্তমান।

একটি মানব প্রেমের সম্পর্ক দেশের জন্য প্রেমের ক্যানভাসে উপস্থাপনে ঝুঁকি ছিলো। তবে তা মোটামুটি ভালোই উৎরে গেছেন রমেন দাশগুপ্ত।

বইটি লেখায় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এ প্রকাশিত রিপোর্টগুলো সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা রেখেছে বলেই মত রমেন দাশগুপ্তের। বাংলানিউজের এই স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বলেন, বলা যেতে পারে ওই রিপোর্টগুলোই ছিলো মূল অনুপ্রেরণা।

বইটি বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনকে তুলে দিয়ে তারেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন রমেন। চট্টগ্রামে বাংলানিউজের ব্যুরো কার্যালয়ে বইটি হাতে পেয়ে রমেন দাশগুপ্তের কাজের প্রশংসা করে এডিটর ইন চিফ বলেন, রমেনের লেখালেখি তার পছন্দ। তিনি মনে করেন সাংবাদিকতার পাশাপাশি সৃষ্টিশীল লেখায়ও রমেন তার দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে রেখে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। চট্টগ্রামের ব্যুরো এডিটর তপন চক্রবর্তীসহ অন্য কর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

কথা হচ্ছিলো রমেনের সঙ্গে তার উপন্যাসটি নিয়ে। তিনি বলেন, এটি স্রেফ মনের চাওয়া থেকে লেখা। গণজাগরণ মঞ্চ যখন ঢাকার আঙিনা থেকে আরও অনেক স্থানের মতো চট্টগ্রামেও ছড়ায় তখন সাংবাদিক হিসেবে নিয়মিত কাভার করতে গিয়ে মনের ভেতরে জেগে ওঠা অনেক কথা, অনেক ভাবনা ছিলো যা রিপোর্টে আনা সম্ভব ছিলো না। বইটিতে সে ভাবনাগুলো স্থান পেয়েছে। এটিকে পরিপূর্ণ একটি উপন্যাস বলতেও নারাজ রমেন দাশগুপ্ত। তিনি মনে করেন এটি ফিকশন আকারে একটি ঘটনার দলিল।

কতভাগ ঘটনা, কতভাগ ফিকশন? সে প্রশ্নে বললেন- ফিফটি-ফিফটি।

মধ্যবিত্তের মাঝে সমাজ বদলে দেওয়ার একটা সুপ্ত চেতনা থাকে কিন্তু তা ক্রমেই ঢাকা পড়ে জীবনের তাগিদগুলোর চাপে। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে তা আবার প্রস্ফুটিত হয়, বিষ্ফোরিত হয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যেমন ছিলো সময়ের প্রয়োজনে তেমনি গণজাগরণ মঞ্চও ছিলো এক সময়ের প্রয়োজন।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আন্দোলন নিয়ে এমনটাই ভাবনা রমেনের। সে ভাবনাকেই একটি উপন্যাসের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন যার নাম দিয়েছেন ‘একসঙ্গে’।

কোটি মানুষের একসঙ্গে হয়ে ওঠার এই কাহিনী বর্ণনায় সময়টিকে ধরে রাখারই চেষ্টা করেছেন তিনি। কোথাও তিনি সেসবও বলেছেন, যা ঘটেনি, তবে ঘটতে পারতো!

কেনো? সে প্রশ্নে বলেন, মনের ভেতরকার কিছু চাওয়া অবশ্যই থেকে গিয়েছিলো। এই আন্দোলন অনেক বড় ছিলো ঠিকই কিন্তু পরিপূর্ণ নিখুঁত ছিলো বলা যাবে না। উপন্যাসে তো সেই খুঁতের স্থান থাকতে পারে না তাই নাটকীয়তার পূর্ণমাত্রা দিতে হয়েছে।

উপন্যাসে সেখানটাতেই দুর্বলতা বলেও মনে করেন রমেন দাশগুপ্ত। বললেন, সাংবাদিকতার কারণে বাস্তবতার সঙ্গেই সম্পর্ক, বানিয়ে লেখার অভ্যেস নেই, ফলে ফিকশন সৃষ্টিও অনেকটা অসম্ভব হয়ে যায়। আর সে কারণেই ওইসব স্থানগুলো বর্ণনায় দ্যুতি হারিয়েছে। সত্যিকারের ঘটনাগুলো যেমন প্রাঞ্জল আর সাবলীল হয়েছে ফিকশনে তা গতিই হারিয়েছে। সমালোচকদের কাছে নিজের ভুল এভাবে নিজেই প্রকাশ করে দেন রমেন দাশগুপ্ত।

তবে সেটা তার বদান্যতা। প্রথম উপন্যাস হিসেবে রমেন দাশগুপ্তের ‘একসঙ্গে’ কে এক উত্তীর্ণ সাহিত্যকর্মই বলা চলে।

বাংলাদেশ সময় ১৮৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৬
এমএমকে     

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।