ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বাংলানিউজকে আলেহান্দ্রো গনসালেস

“বর্তমানে মঞ্চনাটকে ‘নির্দেশক ভাবনা’ অকেজো”

নাট্যকলা~শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
“বর্তমানে মঞ্চনাটকে ‘নির্দেশক ভাবনা’ অকেজো” আলেহান্দ্রো গনসালেস - ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আলেহান্দ্রো গনসালেস ইউনিভার্সিড্যাড ডেল ভ্যালি, কলম্বিয়া’র একজন অধ্যাপক। আর্টিস্টিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন বহুবছর।

তিনি মূলত ‘গোল্ডেন এজ থিয়েটার’র উপরে বিশেষজ্ঞ। পোস্ট স্তানিস্লাভস্কি নিয়ে তার কাজ ও গবেষণা। মাইকেল চেখভের অভিনয় পদ্ধতির বর্তমান উপযোগী চর্চা ও প্রয়োগ করছেন তিনি।

চিলি, চীন, রাশিয়া, কলম্বিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, মেক্সিকো, ভেনিজুয়েলা ও পেরুর অসংখ্য নাট্যোৎসবে অংশ নিয়েছে তার নাট্যকর্ম। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে একটি কর্মশালা করাতে বাংলাদেশে আসেন। বুধবার (১৬ মার্চ) টিএসসিতে প্রদর্শিত হয়েছে তার নির্দেশিত নাটক ‘দ্য ডায়ালগ অব দ্য ডগস’ (কুকুরের সংলাপ)।

প্রদর্শনী শেষে ল্যাটিন আমেরিকা, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের নাট্যচর্চা, নাটক প্রভৃতি নিয়ে কথা হয় গনসালেসের সঙ্গে। বাংলানিউজের পক্ষ থেকে কথোপকথনে অংশ নেন নাট্যকর্মী মেহেদী তানজির। এরই চুম্বক অংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

বাংলানিউজ: নাটক কেন করেন?
গনসালেস: কারণ, নাটকই আমার পরিচয় (Identity), আমার বিশ্বাস...।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশে কাজ করার অনুভূতি কেমন?
গনসালেস: অসাধারণ, অফুরান আতিথেয়তা। ড. ইস্রাফিল (ঢাবির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক) বন্ধু বটে। এছাড়া এখানে থিয়েটারের শিক্ষার্থী আর গ্রুপ থিয়েটারের নাট্যশিল্পীদের সঙ্গে কাজ করাটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। শিখেছি বিস্তর।

বাংলানিউজ: আপনি পৃথিবীর অনেক দেশে কাজ করেছেন। তুলনামূলকভাবে এ দেশের নাটক নিয়ে আপনার অভিমত কী?
গনসালেস: সমগ্র বিশ্বেই সময় এখন খুব দ্রুত দৌড়াচ্ছে। অভিনয়শিল্পীরা ধ্যান ভুলছেন। আর তারা স্বভাবজাত অলস। তবে এখানে আগ্রহ অফুরান দেখেছি। গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। ‘কুকুরের সংলাপ’ নাটকটি দেখে দর্শকের অভিব্যক্তি আমার বহুবছর মনে থাকবে।

বাংলানিউজ: এই প্রযোজনার নির্দেশক হিসেবে আপনার প্রধান সঙ্কট কী ছিলো?
গনসালেস: প্রথমত, ‘নির্দেশক ভাবনা’ এখন অকেজো। ‘নির্দেশক’ সম্বন্ধে বিংশ শতাব্দীর পূর্বের ধারণা আর বর্তমান ধারণায় বিস্তর ফারাক রয়েছে। এখানে- যাও, এভাবে তাকাও, কথা বলার আগে তিনবার লাফ দাও... নির্দেশকের অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে দাবা খেলা তাদের শিল্পবোধকে অপমান করা ছাড়া কিছু নয়। এ প্রযোজনায় সেই সঙ্কটের মোকাবেলাই প্রধান ছিলো। মাইকেল চেখভের অভিনয় পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে এ নাটকের ক্ষেত্রে।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশে অভিনয়শিল্পী ও নির্দেশকরা স্তানিস্লাভস্কি সম্বন্ধে পরিচিত কিন্তু মাইকেল চেখভ ততোটা নয়। স্তানিস্লাভস্কি ও মাইকেল চেখভের অভিনয় পদ্ধতির মূল পার্থক্য কোথায়? সংক্ষেপে বললেই চলবে।
গনসালেস: (হেসে) সংক্ষেপে বলতে গেলেও তো দু’ঘণ্টা লাগবে। মাইকেল চেখভ স্তানিস্লাভস্কির ছাত্র ছিলেন। স্তানিস্লাভস্কির অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ অভিনেতাও ছিলেন তিনি। কিন্তু চেখভের অভিনয় পদ্ধতি স্বতন্ত্র। স্তানিস্লাভস্কির অভিনয় পদ্ধতিতে অভিনয়শিল্পীর ‘অনুভূতি’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার পদ্ধতির মাধ্যমে অভিনয়শিল্পীকে তিনি ‘অনুভূতি’সম্পন্ন করে তুলতে চেয়েছেন। যেখানে মাইকেল চেখভের কাছে সংবেদনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। অনুভূতি দর্শকের আর সংবেদনশীলতা অভিনয়শিল্পীর।

বাংলানিউজ: ‘কুকুরের সংলাপ’ নাটকটিতে কিভাবে মাইকেল চেখভের অভিনয় পদ্ধতি কার্যকর হয়েছে?
গনসালেস: সমগ্র প্রক্রিয়াটি মাইকেল চেখভের অভিনয় পদ্ধতির সঙ্গে মিল রেখেই। এখানে অভিনয়শিল্পীরা সংবেদনশীল, অনুভূতিপ্রবণ নন। তাছাড়া ‘প্রদত্ত পরিস্থিতি’ (Given circumstances) সার্ভান্তেজের (দ্য ডায়ালগ অব দ্য ডগসের লেখক) সমগ্র শিল্পকর্ম। শুধুমাত্র এই নাটক নয়। স্তানিস্লাভস্কির অভিনয় পদ্ধতি হলে শুধুমাত্র যে নাটকে অভিনয় করা হচ্ছে সেই নাটকের প্রদত্ত পরিস্থিতিই গুরুত্ব রাখতো। এক্ষেত্রে আমাদের সার্ভান্তেজের প্রচুর লেখা পড়তে হয়েছে, বুঝতে চেষ্টা করতে হয়েছে সার্ভান্তেজকে। তারপর বুঝতে হয়েছে এ নাটককে। নাটক নির্দেশনা গবেষণাই বটে।

বাংলানিউজ: বর্তমানে বাংলাদেশে যারা মঞ্চ নাটক নির্দেশনা দিচ্ছেন তাদের সম্বন্ধে কিছু বলেন।
গনসালেস: নির্দেশক একজন ভালো দর্শক। তিনি কাঠামো তৈরি করবেন এবং সেই কাঠামো ধরে অভিনয়শিল্পীরা সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিচরণ করবেন। সরল উপস্থাপনায় গভীর বক্তব্য বলাটা কঠিন কিন্তু ধ্রুপদী উপস্থাপনাগুলো তাই। এটা আমার মত। বাংলাদেশের নির্দেশকরা তাদের মতো অনুযায়ী কাজ করবেন। প্রত্যেক শিল্পই ঐশ্বরিক।

বাংলানিউজ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
গনসালেস: বাংলানিউজ ও আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।