ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ফাগুনের ছাদে কয়েকজন আত্মহত্যাবিমুখ লোক | সালেহ মুহাম্মাদ

গল্প ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
ফাগুনের ছাদে কয়েকজন আত্মহত্যাবিমুখ লোক | সালেহ মুহাম্মাদ

খন প্রফেসরকে দেখা যাচ্ছে। ছাদে।


তিনি চেয়ারে বসেছেন। চেয়ারটি প্লাস্টিকের এবং নীল। প্রফেসর না থাকলে চেয়ারটি দেখা যেত না এই গল্পে। প্রফেসরকে চেয়ার অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা যায়। তিনি বললেন,
‘ব্রহ্মাণ্ডের মাঝে একবিচারে হিউমেন লাইফের তেমন কোনো গুরুত্ব নাই বুঝলা! যদি না আমরা নিজেরা এর উপর গুরুত্ব আরোপ করি। গুরুত্ব মাত্রই তাই আরোপিত। ’

তিনি তাকালেন ডানদিকে। সেদিকে একটি লেবুগাছ। লোহার বড় ড্রামে গাছটি বর্তমান। লেবুগাছের সামনে, ছাদে এখন আরেকজন লোককে দেখা গেলো। লোকটি কোটপরা।
 
নতুন লোকটি বললেন,
      ‘তাহলে আপনে বলছেন, সুইসাইড করাটা খারাপ কিছু  না?’
‘একবিচারে না। তোমার ভাল্লাগতেছে না, আর সমাধান কিছু তো নাই। ’

নতুন লোকটির বয়স কম। তার চুলগুলো সব কালো আর কোটটির রঙ গাঢ় বাদামি। বললেন,
‘খোরশেদ সাহেবও কি একইভাবে চিন্তা করেন?’
 
ছাদে এখন খোরশেদ সাহেবকে দেখা যাচ্ছে। তিনি খুব লম্বা। গায়ে পাঞ্জাবি। তিনি মনোযোগ দিয়ে ছাদের কার্নিশে বসা একটি কাক দেখছেন। ছাদে একটি কাক রয়েছে। আরও কাক ছিলো কিনা আমরা জানি না কারণ, খোরশেদ সাহেব তাদের প্রতি মনোযোগী হননি। তিনি প্রফেসরকে বললেন,
‘ব্রহ্মাণ্ডের গুরুত্ব আরোপিতই হইছে কারণ, এতে হিউমেন লাইফ একজিস্ট করে। আপনার থিওরি বা লজিক যাই বলেন না কেন, ওতে ভুল আছে। ’

প্রফেসর দূরে বিল্ডিংয়ের সারি দেখছিলেন। ফাগুনের মধ্যবর্তী সময়েও কেন দূরে কুয়াশা কুয়াশা হয়ে আছে এই নিয়ে তার চিন্তা হচ্ছিলো। এখন বিকেল। রোদে সোনালি ভাব প্রকাশিত হয়েছে। তার মনে হলো, ফাগুনটা মন্দ নয় এবার। তার কোনোকিছুকেই ভালো মনে হয় না। সর্বোচ্চ মনে হয়, মন্দ নয়। তিনি খোরশেদকে সাহেবকে বললেন কথাটা। খোরশেদ সাহেব বললেন,
‘মন্দ নয় আবার কী? আমার দেখা বেস্ট ফাগুন এইটা। ’
 
নতুন লোকটি বললেন,
‘তাহলে কি খোরশেদ ভাই সুইসাইড করবেন না?’
‘আমি তো কখনই সুইসাইডের কথা বলি নাই। সুসাইড ইজ ফর লুজার্‌স। ’
‘সুসাইড করার জন্য যে সাহস ও দর্শনের প্রয়োজন, আপনার সেটা নেই। ’

খোরশেদ সাহেব হাসলেন। বেশ জোরে। কাকটি উড়ে গেলো।
 
প্রফেসর লেবুগাছের ব্যাপারে আগ্রহী হলেন। নতুন লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, লেবুগাছটি কার, ছাদে আরও লেবুগাছ রয়েছে নাকি, বছরের কোন কোন সময় লেবু হয় আর ছাদের গাছটির লেবু তিনি কখনও খেয়ে দেখেছেন কিনা। নতুন লোকটির বিরক্তি ঘটে। তিনি আত্মহত্যা বিষয়ে চিন্তা করা লোক। তার চিন্তাজগতে লেবুগাছ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন এভাবে,
‘আমি লেবু খাই না। ’

কথাটি অসত্য। কাচ্চি বিরিয়ানি তিনি কখনও লেবু ছাড়া খান না। প্রফেসর বললেন,
    ‘আত্মহত্যা নিয়ে তুমি একটু আগে বললা না, দশর্ন আর সাহসের কথা- এটা ঠিক বলো নাই। মানুষের সব    দর্শনতত্ত্বগুলোর প্রবণতা হলো, তোমাকে জীবনের প্রতি আগ্রহী রাখা। নট ডেস্ট্রয়িং ইট। আর সাহস আর ইনসেনিটির ভিতর ডিফারেন্স আছে। ’

নতুন লোকটি দূরে তাকিয়ে বললো,
‘স্টোয়িকদের দর্শনে সুইসাইডের কথা আছে। জীবন একটা উৎসবের মতো। যার ভাল্লাগবে না, তার জন্য দরজা খোলা আছে। ’
‘ব্যাড ইউজ অব স্টোয়িসিজম। স্টোয়িকরা বলে, সব ধ্বংসাত্মক অনুভূতির জন্ম বিবেচনার ভুল থেকে। সুসাইড ধ্বংসাত্মক অনুভূতি। সুতরাং কোনো জায়গায় তোমার বিচারের ভুল হচ্ছে। ’

খোরশেদ সাহেব ছাদের কার্নিশে পা ঝুলিয়ে বসে বললেন,
‘আপনে আপনার প্রথম কথার কন্ট্রাডিকশনে গেলেন। অগুরুত্বপূর্ণ হিউমেন লাইফে দর্শন থাকনেরই তো কোনো মানে হয় না। ’
 
বাকী দু’জন নীরব। তারা আসলে এখন খোরশেদের সাহেবের প্রতি মনোযোগী। তিনি যেকোনো মুহূর্তে ছাদ থেকে পড়ে যাবেন বলে তাদের মনে হয়। সুক্ষ্ম উত্তেজনাবোধে তারা আক্রান্ত হন ফাগুনের বিকেলে। এই উত্তেজনা শুধু তাদেরই হয়। আশেপাশের বসন্ত আরোপিত ব্রহ্মাণ্ড অপরিবর্তিত থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।