‘চাঁদ তুমি ফিরে যাও… দেখো মানুষের খুনে খুনে রক্তিম বাংলা, রুপালি আঁচল রাখবে কোথায় বলো!’ – হ্যাঁ, শাওয়ালের রুপালি বাঁকা ঈদের চাঁদকে এভাবেই ফিরে যেতে বলেছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও শব্দসৈনিক রুপা ফরহাদ। চাঁদ রাতে এবং ঈদুল ফিতরের দিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সারাদিন বেজেছিলো অত্যন্ত আবেগময় অশ্রুসিক্ত এ গানটি- যা শুনে সেদিন চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি- কেঁদেছি শুধু কেঁদেছি।
সেই অগ্রহায়ণে হেমন্তের ঈদ-উল-ফিতরের কান্নার দিনটি ছিলো ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর, শনিবার- পাকিস্তানি হানাদারদের অত্যাচার আর নিপীড়নে বিপর্যস্ত সারা বাংলা। স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানি নরপশুদের সঙ্গে লড়াই করছে বীর বাঙালি- পাকিস্তানি ঘৃণিত সেনাবাহিনী ও তাদের নরাধম দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস, আল মুজাহিদ বাহিনী বাঙালির ওপর চালিয়ে যাচ্ছে নির্মম নির্যাতন। সেই মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বর্ষপঞ্জির স্বাভাবিক নিয়মে বাঙালির জীবনে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রত্যাশিত ঈদ এসেছিলো- যে ঈদের চাঁদ ছিলো বেদনার্ত নীল রঙের- এরকম বেদনার্ত ঈদের চাঁদ বাংলার মানুষ কখনও দেখেনি।
তখন আমি যুদ্ধে ছিলাম- চার পকেটওয়ালা সার্টের পকেটে গ্রেনেড ও গুলির ম্যাগাজিন এবং কাঁধে ঈদের চাঁদের মতো চকচকে বেয়োনেটসহ রাইফেল- এই অবস্থায়ই ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ পড়েছিলাম। অত্যন্ত আবেগময় গানটি শুনে সেদিন রণাঙ্গনে কেঁদেছি শুধু কেঁদেছি- কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের বেদনার্ত ঈদের স্মৃতিচারণ করে স্বাধীন বাংলাদেশে আজ আবার কেন কাঁদতে হলো? আবার কেন অশ্রুঝরা রক্তঝরা ঈদ এলো? একাত্তরের মতো আবার কেন বলতে হচ্ছে- ‘চাঁদ তুমি ফিরে যাও’! (কথা- শহীদুল ইসলাম, সুর: অজিত রায়, শিল্পী রুপা ফরহাদ)
‘চাঁদ তুমি ফিরে যাও
দেখো মানুষের খুনে খুনে রক্তিম বাংলা
রুপালি আঁচল কোথায় বাখবে বল।
দুঃখিনী মায়ের কোলে নেই সন্তান
শোকের পতাকা চোখে ফেটে যায় প্রাণ
মোদের শান্তি যারা নিলো কেড়ে
তাদের তরে আজ আমাদের
বারুদ হয়ে জ্বলতে দাও।
লুটেরা লুটাছে হাসি এই বাংলার
নেমেছি যে তাই রণাঙ্গণে চাই অধিকার।
মুক্তিতে হাসি ফুটবে যে দিন
সেদিন এসো খুশীর চাঁদ
আজকে মোদের লড়তে দাও।
চাঁদ তুমি ফিরে যাও
দেখো মানুষের খুনে খুনে রক্তিম বাংলা
রুপালি আঁচল কোথায় বাখবে বল। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৬
এসএনএস