ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

জাদুরাজ্যের রানি রাউলিং | সানজিদা সামরিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
জাদুরাজ্যের রানি রাউলিং | সানজিদা সামরিন

ছোট্ট মেয়ে জেসিকাকে ঘুম পাড়িয়ে, একমগ কফি নিয়ে বসে পড়তেন লিখতে। সে এক রহস্যময় কিশোর উপন্যাস।

জাদুর লহরীতে ডুব দিতেন হ্যারি পটার ফিকশন সিরিজের লেখক জে. কে রাউলিং। পুরো নাম, জোয়ান ক্যাথলিন রাউলিং। ১৯৬৫ সালের ৩১ জুলাই ইংল্যান্ডের গ্লুসস্টারশায়ারের ছোট্ট শহর ইয়োটে জন্ম নেন জনপ্রিয় এ লেখক।  

ছোটবেলা থেকেই বই পড়তে ও লেখালেখি করতে ভালোবাসতেন। কৈশোরে গল্প লিখতেন ছোট বোনকে পড়ে শোনানোর জন্য। লিখতে লিখতে একসময় লেখক হয়ে ওঠার প্রবল ইচ্ছে জাগে তার হৃদয়ে। চাইতেন একদিন সেরা লেখক হয়ে উঠবেন।  

লেখক হিসেবে ‍আত্মপ্রকাশ করার আগে বিভিন্ন চাকরির চেষ্টা করেন। কিন্তু কোথাওই মন টেকেনি। ব্যক্তিগত জীবনে মেয়ে জেসিকার চার মাস বয়সের সময় সংসারের ইতি টানতে হয় তাকে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর জেসিকাকে নিয়ে রাউলিং ইংল্যান্ড ফিরে আসেন।  

হ্যারি পটার উপন্যাসের জার্নি শুরু হয় ১৯৯০ সালে। রাউলিং পাতাল ট্রেনে চড়ে ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডন যাচ্ছিলেন। যেতে যেতেই হ্যারি পটার লেখার আইডিয়া তার মাথায় আসে। ক্ষুদে জাদুকর হ্যারি পটার। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর অসহায় ছোট্ট ছেলে হ্যারি পটারের ঠাঁই হয় তার খালার বাড়ি। অবহেলিত ছেলেটি এগারো বছরে পা দেওয়ার আগে জানতোই না সে নিজেই বিশ্বসেরা জাদুকর।

রাউলিংয়ের ভাষ্য, হ্যারি পটারকে নিয়ে যতোটা উদ্বেলিত ছিলাম, আর কোনো লেখাতে এতো উত্তেজনা কাজ করেনি।  

গভীর আচ্ছন্নতা থেকেই একটু একটু করে লিখতে শুরু করেন তিনি। মেয়ে জেসিকা যখন ঘুমিয়ে যেতো, তখন এডিবার্গের এক ক্যাফেতে বসে হ্যারি পটারের কাহিনী সাজাতেন রাউলিং।  


হ্যারি পটারের প্রথম সিরিজ ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন’ লেখা শেষ হয় ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৭ সালের ২৬ জুন যুক্তরাজ্যের ব্লুমসবেরি প্রকাশনী প্রকাশ করে বইটির। নিমিষেই পাঠকপ্রিয়তা পায় হ্যারি পটারের প্রথম গল্প। অথচ বইটি ছাপাতে জে. কে রাউলিংকে কম বেগ পেতে হয়নি। গুণে গুণে আটজন প্রকাশকের পেছনে ঘুরতে হয়েছে তাকে। সবার একই কথা। এমন বই চলবে না, ব্যবসায়ের ক্ষতি হতে পারে। অবশেষে ব্লুমসবেরির কল্যাণে হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন মুক্তি পাওয়ার পর বিগত প্রকাশকদের মুখ ভোঁতা হয়ে গেলো। বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগালো বইটি। অনুদিত হলো ৬৪টির বেশি ভাষায়। এরপর একে একে হ্যারি পটারের বাকি ছয়টি বই প্রকাশ পায়। ২০০৭ সালে হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজ প্রকাশের পর, এই সিরিজের সব কটি বইয়ের কপি বিক্রি হয়েছে সাড়ে চারশো মিলিয়নেরও বেশি।  

হ্যারি পটারের কদর এতো বেড়েছিলো যে, বই প্রকাশের আগের দিন থেকে দোকানে ভিড় লেগে থাকতো। হ্যারি পটার ছাড়াও জে. কে রাউলিং লিখেছেন ফ্যান্টাসটিক বিস্টস অ্যান্ড হোয়ার টু ফাইন্ড দেম, কুকোস কলিং, দ্য ক্যাসুয়্যাল ভ্যাকেন্সি, সিল্কওয়ার্ম, ভেরি গুড লিভস ও আরও কিছু বই।  

হ্যারি পটার সিরিজের জন্য তিনি একাধিক সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছেন। শুধু হ্যারি পটার সিরিজ ফিলোসফার্স স্টোনের জন্যই তিনি পেয়েছেন চারটি হুইটেকার প্লাটিনাম বুক অ্যাওয়ার্ড, তিনটি নেসলে স্মার্টিস বুক প্রাইজ, দু’টি স্কটিশ আর্টস কাউন্সিল বুক অ্যাওয়ার্ডস, উদ্বোধনী হুইটব্রেড বর্ষসেরা শিশুতোষ গ্রন্থ পুরষ্কার, ডব্লিউ এইচ স্মিথ বর্ষসেরা বই। এরপর  ২০০১ সালে হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার হিউগো পুরষ্কার পায়।

এছাড়াও আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন, নিউইয়র্ক টাইমস, শিকাগো পাবলিক লাইব্রেরি ও পাবলিশার্স উইকলিতে সম্পাদকের সেরা পছন্দ ও প্রস্তাবিত শ্রেষ্ঠ তালিকায় রয়েছে জোয়ান ক্যাথলিন রাউলিংয়ের বই।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
এসএমএন/এসএনএস


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।