ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘মানুষের জন্য শিল্প’ অনন্য উদ্যোগ ল্যাবএইডের

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
‘মানুষের জন্য শিল্প’ অনন্য উদ্যোগ ল্যাবএইডের

মানুষ কখনো শিল্পের কাছে যায়, কখনো শিল্পকে কাছে আনে, কখনো নিজের বলয়কে সাজায় শিল্পের আবহে। শিল্পের টানে কখনো কখনো তারা ছোটে প্রকৃতির কোলে। শিল্পের সেরা বাহন চিত্রকলা। শিল্পীর তুলিতে এভাবেই শিল্প জীবন পায়, এগোয়।

চিত্রকলায় বাংলাদেশও এগিয়ে। আমাদেরও রয়েছে বিশ্বমানের শিল্পী।

তাদের চিত্রকর্ম দেশে শিল্পের প্রাণদায়ী। তাদের তুলিতে আমাদের শিল্পও জীবন পায়, এগোয়।  

শিল্পের সাথে জীবনের সম্পর্কও প্রগাঢ়। আসলে জীবনের জন্যই শিল্প।

সত্যিই তাই ‘জীবনের জন্য শিল্প’। ঠিক এই নামেই নামকরণ হয়েছে শিল্পকর্ম নিয়ে একটি অসাধারণ আয়োজনের। যা সম্পন্ন হয়েছে ল্যাবএইড ফাউন্ডেশনের সহায়তায়-পরিচালনায়।
ল্যবএইড প্রকাশিত ‘জীবনের জন্য শিল্প’

যারা অবাক হচ্ছেন এই ভেবে যে- ল্যাবএইড, সেতো একটি হাসপাতাল মাত্র। ওষুধ কিংবা চিকিৎসা নিয়েই তাদের কারবার। তাদের জন্য বার্তা বাংলাদেশের চিত্রকলা নিয়ে এমন একটি কাজ করতে পেরে ল্যাবএইড গর্বিত।

যার আওতায় একের পর এক চিত্রকলার প্রদর্শনী সম্পন্ন হয়েছে। আর সেসব প্রদর্শনীর চিত্রকর্মগুলো সন্নিবেশ ঘটেছে একটি বইয়ে। যা ল্যাবএইড ফাউন্ডেশনের নামে প্রকাশিত হয়েছে। যার নামও রাখা হয়েছে ‘জীবনের জন্য শিল্প’ (art for life)।  

সত্যিই গর্ব করার মতো একটি কাজ। ল্যাব এইডের প্রধান ডাঃ এ এম শামীম সেই ঘোষণা দিয়ে বলেছেন ল্যাবএইড’র দৃঢ় বিশ্বাস, যে জীবন শিল্পের জন্য বাঁচে সে জীবন কখনোই বৃথা যায় না।

জীবনের সাথে শিল্পের গাঁটছড়া বাঁধিয়ে দেওয়ার এই কাজটি ল্যাবএইড কেবল কথায় নয়, কাজেও বাস্তবতা দিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে প্রথমে দেশের খ্যাতনামা চিত্রশিল্পীদের অর্ধশতাধিক চিত্রকর্মের প্রদর্শনী করেছে তিনটি আর্টক্যাম্পের আয়োজন করে। তার একটি বান্দরবানে, একটি সেন্টমার্টিনসে অপরটি মেঘনা নদীতে।

কারা ছিলেন এই চিত্রশিল্পীরা? তালিকাটি বড় হলেও নামগুলো গুরুত্ববহন করে তাই এখানে উল্লেখ করা হলো। এরা হচ্ছেন- আবু তাহের, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রেজাউল করিম, কালিদাস কর্মকার, হামিদুজ্জামান খান, আবদুস শাকুর শাহ, আবদুল মান্নান, বীরেন সোম, বনিজুল হক, মনসুর উল করিম, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, অলোকেশ ঘোষ, নাঈমা হক, ফরিদা জামান (পিএইচডি), তরুণ ঘোষ, নাসিম আহমেদ নাদভী, মোহাম্মদ ইউনুস, রনজিৎ দাস, আইভি জামান, সিদ্ধার্থ শংকর তালুকদার, গোলাম ফারুক বেবুল, ঢালি আল মামুন, আহমেদ শামসুদ্দোহা, সৈয়দ হাসান মাহমুদ, বিদ্যুৎ জ্যোতি সেন শর্মা, রোকেয়া সুলতানা, নাজমা আখতার, শিশির ভট্টাচার্য, দিলারা বেগম জলি, শেখ আফজাল হোসেন, ঋতেন্দ্র কুমার শর্মা, সমীরণ চৌধুরী, কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ, রাশেদুল হুদা, দিলীপ কুমার কর, প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধ, কারু তিতাস, শামসুল আলম আজাদ, বিপুল শাহ, ফজলুর রহমান ভুটান, শহীদ আহমেদ মিঠু, তাইয়েবা বেগম লিপি, মাহবুবুর রহমান, সালেহ মাহমুদ, শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, শর্বরী রায় চৌধুরী, নগরবাসি বর্মন, সুলেখা চৌধুরী, অঙ্কুল চন্দ্র মজুমদার, নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা, মোহাম্মদ হাসানুর রহমান রিয়াজ, আজমির হোসেন, তাহমিনা হাফিজ লিসা, ইয়াসমিন জাহান নুপুর, সাদিয়া শারমিন মনসুর, শাহানুর মামুন ও আরিফুল ইসলাম। মোট ৫৭ জন।
ল্যাবএইড ক্যাম্পে অংশ নেওয়া কয়েকজন বরেণ্য শিল্পী

ক্যাম্পগুলোতে শিল্পীরা ছবি এঁকেছেন, ইনস্টলেশন্স করেছেন। যার প্রতিটি কর্মেই ফুটে উঠেছে প্রাণ। মানুষের কাছাকাছি, প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে এই উপস্থাপনাগুলো ছিলো অনেক বেশি প্রাণবন্ত।

পুরো কাজটি (তিনটি প্রদর্শনী) সম্পন্ন করতে সব মিলিয়ে লেগে গেছে ছয়টি বছর। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫।

এরপর সবগুলো শিল্প কর্মকে সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে ‘জীবনের জন্য শিল্প’ নামের প্রকাশনায়। আধুনিক মানের এই প্রকাশনাটিও হয়ে উঠেছে একটি শিল্প। তবে এর আধেয় হিসেবে যে কেবল চিত্রকর্মগুলোর আলোকচিত্রই স্থান পেয়েছে, কিংবা ক্যাম্পগুলোতে শিল্পীদের কর্মব্যস্ততা তুলে ধরা হয়েছে, তা নয়। এতে ক্যাম্পগুলোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে লিখেছেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ও শিল্পী রবিউল হাসান।

তবে এই প্রকাশনাকে আরও সম্মৃদ্ধ করে তোলা হয়েছে একটি বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ দিয়ে। ‘চিত্রকলার বিবর্তনের ধারা ও আমার দেখা বিশ্বের সেরা দশ পেইন্টিং’ শিরোনামে এই নিবন্ধ লিখেছেন বরেন চক্রবর্তী। পেশায় চিকিৎসক এই স্বনামধন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ যে কতটা শিল্পবোদ্ধা, তার স্বাক্ষর তিনি রেখে গেছেন তার লেখনি ও শিল্পবর্ণনায়।

আর শিল্পকে ভালোবাসার সব প্রমাণ দিয়েছেন অপর চিকিৎসক ডা. এ এম শামীম। যার ঐকান্তিক ইচ্ছায় ও আত্মনিয়োজনেই বাস্তবায়িত হয়েছে বাংলাদেশের শিল্পকে ধরে রাখার এই প্রয়াস। আর প্রমাণিত হয়েছে জীবনের জন্যই শিল্প।

বাংলাদেশ সময় ০৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
এমএমকে      

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।