অভিভাবক কে? যে কোনো মানবসন্তান পিতৃহীন কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে মাতৃহীন হলে অনাথ হয়। অনাথ আমর্ম বেদনায় টের পায় তার মাথার ওপরকার ছায়ার গূঢ় তাৎপর্য।
১. বাঙালি জাতীয়তাবাদ : ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এ-জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি হয় বাঙালি জাতি এবং তার ভূখণ্ডের প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির বংশপরম্পরায় লালিত-চর্চিত-ব্যবহৃত জীবন্ত প্রতিভাসগুলোর সমবায়ে। তাই এ-ভূভাগের প্রাচীন ধর্মের যে সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গগুলো জনজীবনাচারে অঙ্গীভূত হয়েছিলো, তা-ই অনিবার্যরূপে অঙ্গীকৃত হয় জাতীয়তাবাদী চেতনায়। এর পরবর্তীকালীন কোনো ধর্ম-দর্শন এতে সংশ্লিষ্ট হবার আর প্রয়োজন পড়েনি। তুরস্কের কামাল পাশাও ওসমানীয় উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রাচীনতম তুর্কি ঐতিহ্য-ধর্ম-সংস্কৃতির শরণাপন্ন হন। ওসমানীয় শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত ভাষা বিতাড়িত করতে তিনি রোমান হরফে লিখন-পদ্ধতি প্রবর্তিত করেন। তাঁর স্বজাতি তাঁকে জাতির পিতা হিসেবে সমাদৃত করে। স্মরণ বাহুল্য যে, কাজী নজরুল ইসলাম তাঁকে নিয়ে কবিতা রচেন। তবে স্মর্তব্য, তৎকালে অগ্রসর হিন্দু মধ্যবিত্ত ও এলিট শ্রেণী ভারতবাসীর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে অংশত হলেও হিন্দু জাতীয়তাবাদী গণজাগরণে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা বিনোদ বিহারী চৌধুরীও আশা করি অস্বীকার করবেন না যে, উক্ত সংগ্রামে যোগ দিতে আসা হিন্দু তরুণ-যুবকদের গীতা পড়িয়ে শপথ নিতে হতো। এভাবেও বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণাটি বুর্জোয়ায়িক তো থেকেই যায়, সাম্প্রদায়িকতামুক্তও হতে পারে না।
২. ধর্মনিরপেক্ষতা : উপর্যুক্ত ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী ঐক্য সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভবের ফলে ভেঙে যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে শিক্ষায়-কর্মসংস্থানে-আর্থিক সুবিধায় হিন্দু মধ্যবিত্ত মুসলমানদের চেয়ে ৫০/৬০ বছর এগিয়ে থাকায়, এ ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তেরই অন্তর্গত ধর্মীয় পরিচয়গত অর্থনৈতিক ঈর্ষা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ঘটে এবং তা পরবর্তিতে সহিংস হানাহানিতে রূপান্তরিত হয়। ওদিকে ব্রিটিশ শাসকেরা জনগণের জাতীয় ঐক্য ভাঙতে এই হিংস্রতাকে কাজে লাগায়, যার চূড়ান্ত পরিণতি সাতচল্লিশের দেশভাগ। যে উদ্দেশ্যে ওই ভাঙনকে প্রশ্রয় দেয় ব্রিটিশ শাসক তাও অবশ্য ব্যর্থ হয়, উপনিবেশ ত্যাগ করতে হয় তাদের। এ তো সবারই জানা। এও অনেকের অজানা নয় যে, ইয়োরোপের সেই ক্যাথলিক অর্থোডক্স তথা খ্রিস্টিয় মৌলবাদ পশ্চিমের সাহিত্য ও বিজ্ঞান চর্চা কিংবা সৃজনশীলতাকে অসম্ভবরূপে ব্যাহত করে। ‘দ্য প্রিন্স’ গ্রন্থের লেখক ম্যাকিয়াভেলির ভূমিকা এই পরিপ্রেক্ষিত স্মরণীয় বটে। পশ্চিমা বিশ্ব ধর্মকে রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে পৃথক করে ব্যক্তিক পর্যায়ে স্থাপন করে ঠিকই, কিন্তু বলা বাহুল্য, পৃথিবীর অপর অংশসমূহে উপনিবেশ কায়েম কিংবা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায়, মিশনারি স্থাপনের মধ্য দিয়ে, ধর্মকে অংশত ব্যবহার করে। এখনো সৌদি আরবের মতো মুসলিম দেশের তেল কোম্পানি এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত মার্কিনিদের একটি অংশ, ওই দেশের কঠোরতম আইন পরোক্ষে উপেক্ষার মাধ্যমে, খ্রিস্টধর্ম প্রচারে নিয়োজিত রয়েছে। সলিমুল্লাহ খান প্রণীত ‘আদমবোমা’ (প্রথম প্রকাশ : মার্চ, ২০০৯; আগামী প্রকাশনী; এতে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রসঙ্গও আলোচিত) গ্রন্থখানি আরো পিলে চমকানো তথ্য দেয় : ইসরাইল রাষ্ট্রের গোপন পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের নাম রাখা হয়েছে ‘শিমশোন কৌশল (দ্য স্যামসন অপশন)’! এই স্যামসন বাইবেলে বর্ণিত এমন একটি ইহুদি চরিত্র যে কিনা আত্মঘাতের মাধ্যমে তিন হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। প্রকৃত ঘটনা খোদ পবিত্র কিতাব থেকে শোনা যাক : ‘(...) পরে শিম্শোন, মধ্যস্থিত যে দুই স্তম্ভের উপরে গৃহের ভার ছিল, তাহা ধরিয়া তাহার একটীর উপরে দক্ষিণ বাহু দ্বারা, অন্যটীর উপরে বাম বাহু দ্বারা নির্ভর করিলেন। আর পলেষ্টীয়দের (ফিলিস্তিনিদের) সহিত আমার প্রাণ যাউক, ইহা বলিয়া শিম্শোন আপনার সমস্ত বলে নত হইয়া পড়িলেন; তাহাতে ঐ গৃহ ভূপালগণের ও যত লোক ভিতরে ছিল, সমস্ত লোকের উপরে পড়িল; এইরূপে তিনি জীবনকালে যত লোক বধ করিয়াছিলেন, মরণকালে তদপো অধিক লোককে বধ করিলেন। ’ (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ; বাইবেল)
ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাহিনীকে ইহুদি জাতির মুক্তিলাভের রূপকল্পস্বরূপ প্রচারকল্পে বর্তমান ইসরাইলে শিমশোনের এই গল্প বিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু বিস্ময়ে চমকে উঠতে হয় এই কাকতালে যে, বাইবেলের ওই গল্পে শিমশোন নামের আদমবোমা বিস্ফোরণের আগে ‘...ছাদের উপরে স্ত্রী পুরুষ প্রায় তিন সহস্র লোক শিম্শোনের কৌতুক দেখিতেছিল। ’ আর, শিমশোনের হাতে ওভাবে হত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২০০১ সালের নাইন ইলেভেনে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে নিহতের সংখ্যার কাছাকাছি। আরেকটি আশ্চর্যের বিষয়, শিমশোন দুই হাতে ভূপাতিত করেন দুটি স্তম্ভ আর নাইন ইলেভেনে ধসে পড়ে যমজ টাওয়ার। তাছাড়া, আদমবোমা শিমশোন হত্যা করে ফিলিস্তিনিদের আর টুইন টাওয়ারে মারা পড়ে না একজন ইহুদিও!
মোট কথা, পশ্চিমের ধর্মনিরপেক্ষতা আর আমাদের লালন ফকিরের অসাম্প্রদায়িক মানবতা এক নয়।
৩. গণতন্ত্র : পশ্চিমা এই তন্ত্রের সাফল্য বাংলাদেশের মতো অঞ্চলসমূহে ধনতন্ত্রের বিকাশের ওপর নির্ভরশীল। এই তন্ত্র ব্যক্তির মুক্তির কথা বললেও কতিপয় শিল্পপতি কর্তৃক মুনাফা অর্জনের ভিত্তিতে ত্বরান্বিত শিল্পায়নের আওতায়, তথা শ্রেণীবিভক্ত সমাজে, ব্যক্তি একা কতোটুকু স্বাধীন হতে পারে? এ ক্ষেত্রে অসীম ব্যক্তিস্বাধীনতা স্বৈরাচারের নামান্তর মাত্র।
৪. সমাজতন্ত্র : পুঁজিবাদী বিকাশের এক বিশেষ পর্যায়ে এ-তান্ত্রিক আন্দোলন অনিবার্য, অন্তত মার্কস-এঙ্গেল্সীয় বিশ্লেষণ অনুযায়ী। আমাদের ভূখণ্ডে এর ব্যর্থতার প্রশ্নটি এ-গদ্যে প্রাসঙ্গিক নয়।
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষের মুসলিম মধ্যবিত্তের নেতৃত্বে পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হলেও বাঙালি মুসলমান অবশেষে অবতীর্ণ হতে বাধ্য হয় ভিন্নভাষী সেই মুসলিম রাষ্ট্রীয় মতার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বে। তারা ফিরে যায় সেই বাঙালি জাতীয়তাবাদে, ধর্মনিরপেতায়। পরিণামে এ-ভূখণ্ডের সকল সম্প্রদায়ের বাঙালি তাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করে নিজেদের। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠার অনতি কাল পর থেকেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি শুরু হয়। জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে সৃষ্টি করা হয় বিভ্রান্তি, ধর্মনিরপেতা তথা আপাত অসাম্প্রদায়িকতার স্থলে ক্রমান্বয়ে জঙ্গি রূপ পরিগ্রহ করে সাম্প্রদায়িকতা। কেবল এই পর্যায়ে ইতিহাসের ব্যতিক্রম ঘটে। জঙ্গিবাদ উত্থিত হয় অভিন্ন সম্প্রদায়েরই সুবিধাবঞ্চিত নিম্ন মধ্যবিত্ত বা বিত্তহীন একটি অংশ থেকে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সমাজতন্ত্র তো বটেই, এ দেশে গণতন্ত্রও দূর পরাহত হয়ে ওঠে একে একে, স্বজাতিরই মতাধর কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর হাতে। এতে জাতি যে ক্ষোভে-বিদ্রোহে-আন্দোলনে ফেটে পড়েনি তা নয়, স্বাধীন দেশে আলোড়ন উঠেছে একাধিকবার। কিন্তু তাও ব্যর্থতায় পর্যাবসান মেনেছে ওই গোষ্ঠী তথা বিশ্বপুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের হাতে। এভাবেই ক্রমান্বয়ে উপর্যুক্ত প্রাথমিক রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসমূহ ভেঙে পড়ে। আর, সমস্তকিছুর সমান্তরালে শামসুর রাহমান বিরোধিতায়-প্রতিবাদে অবিরল সক্রিয় থাকেন তাঁর বিনম্র স্বতন্ত্র কবিতাপ্রবাহে। রাহমান পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও আলোচিত তন্ত্রগুলোর সঠিক স্বরূপ অনুধাবনে যে সর্বদা সম হন তাও নয়। ‘আদমবোমা’ গ্রন্থভুক্ত ‘সাম্রাজ্যবাদের যুগে দুই বিশ্বের কবিতা’ নামের গদ্যে, শামসুর রাহমানের ‘স্যামসন’ (দুঃসময়ে মুখোমুখি কাব্যগ্রন্থভুক্ত) কবিতার, পাঠকদের অনেকেরই কাছে অভাবিতপূর্ব একপ্রকার শল্যচিকিৎসা সম্পন্ন করেন সলিমুল্লাহ খান। ১৭ শতকের ইংরেজ কবি মিল্টন অন্ধাবস্থায় নিজেকে স্যামসন (শিমশোন) ভেবে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয় লাভের আশা ব্যক্ত করেন। এদিকে আমাদের রাহমানও, তাঁরই অনুসরণে, উল্লিখিত কবিতার নামে ফিলিস্তিনি-হন্তারক সেই আত্মঘাতী স্যামসনের বীরগাথা রচেন। রাহমানের এই প্রায় অনুকারকের ভূমিকা উন্মোচনের মাধ্যমে সলিমুল্লাহ খান আসলে প্রধান আধুনিক বাঙালি কবিদের অনেকেরই অন্ধ পশ্চিম-মুগ্ধতার বিষয়টি শনাক্ত করে দেখান পশ্চিমা রাজনীতি বুঝতে তাঁরা কতোটা অপারগ। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, শামসুর রাহমান এক খাঁটি কবিসত্তার নাম। তিনি আপাদশির কবি এবং কেবল কবিই। তাঁর উপন্যাস ত্রয়ীও তাই অপ্রতিরোধ্যরূপে কাব্যিক।
কিন্তু ১৯৫২ থেকে নিয়ে আমাদের আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার অদ্যাবধি অনিঃশেষ সংগ্রামের কাব্যিক দলিল রাহমান কীভাবে রেখে যান তা, আমাদের জীবনের ঠিক মাঝখানে স্থাপিত ফলকপ্রতিম তাঁর কয়েকটি কবিতা, এই সীমিত পরিসরে কেবল শিরোনাম উল্লেখের মাধ্যমে, স্মরণ করতে হয় : ১. বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা; ২. আসাদের শার্ট; ৩. স্বাধীনতা তুমি; ৪. তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা; ৫. গেরিলা; ৬. উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ; ৭. একটি মোনাজাতের খসড়া; ৮. বুক তার বাংলাদেশের হৃদয় এবং ৯. কবি।
রচনার কালানুক্রম অনুসারে সাজানো (প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে গ্রন্থভুক্ত উপরের ৯-সংখ্যক কবিতাটি বাদে) উপর্যুক্ত শিরোনামের কবিতাগুলোও প্রমাণ করে ‘তিনি বাংলাদেশের সমান বয়সী’ (হুমায়ুন আজাদ)। তাঁর এই প্রকারের অনেক কবিতা রাজনৈতিক কবিতা অভিহিত হলেও, এবং, এগুলো বিবরণধর্মী হওয়া সত্ত্বেও, বিবৃতি কিংবা স্লোগানে পর্যবসিত হয়নি। কেননা শামসুর রাহমান তাঁর এরকম আরো অসংখ্য কবিতায় আরিক অর্থে বিপ্লব করেননি, একই সঙ্গে প্রতিবাদ এবং আর্তনাদ করেছেন, যে বিরুদ্ধতা-হাহাকারের উৎসে গ্রথিত থেকেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপরে আলোচিত স্তম্ভসমূহ, আশ্চর্য প্রাণপ্রাচুর্যে এবং মুক্তচিন্তার অটলতায়।
আমাদের আর কোনো কবির কবিতায় যে চলমান বাস্তবতা বাঙ্ময়তা লাভ করেনি তা নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাহমানকে অনন্য করে তুলেছে তাঁর কাব্যভাষা, যে-ভাষা অমোচনীয় প্রভাববিস্তারী হলেও সম্পূর্ণ অনুকরণীয় নয়। এ ভাষায় দেশীয় অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বৈশ্বিক অভিজ্ঞানও কল্লোলিত হয়েছে বলেও শামসুর রাহমান হয়ে ওঠেন আমাদের চেতনার অভিভাবক।
এই অভিভাবকত্বের সুবাদেই নিজের সম্পাদিত পত্রিকাগুলোতে কেবল নয়, তিনি তাঁর অন্তরেও আশ্রয় দেন তরুণ-তরুণতর কবিদের। সাপ্তাহিক ‘মূলধারা’ সম্পাদনাকালে এই অধমও প্রথমবারের মতো তাঁর মুখোমুখি হই ১৯৯০-এর ডিসেম্বরের এক অপরাহ্নে। তাঁর ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বুক পকেট থেকে নিজের যে পদ্যটি প্রথম বের করি, তা পাঠমাত্রই ‘ভালোই তো!’ ব’লে তিনি গ্রহণ করেন। তা সত্ত্বেও আমি দ্বিতীয় আরেকটি কবিতা বের করতেই প্রথমটির গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে আমাকে সংশয়াকুল মনে করেই হয়তো তিনি তা পড়তে চান না। কিন্তু দাদা সম্বোধনে আমার বিনীত অনুরোধে তিনি তা পড়েন এবং প্রায়-অশ্রুসিক্ত হন আর তাঁর সামনে উপবিষ্ট কবি ফরিদ কবিরকে পড়তে দেন এই ব’লে : ‘ফরিদ, এই কবিতাটি পড়ো। এতে জীবনানন্দের নাম আছে, নির্মলেন্দু গুণের নাম আছে আর আমার নাম আছে। ’ স্মরণীয় যে, তিনি নিজের নামটি শেষে উচ্চারণ করেন। ১৭ আগস্ট ২০০৬ তাঁকে হারাবার পর থেকে অভিভাবকশূন্যতার বেদনায় এখনো হঠাৎ আমি অশ্রুসজল হয়ে উঠি। তাঁর স্মৃতির প্রতি অশেষ শ্রদ্ধায়, প্রিয় পাঠক, চলুন, বিগত শতকের আশির দশকের দ্বিতীয়ার্ধে রচিত, অদ্যাবধি অপ্রকাশিত, এই ক্ষুদ্র আমার সেই কবিতাটি আমরা পড়ে দেখি :
অনুপ্রাস
দৃষ্টির প্রতিভাপুরে জমে-ওঠা হাটে রোববারে
ঘনবদ্ধ জনতার অনন্য মিতালি আর
জল-কর্দমের গন্ধে, গণকল্লোল এবং মৃত্তিকার সনির্বন্ধে
সটান জীবনানন্দ সুদূর নয়নে একা অন্তিম শয়নে। -
মাছ বিক্রয়ে নিমগ্ন নির্মলেন্দু গুণ, যেথা দাদখানি চাল কি নুন নিয়ত প্রবহমান।
ভিড়ে মিশে, হাট ঘেঁষে, চশমায়ও উদাস নেত্রে, আর হেঁটে যান আর্ত শামসুর রাহমান।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১২৩০, আগস্ট ১৭, ২০১০