ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নতুন আঙ্গিকের সূচনায় সেলিম আল দীনের ‘স্বপ্নরমণীগণ’ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
নতুন আঙ্গিকের সূচনায় সেলিম আল দীনের ‘স্বপ্নরমণীগণ’  ছবি: স্বপ্নরমণীগণ নাটকের অংশ। ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

ঢাকা: সেলিম আল দীনের নাটক ‘স্বপ্নরমণীগণ’ এবার মঞ্চে এনেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তাদের পরিবেশনার নির্দেশনায় ছিলেন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক আফসার আহমেদ। 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় গত মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। প্রয়াত সেলিম আল দীনের নাটক তারই উত্তর-প্রজন্ম কীভাবে মঞ্চস্থ করে সেটি দেখার জন্য নাট্যাঙ্গনের অনেকেই হাজির ছিলেন নাট্যশালায়।

শহুরে এক পর্যটক বেড়াতে যায় পাহাড়ে। স্থানীয় এক মাতাল পাহাড়ির কাছ থেকে সে উপহার হিসেবে পায় একটি পাথর। সেই পাথরটি নিয়ে সে ফিরে আসে শহরে এবং পাথরটি রেখে দেয় তার অ্যাপার্টমেন্টে। আর সেই পাথরটিই বিভিন্ন রাতে বিভিন্ন নারীর রূপে ফিরে আসে শহুরে এই পর্যটকের ঘরে।

সময়-নদীর অববাহিকায় নানা রঙে-রূপে আর রসে ঘটনা অথবা অনুঘটনায় লীন হয় মানুষ। সৃষ্টি হয় স্মৃতি। স্মৃতি থেকে ইতিহাস আর ইতিহাস থেকে পুরাণ। মানুষের আবেগ স্বাতন্ত্রিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা সাতটি গল্পই চালিত করে সেলিম আল দীনের ‘স্বপ্নরমণীগণ’।

ছবি: স্বপ্নরমণীগণ নাটকের অংশ।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর
রাত্রির আঁধারের সঙ্গে জায়গা বদল করে পাথরটি, গল্পের বাহনে নিয়ে যায় কাশ্মীর-আসাম। সে পথের সহযাত্রী হয়ে এক এক করে পরপর সাতটি রাতে উঠে আসে প্রজ্ঞাপারমিতা, রাধা-কৃষ্ণ, হারিতি, অপলা দেওয়ান-মদিনা, আস্কি এবং মারমা জনপদ।  

মূর্ত-বিমূর্ত কথামালার গীতল আর নৃত্যময় ভঙ্গিমা আঁচল পরায় গল্পের শরীরে। গল্প এগিয়ে যায় কুশীলবের কাঁধে ভর করে দর্শকের মনোভূমে। আর এভাবেই এগিয়ে যায় ‘স্বপ্নরমণীগণ’।

আফসার আহমেদের নির্দেশনায় নাটকটিতে প্রথম রাতে শহুরে ঘরে পাহাড়ি পাথরটি শরীর পায় রাধা রমণীর। তার থেকে ভেসে আসে নূপুরের ধ্বনি। সেই ধ্বনিতে ছুটে আসে কৃষ্ণও। এ পর্বে দেখা যায় তাদের প্রেমলীলাখ্যান।

কাজের চাপ থাকলেও পাথরকে ভোলা হয় না শহুরে সেই পর্যটকের। তাইতো ঘরের কোণায় জমা হয়ে থাকা বেলে পাথরের শরীর থেকে মধ্য রাতে বের হয়ে আসে জ্ঞান পরিপূর্ণ প্রজ্ঞাপারমিতা। সে রাঙিয়ে তোলে রাতের শরীর।

ঋক বেদ মন্ত্র রচয়িতা একমাত্র নারী কামনাবতী অপলাও বাদ পড়ে না এই পাথরের শরীর থেকে নিজেকে মর্ত্যে আনতে। সে স্তুতিজ্ঞান করে ‘কামের আড়ালে কেবলই থাকে প্রার্থনা’। এমনকি নারীকে মর্যাদা দেওয়া হলেও তা কেবল মন্ত্রেই থাকে বলেও রাতের তীব্রতাকে জানান দেয় সে। আর তাইতো তার ইচ্ছে হয় পাথরের দেয়াল ভেঙে সম্ভু বা কালীগঙ্গার শরীরে স্নান করতে।

ঠিক এই নারীদের মতোই পাথরের শরীর বেয়ে আরও উঠে আসে হারিতি, দেওয়ান মদিনা, আস্কি। উঠে আসে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর রমণীও। যা নৃত্যগীতের সমন্বয়ে নাটকটিকে করে তোলে বেশ উপভোগ্য।

মুখের সংলাপে যা বোঝানো যায় না, সেটি শরীরের ভাষায় চমৎকারভাবে বর্ণনা করা যায় থিয়েটারে। এই নাটকেও আঙ্গিক অভিনয়ে বেশ কিছু ইমেজ নির্মাণ করতে চেয়েছেন নির্দেশক। নাটকের সংলাপ এবং নৃত্যগীতের বয়ান মুগ্ধ করেছে। আলাদাভাবে দৃষ্টি কেড়েছে শিল্পীদের বয়স।

ছবি: স্বপ্নরমণীগণ নাটক পরিবেশন শেষে শিল্পী-কলাকুশলীরা।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মঞ্চায়ন প্রশংসা পেলেও নাট্যশালা থেকে বেরোতে বেরোতে দু’একজনকে বলতে শোনা গেল, এখানে পরিপক্ক শিল্পীদের অভিনয় অবশ্যই আরও বেশি মনোমুগ্ধকর হতো।

তারপরও নাটকের তরুণ কুশীলবদের সবার চোখে-মুখে হৃদয়জয়ের চেষ্টা বোঝা গেল বেশ। নজর কেড়েছে বেশ ক’জনের নৃত্যগীতও।  

পুরো পরিবেশনায় একটি চরিত্র যখন ফুটিয়ে তোলা হচ্ছিল, তখন অভিনয়শিল্পীই যেন আবার রূপ নিচ্ছিল বিশ্লেষকের ভূমিকায়। ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে ইতিহাস বর্ণনায় উঠিয়ে আনা হয়েছে সাত কালের সাত নারীকে। বর্ণনাত্বক নাটকের বিপরীতে এটি সাজানো হয়েছে নৃত্যগীতে।  

সব মিলিয়ে নতুন একটি আঙ্গিক সূচনা করে দর্শ-শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়েছে সেলিম আল দীনের ‘স্বপ্নরমণীগণ’।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
এইচএমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।