ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সাধারণেও অসাধারণ কণ্ঠশীলনের ‘যাদুর লাটিম’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৭
সাধারণেও অসাধারণ কণ্ঠশীলনের ‘যাদুর লাটিম’ ছবি: ‘যাদুর লাটিম’ নাটকের একটি দৃশ্য

ঢাকা: অদ্ভুতুড়ে কাহিনীর সঙ্গে বর্তমান বিশ্বের প্রবাহমান ঘটনাবলীর সাযুজ্য ফুটিয়ে তুলতে কল্পনা ও বাস্তবতার মিশ্রণে ঢেলে সাজানো হয়েছে নাটকটি। এক ঝাঁক তরুণ নাট্যকর্মীর প্রয়াসটি সার্থক করতে নির্দেশক মীর বরকতসহ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন সব কলাকুশলী। নাটকের দৃশ্যগুলো দর্শকদের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপনই তার প্রধান প্রমাণ।

কথা হচ্ছে কণ্ঠশীলন’র অষ্টম প্রযোজনার মঞ্চনাটক ‘যাদুর লাটিম’ নিয়ে। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) নাটকটি মঞ্চস্থ হয়ে গেল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে।

‘যাদুর লাটিম’ নাটকটি এক কল্পিত নগরের ইফরিদ-কুফরিদ নামের দুষ্টু জ্বীনের গল্প হলেও সমসাময়িক বিশ্বের বাস্তব অবস্থার বাইরে কিছু নয়। মানুষের শিরা-উপশিরায় ঘুরে বেড়ানো ইফরিদ আর কুফরিদ জনমনে কেবল সন্দেহ ও অবিশ্বাসের বিষ ঢোকায়। এছাড়া ধর্মের ভুল ব্যখ্যা দিয়ে নগরজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে থাকে তারা। নগরের গভর্নর কালো জাদুমন্ত্র দিয়ে জ্বিন ইফরিদকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজস্বার্থে ব্যবহার করে। একইসঙ্গে তার অনুগত পুলিশপ্রধানকে দিয়ে সমস্ত হীনকর্ম বাস্তবায়ন করে।

অন্যদিকে জ্বিন কুফরিদ তিন হাজার বছর বন্দি থাকে যাদুর পাত্রে। পুলিশপ্রধান গামাসের সহায়তায় কুফরিদ বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেখে তার দুষ্টু বন্ধু ইফরিদ গভর্নরের হাতে বন্দি। গভর্নরের হাত থেকে তার মুক্ত হবার একমাত্র উপায় হচ্ছে গভর্নরের অপঘাতে মৃত্যু। শুরু হয় দুই জ্বিনের চক্রান্ত। সেই চক্রান্তের বলি হয় ব্যবসায়ী সানান, কোটিপতি কারাম, হামদানি, সালিম এবং এক তরুণী। ছবি: ‘যাদুর লাটিম’ নাটকের একটি দৃশ্যগভর্নর ও পুলিশপ্রধানের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। এদিকে ইফরিদ কালো জাদু থেকে মুক্ত হয়ে কুফরিদকে নিয়ে আরও বেপরোয়াভাবে নগরে অনাসৃষ্টি করতে থাকে। এদিকে পুলিশপ্রধানও কালো যাদু থেকে মুক্ত হতে না পেরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তবু শেষ রক্ষা হয় না। ইফরিদ-কুফরিদরা বহাল তবিয়তে থেকে যায় সমাজে, রাষ্ট্রে, পৃথিবীতে। কখনো কখনো দুষ্টু গভর্নরের হাতের পুতুল হয়ে অদৃশ্য সব অপকর্ম ও অনাসৃষ্টি করে বেড়ায় কালো পোশাকে রাতের অন্ধকারে। তারা থেকে যায় সবসময়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

নগরীর মেহেরজানের সঙ্গে পুলিশপ্রধান আর গভর্নরের প্রেম, গভর্নরের তিন বউয়ের বন্ধুত্ব, গভর্নরের সঙ্গে তাদের রোমান্টিকতা, আর নগরীরর বিভিন্ন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এক রোমান্টিক আঙ্গিকে এগোতে থাকে ‘যাদুর লাটিম’ নাটকের একেকটি দৃশ্য।

নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে কোরিওগ্রাফিও। অন্তত বিভিন্ন দৃশ্যের শেষে দর্শকদের হাততালি ছিলো তারই স্তুতি। এছাড়া অভিনয়ের দিক থেকে প্রধান চরিত্রগুলোর কুশলীরা যেমন বোদ্ধা শিল্পীর পরিচয় দিয়েছেন, ঠিক তেমনি অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন নাটকটির সহযোগী চরিত্রের কুশলীরাও। সুলতান, চিকিৎসক, কোটিপতি কারাম, নাপিত উগারসহ বিভিন্ন পাহারাদার চরিত্রের পরিবেশনার সময় দর্শকের তালি তারই বড় প্রমাণ ছিল যেন।

নাটক শেষে দর্শক-শ্রোতা যেমন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন, তেমনি বলেছেন দু’একটি গঠনমূলক কথাও। যেমন-- নাটকটির কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিনেতাদের আবেগটা প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি ছিলো। সংলাপগুলোও ছিল অত্যন্ত সাধারণ। অ্যাকশনের জায়গাগুলোতে ক্লাইম্যাক্স বা বাঁক আরও একটু বাড়ানো যেত।  নগরীরর সব প্রধান চরিত্রের মৃত্যু হলেও জ্বিনদের কোনো সুরাহা না হওয়াটা শেষ অবধি মেনে নেওয়ার মতো ছিল না।

‘যাদুর লাটিম’ উপভোগে মুগ্ধ দর্শকদের মতে, নাটকটির পরিবেশনায় মঞ্চসজ্জা, আলোকসজ্জা, পোশাক, সংগীত, রূপসজ্জা ছিলো অত্যন্ত চমৎকার। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর গল্পের মধ্য দিয়ে মঞ্চায়ন হয়েছে এই যাদুর লাটিম। যা সাধারণ হয়েও ছিল অসাধারণ এবং এক কথায় মনের খোরাক।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৭
এইচএমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।