ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রকৃতি, প্রাণ ও জীবনবোধের মননশীলতা জাতীয় জাদুঘরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
প্রকৃতি, প্রাণ ও জীবনবোধের মননশীলতা জাতীয় জাদুঘরে গ্যালারি ঘুরে ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: দুপুরের শেষ রোদে হঠাৎ করেই বৃষ্টি নামলো। সেই বৃষ্টিতেই ভিজতে ভিজতে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে উঠে এলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান। মাথা থেকে বৃষ্টিজল ঝেড়ে ফেলে মনোযোগী হলেন গ্যালারির দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলোর দিকে।

শুধু আবু সুফিয়ান নয়, সোমবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় জাদুঘরের এই গ্যলারিতে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে চিত্রকর্মের দর্শক হয়েছেন আরো অনেকেই। শিল্পী শক্তি পদ হালদার এবং শিল্পী মো. ইলিয়াস খানের একক চিত্র প্রদর্শনীর শেষদিন তাই রোদ-বৃষ্টিতেও ছিল জমজমাট; যা শুরু হয় গত ১৯ আগস্ট (শনিবার)।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা বিভাগের উপ-কিপার (চলতি দায়িত্ব) শিল্পী মো. ইলিয়াস আলী। একই প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের সহকারী কিপার শিল্পী শক্তি পদ হালদার। আর এই দুই গুণী শিল্পীর চিত্রকলা নিয়েই জাতীয় জাদুঘরে আয়োজন করা হয় একক চিত্র প্রদর্শনীর।

নিজের আঁকা ছবি দেখছেন শিল্পী শক্তি পদ হালদারশিল্পী শক্তি পদ হালদারের ‘প্রকৃতি ও প্রাণ’ শিরোনামে এ প্রদর্শনীতে স্থান পায় ৩৭টি চিত্রকর্ম। যাদের সবগুলোরই প্রধান উপজীব্য বিষয় প্রকৃতি। বসন্ত, নিসর্গ, প্রকৃতি ও প্রেম, পরিস্থিতি, অনুভব, জীবনের উৎসসহ প্রকৃতির আরো বিভন্ন দিক রং-তুলিতে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন কাগজ এবং ক্যানভাসের অ্যাক্রেলিক ও রং পেন্সিলের সাহায্যে।

ছবিগুলো সম্পর্কে শিল্পী শক্তি পদ হালদার বলেন, আমার কাছে গ্রাম ভীষণ প্রিয়। অপরদিকে প্রকৃতিও ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্নভাবে। এই দুটো বিষয় মাথায় রেখেই মূলত ছবিগুলো করা হয়েছে। প্রকৃতির যে একটা সৃজন আছে, সেই সৃজনের আলাদা একটা সৌন্দর্য এবং শক্তি আছে, আমি মূলত সেগুলোকেই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাইতো বসন্ত এতো সুন্দর, প্রকৃতি এতো রঙিন!

নিজের আঁকা ছবি দেখছেন শিল্পী মো. ইলিয়াস খান। অপরদিকে সাধারণ মানুষের জীবনের দুঃখ-কষ্ট আর আধ্ম্যাতিকতা তুলে ধরেছেন শিল্পী মো. ইলিয়াস খান। তার ‘একক প্রদর্শনী ২০১৭’ তে ঠাঁই পাওয়া কাগজে অ্যাক্রেলিকের বাউল, প্রতিবিম্ব, পাহাড়ে প্রকৃতি, ভীতি, রবিরশ্মি, প্রতীক্ষাসহ ২৩টি ছবি যেন তারই প্রতিফলন।

প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ছবিগুলো সম্পর্কে এই গুণী শিল্পী ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি বলেন, আমি সাধারণ মানুষের জীবনবোধটা খুব কাছে থেকে দেখে সেটাই আমার ছবিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এতে অধিকাংশ ছবিই যেন বিমূর্ত অভিমুখের। এছাড়া নীল রঙের প্রাধান্য রয়েছে জীবনের দুঃখ আর বেদনাগুলো বোঝাতে।

গ্যালারি ঘুরে দর্শনার্থী আবু সুফিয়ান জানান, সবগুলো ছবিই অনেক চমৎকার। সবগুলোই যেন প্রকৃতি এবং জীবনবোধের খুব কাছ থেকে নেওয়া।  

শিল্পী শক্তি পদ হালদারের ছবি। আর এসব ছবি প্রশংসার দাবিদার বলে মনে করেন আরেক দর্শনার্থী ফৌজিয়া অনন্যা।

দুই গুণী শিল্পীর চিত্রকলা প্রসঙ্গে শিল্পী হাসেম খান বলেন, শক্তি পদ হালদারের বর্তমান প্রদর্শনীতে তার চিত্রকলার সৃষ্টি ও সমাবেশ একটি চমৎকার নিজস্ব আবহাওয়া তৈরি করতে পেরেছে, যা শিল্পামোদী এবং সাধারণ দর্শককে মোহিত করবে। অপরদিকে শিল্পী ইলিয়াসের চিত্রকর্ম প্রাচ্যকলা ও বাংলার শিল্পধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত। রং, রেখা, বিষয় নিয়ে নানারকম নিরীক্ষায় তার অনুসন্ধিৎসু বোধ অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য।

 শিল্পী মো. ইলিয়াস খান এবং শক্তি পদ হালদারপ্রদর্শনী নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে একটি সময় গেছে যখন শিল্পীরা ক্যামেরার কাজ বন্ধ রেখে রং ও রেখার কাব্য নির্মাণ করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। বিমূর্ততাই হয়ে উঠেছিলো আধুনিক অংকনশৈলীর প্রধান নিয়ামক। শক্তি পদ হালদার এই ঘরানারই একজন শিল্পী। উলম্ব বর্ণচ্ছটায় তিনি ধারণ করতে চেয়েছেন জীবন ও প্রকৃতির অন্তর্নিহিত বর্ণপ্রবাহকে। যেখানে নীল ও কালোর প্রতি পক্ষপাতিত্ব দৃষ্টিগ্রাহ্য বটে, কিন্তু এটাও লক্ষ্যণীয় যে, তিনি একদিকে ‘ঝড়’ এবং অন্যদিকে ‘বসন্ত’ এর ছবিও এঁকেছেন।

অপরদিকে শিল্পী ইলিয়াস খানের চেতনায় যুগপৎ ক্রিয়াশীল বাস্তব ও অবাস্তবের দ্বন্দ্ব। বাস্তবতা তার ছবিতে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে অবাস্তব কিংবা কখনো কখনো পরাবাস্তবের কুয়াশা ভেদ করে। শিল্পীর স্বীয় অভিজ্ঞতাকেই ধারণ করতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা জারিত হয়েছে মননশীলতায়। ফলে তার ছবি লাভ করেছে একটি বিমূর্ত অভিমুখ। এটি শিল্পী ইলিয়াস খানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলা যায়। বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।