মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে দশমবারের মতো ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ গবেষণা ও নাটক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্য এবং শিশু-কিশোর সাহিত্য- এই পাঁচটি বিভাগে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এ বছর কবিতায় ‘জুমজুয়াড়ি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য মিজানুর রহমান বেলাল ও ‘নিশিন্দা পাতার ঘ্রাণ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য হোসনে আরা জাহান, কথাসাহিত্যে ‘এই বেশ আতঙ্কে আছি’ গ্রন্থের জন্য তাপস রায়, প্রবন্ধ, গবেষণা ও নাটকে ‘নৃত্যকী’ গ্রন্থের জন্য আলতাফ শাহনেওয়াজ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের ‘অজানা ভাষ্য’ গ্রন্থের জন্য মামুন সিদ্দিকী এবং শিশু-কিশোর সাহিত্য বিভাগে ‘হরিপদ ও গেলিয়েন’ গ্রন্থের জন্য রাজীব হাসান ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক’ পুরস্কারটি পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সাহিত্য পত্রিকা কালি ও কলম-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সভাপতিত্বে এ সভায় অতিথি হিসেবে ছিলেন ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র গবেষক ও প্রাবন্ধিক মার্টিন ক্যাম্পসন ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
মার্টিন ক্যাম্পসন বলেন, আজকের সমাজে তরুণরা লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লিখছে, কিন্তু ক’জনেই বা লেখক হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে চায়? আজকের তরুণরা লেখালেখির মাধ্যমে সমাজসেবা করতে চাইছে, সেটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। সমাজের জন্য সে কঠিন কাজটির বড় প্রয়োজন রয়েছে।
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, যে কোনো পুরস্কার আনন্দদায়ক, সে সঙ্গে দায়িত্ববোধ তৈরি করে। আজকে যারা পুরস্কার পেলো, তাদের কাছ থেকেও আরো বেশি ভালো লেখা প্রত্যাশা করবো।
‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও সাহিত্যিক’ পুরস্কারটি ‘কখনো অপাত্রে দান করা হয়নি’ উল্লেখ করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, একটি সত্যের মুখোমুখি হতে চাই, লেখক সাহিত্যিকের কাছে পাঠকের কী প্রত্যাশা? প্রত্যাশা দুটো, পাঠক সাহিত্যের মধ্যে সৌন্দর্য ও সত্য খোঁজ করেন। আর এ দুটোর মেলবন্ধন সাহিত্যিকের প্রধান কাজ। তিনি বিচ্যুত হলে সাহিত্যিকের পদবাচ্য থাকে না। আমরা আশা করব, আজকের তরুণ লেখকরা সৌন্দর্য ও সত্যের মেলবন্ধন ঘটাবেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সমাজে আলোর পথে জঞ্জাল রয়ে গেছে এখনও। রাজনীতিকরা ক্ষমতা ও অর্থের সমীকরণ মিলিয়ে চলেন। কবি সাহিত্যিকরা মানুষের হৃদয় বুঝে চলেন, তারা ফুলের মতো, আমি ফুলের বাগানে এসেছি। আমরা বাংলার চার হাজারের বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ধারণ করছি।
‘সেই সমৃদ্ধ জনপদের উত্তরসূরী আজকের পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকরা। চার হাজার বছরের আশা, বেদনা, দুঃখ বেদনাকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তারা, তুলে এনেছেন বাংলার উত্থান পতনের কথা। ’
বাংলাদেশে ‘সংস্কৃতির ঘাটতি’ রয়েছে বলে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, রাজাকার, তেঁতুল হুজুররা স্বাধীন বাংলাদেশে আজও খলচরিত্র। স্বাধীন বাংলাদেশে কেন তারা এখনও আছে, সে প্রশ্নের উত্তর দেবেন লেখকরা। আজকের বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ঘাটতি রয়ে গেছে।
‘হয়তো আমাদের রাজনীতির উত্তরণ হবে, সমস্যার সমাধান বা উন্নয়ন হবে অনেক। কিন্তু সংস্কৃতির ঘাটতি থেকে গেলে আমরা হোঁচট খাবো। লেখকরা সেই সংস্কৃতির ঘাটতি পূরণ করবেন,’ বলেন তিনি।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম বাংলাদেশের নবীন কবি এবং লেখকদের সাহিত্যচর্চা এবং সাধনাকে গতিশীল করবার উদ্দেশ্যে ২০০৮ সাল থেকে ‘তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ প্রদান করে আসছে।
পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের ১ লাখ টাকা সম্মানী ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ পর্যন্ত ৩৯ জন কবি ও লেখককে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন লাইসা আহমেদ লিসা।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৮
এইচএমএস/এইচএল/এমএ