শুক্রবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে ‘হাসন জানের রাজা’ মঞ্চনাট্যের সূচনা দৃশ্য এটি।
জিন্সের প্যান্ট আর স্কার্ট পরা তরুণী হাসন রাজার সঙ্গে জোছনা রাত কাটানোর স্ট্যাটাস দেওয়ার অপেক্ষায়।
মধ্যরাতের জল-জোছনায় ভাসছে বজরা। হঠাৎ মাঝির দৃষ্টিআকর্ষণে সবার মধ্যে আসে এক নীরবতা। এই তবে মিললো হাসন রাজার দেখা।
এভাবে এ প্রজন্মের কয়েকজন তরুণ-তরুণী হাওরের জল-জোছনায় দেখা পান হাসন রাজার। মঞ্চে প্রায় দু’ঘণ্টার কাহিনী গড়ায় হাসন রাজা নিয়ে। তাকে নিয়ে যেসব কথা শোনা যায় সেটা হাসন রাজা নিজেই তার বিভিন্ন গানের ভণিতায় বলে গেলেন। জমিদার থেকে ঘরছাড়া হয়ে খোদার প্রেমে পেয়ারি হওয়ার ঘটনা পর্যন্ত।
বলেছেন তার যৌবনের সীমাহীন ক্ষুধা, হিসাব-বেহিসাবের বিবি আর ললনা, কুড়া শিকারের অদম্য নেশা, ঘৌড়দৌড়ের দোর্দণ্ড প্রতাপ আর সবশেষে তার ঘর-বাড়িছাড়া জীবন। গাইলেন ‘লোকে বলে বলে রে ঘর বাড়ি ভালা না আমার…’
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ১০টির বেশি হাসন রাজার গান সমৃদ্ধ এ মঞ্চ নাটকে কোনো বিরক্তির দৃশ্য নেই। এক দৃশ্যের পর আরেক দৃশ্যের টানে বুঁদ হয়ে গিয়েছিলেন দর্শক।
হাসন রাজা জীবন-যৌবনের কাহিনী যখন বলছেন তখন এরপর পর কি হলো তা জানতে তরুণ-তরুণীদের অব্যাহত প্রশ্ন আসছে। স্বভাবকবির ভঙ্গিতে বলেই যাচ্ছেন মরমি কবি হাসন রাজা। বললেন কীভাবে তার নশ্বর জগতে ভোগ-বিলাসের ঊর্ধ্বে চলে যায় দৃষ্টি, আধ্যাত্মিক সাধনায় কীভাবে নিজেকে নিবেদিত করেন।
নাটকে নারীর প্রতি হাসন রাজার ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, কোড়া পাখি শিকারের ঘটনাও এসেছে। শেষ জীবনে তার আধ্যাত্মিক সাধনার দিকে এগিয়ে যাওয়া ও জমিদারি জীবন ছেড়ে মানুষের সঙ্গে মিশে আরেক জীবন উপলব্ধি করার বিষয়টিও বাদ যায়নি।
প্রথাগত মঞ্চনাটকের যে বৃত্ত তার বাইরে বিচরণ করতে দেখা গেছে দৃশ্যের পর দৃশ্য। এ নিয়ে নির্দেশক অনন্ত হীরার বক্তব্য, ‘নির্দেশক হিসেবে আমি এ কালের মানস সরোবরে ভাবনায়-কল্পনায় ইলিউশন অথবা ফ্যান্টাসিতে একশ বছর আগেকার হাসন রাজাকে দেখতে চেয়েছি।
নাটকটি রচনা করেছেন খ্যাতিমান স্থপতি ও নির্মাতা শাকুর মজিদ। অভিনয়ে ছিলেন আউয়াল রেজা, সানজিদা সরকার আশা, রামিজ রাজু, সুজয় দাশগুপ্ত, মাইনুল তাওহীদ, নিরঞ্জন নিরু, সাগর রায়, মনোয়ারা মান্নান প্রীতি, শুভেচ্ছা রহমান, সুমন মল্লিক, প্রকৃতি শিকদার, বাঁধন সরকার, সবুক্তগীন শুভ, রুমা আক্তার, জুয়েল রানা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
এসএ/এএ