বিশ্বকবির সব মনোমুগ্ধকর গানের আয়োজন নিয়ে শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর ছায়ানটে অনুষ্ঠিত হয়েছে জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কমলিনী মুখার্জির একক সঙ্গীতসন্ধ্যা। ছায়ানটের প্রধান অডিটোরিয়ামে এ সঙ্গীতানুষ্ঠানটির আয়োজনে ছিল ইন্দিরা গান্ধী কালচালার সেন্টারের (আইজিসিসি)।
‘কখনও প্রেমের আবহে, কখনোবা ছোট্টবেলার খেলার গল্প আবার অঝর ধারার বর্ষায় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার আনন্দে কিংবা পূজার আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার আনন্দের ধারার মাঝে এনে দেয় রবীন্দ্রসঙ্গীত। তাই তো হঠাৎ রবীন্দ্রনাথের গানে এসেছে 'বহে নিরন্তরও অনন্ত আনন্দ মায়া'। বাঙালির অনেকেই হয়তো ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে বড় হয়েছেন। কিন্তু সে গানের অর্থ উপলব্ধি করা গেছে বড় হয়ে। অথচ গানগুলো ভালো লেগেছে ছোটবেলাতেই। তাই তো এতো সহজভাবে গভীর কথা রবীন্দ্রনাথ গানে বলে গেছেন- 'তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই'। যে কারণে রবি ঠাকুর সবার, কোনো মানুষ বা কোনো জাতির নয়। তবে বাঙালির গর্ব। কেননা গানগুলো রচিত হয়েছে বাংলা ভাষায়। এমন দাবি রবীন্দ্র শিল্পীদের। ’
কমলিনী মুখার্জি বলেন, রবীন্দ্রনাথের গান সব পছন্দের ঊর্ধ্বে। সবগুলোই পছন্দ। কিন্তু তারপরও এই পছন্দের দীর্ঘ তালিকার মাঝেও কিছু বাছাই গান নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি গান শোনাতে। আমার গানগুলো যদি আপনারা আপনাদের হৃদয়ে গেঁথে নেন তাহলে হয়তো আবারও আসবো।
তিনি দর্শকদের অনুরোধে গান করাসহ তার গাওয়ার শুরুতেই প্রত্যেকটি গানের ব্যাখ্যা সংক্ষেপে দর্শকদের তর্জমা করেন।
সঙ্গীতানুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আবৃত্তিকার ডালিয়া আহমেদকে ডেকে নেন কমলিনী। গানের মধ্যে ভিন্ন স্বাদ এনে দেন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রচিত কবিতা দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের স্বাভাবিক জীবনেও প্রভাব ফেলেন। যে প্রভাবের জোরে আরও বেশি সুন্দর ও সুশীল হয়ে ওঠে আমাদের জীবন। তাই তো অনেকে চান তার শ্রাদ্ধে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজানো হোক। এসব ভাবার্থ নিয়ে রচিত কবিতা আর সে কবিতা শেষ হতে না হতেই কবিতার পংক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গানে দর্শকদের আবার মন মাতিয়ে দিলেন কমলিনী।
গান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকা দর্শকদের জোর করতালি। যেনো সবাই ফিরে এলো সে কবিতা ও গানের দৃশ্য থেকে। কেননা প্রত্যেকটা পংক্তি বা লাইন যেনো একটি দৃশ্যমান ঘটনার আবহ সৃষ্টি করে। যে কার্পণ্যহীন করতালি ছিল প্রত্যেকটি মন্ত্রমুগ্ধের মতো গান উপভোগ করতে থাকা দর্শকের।
কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির এই ছোট ছেলের যে সব গান শুনিয়ে অনুষ্ঠান শেষে অজস্র অটোগ্রাফ দিতে হয়েছে ও মনোমুগ্ধকর সঙ্গীতসন্ধ্যা উপহার দিয়েছেন সেগুলো হলো- আমার মাথা নত, বহে নিরন্তর, ক্ষত চোখের জলে, আমার ভাঙা পথের, তোমার খোলা হাওয়া, দ্বীপ নিভে গেছে, তোরা যে যা বলিস, ভরা থাক, আমার প্রাণের পরে প্রভৃতি।
মঞ্চে কমলিনীর সঙ্গে যারা বিভিন্ন সঙ্গীত যন্ত্র বাজিয়ে গানগুলোকে রূপায়ন করেছেন- গিটারে রিচার্ড কিশোর, তবলায় এনামুল হক ওমর, এসরাজে একরাম হোসেন, কি-বোর্ডে সুনীল সরকার।
স্বতন্ত্র শৈলী, গানের স্পষ্ট উচ্চারণ ও বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে কণ্ঠের সমন্বয় কমলিনী মুখার্জিকে গানের জগতে আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। গানের জন্য এ শিল্পী গত কয়েক বছর সময় কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। রবীন্দ্রনাথের গান ও গানের বার্তাটি সফলভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের কাছেও পরিচিত।
কামালিনী কলকাতার টেলিভিশন ও মঞ্চে নিয়মিত কাজ করছেন। এইচএমভি সারেগামা থেকে তার কয়েকটি গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের জন্য তরুণ প্রজন্মের কাছে তার আবেদন সব সময়ই অনন্য।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৮
এমএএম/এএ