শনিবার (৫ মে) আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্রের আয়োজনে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের কাউন্সিল হলে এ সম্মেলন আয়োজিত হয়। আয়োজনে বিশিষ্টজনদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নজরুলচর্চাকে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নজরুল ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে স্প্যানিশ, ফরাসি ও জার্মান ভাষায় নজরুলের সাহিত্যসম্ভার অনুবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগ থাকলেও এখন পর্যন্ত আরবি ভাষায় নজরুল সাহিত্যের কোনো অনুবাদ হয়নি। একইভাবে ঢাকাস্থ আরব দেশের দূতাবাসগুলোও এ বিষয়ে নির্বিকার।
নজরুলের সৃষ্টির যথার্থতা রক্ষার তাগিদ জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই নজরুলের গানে বিকৃত সুরারোপ করছে। একইভাবে নজরুলের জীবনী নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কেউ কেউ। তাই সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে না পারলে কেউ যেন নজরুলচর্চা না করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমরা নজরুলের গান-কবিতায় উদ্দীপ্ত হয়েছি। তখন থেকেই দেখছি নজরুলকে নিয়ে মুসলমানিকরণের চেষ্টা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। যখন তাঁকে এদেশের জাতীয় কবি হিসেবে গ্রহণ করা হলো, তখনো তাকে ছোটভাবে উপস্থাপন করেছেন অনেকেই। শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথের সাথে তুলনা করে নজরুলকে ছোট করার চেষ্টাও হয়েছে। এ অপপ্রয়াস রুখতে হলে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে নজরুলের সৃষ্টিসম্ভারকে ছড়িয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নজরুল কোনো একক ধর্মের নয়; নজরুল সমস্ত বাঙালির, সমগ্র বিশ্বের।
আলোচক সৌমিত্র শেখর বলেন, নজরুলের দর্শন হচ্ছে সম্প্রীতি ও প্রগতির। পুরনোকে বাতিল করে নতুনকে আবাহানের দর্শন। সেই দর্শনকেই অনুসরণ করতে হবে আমাদের। পৃথিবীতে যতদিন হানাহানি ও সাম্প্রদায়িকতা থাকবে ততদিন নজরুলের উপযোগিতা থাকবে। এসব সংকটে নজরুল হবে আমাদের অবলম্বন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ.এইচ.এম মুস্তাফিজুর রহমান ও নজরুল গবেষক ড. সৌমিত্র শেখর। আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব ছিল নৃত্য-গীতে সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার। সম্মেলক কণ্ঠে দোলনচাঁপা ললিতকলা একাডেমির শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘জাগো অনশন বন্দী, ওঠ রে যত/জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত’। ধর্মরাজী ললিতকলা একাডেমির শিল্পীরা পরিবেশন করে ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’। সুমধুর কণ্ঠে নাশিদ কামাল গেয়েছেন ‘আমিনার কোলে নাচে হেলেদুলে’ ও ‘ঘুমায়েছে ফুল পথেরই ধুলায়’ শিরোনামের দু’টি গান। এম এ মান্নান পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘আল্লাতে যার পূর্ণ ঈমান কোথায় সে মুসলমান’ ও ‘পুবান হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বাইয়া’। ছন্দা চক্রবর্তীর কণ্ঠে গীত হয় ‘ডেকে ডেকে কেন সখী ভাঙাইলে আমার ঘুম’ ও ‘হারানো হিয়া’। যারিন তাসনিম শুভ্রা গেয়ে শোনান ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’। রোজী আক্তার শেফালীর কণ্ঠে গীত হয় ‘সুদূর মক্কা মদীনার পথে’।
একক কণ্ঠে গান শুনিয়েছেন ফাতেমা তুজ জোহরা, ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদ, ইয়াকবু আলী খান, রেবেকা সুলতানা, শহীদ কবির পলাশ ও রাহাত আরা গীতিসহ অনেকে। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেছে হিন্দোল সঙ্গীত একাডেমী, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ও নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৮
এইচএমএস/এমজেএফ