কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলে বাংলা একাডেমী ২৯ আগস্ট রোববার সকালে একাডেমীর সেমিনার কে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে নজরুলের গানের শ্রেণিবিন্যাস শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন ড. লীনা তাপসী খান।
প্রাবন্ধিক ড. লীনা তাপসী খান বলেন, নজরুল ছিলেন রাগসঙ্গীতের কারিগর। তার গানে রাগের বিভিন্ন আঙ্গিক অত্যন্ত জোরালো। তাই বিষয়ভিত্তিক শ্রেণিকরণের চেয়ে নজরুলের গানের আঙ্গিকগত শ্রেণিকরণই বেশি যুক্তযুক্ত।
জনাব খায়রুল আলম সবুজ বলেন, শ্রেণিবিন্যাস একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য নজরুলের গানের শ্রেণিবিন্যাস করা জরুরি। যদিও কাজী নজরুল ইসলাম অনেক গান লিখেছেন কিন্তু আমরা তার খুব অল্প সংখ্যক গান শুনতে পাই। তার অপরিচিতি গানগুলোকে যথাযথভাবে সংগ্রহ-সংরণ করে শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরা উচিত। তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন গান যিনি লিখতেন তিনিই সুর করতেন এবং গাইতেন। নজরুল সে ধারায় পরিবর্তন আনেন। অনেক সুরকারের সুর থাকার ফলে নজরুলের লেখা গানে সুরের বৈচিত্র্য ল্য করা যায়।
অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামী বলেন, সম্প্রতি নজরুল ইনস্টিটিউট নজরুলের এক হাজার গানের স্বরলিপি প্রকাশ করেছে। তা থেকে বিষয়গত শ্রেণিবিন্যাস করার সাথে সাথে সাঙ্গীতিক শ্রেণিবিন্যাস করাও সম্ভব। নজরুলের প্রায় তিন হাজার গান সংগৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০০ গানের সুর পাওয়া যায়। বাকিগুলো হয়তো সুর হয়নি কিংবা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। নজরুলের গানকে স্বরলিপির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তার গানের প্রচুর চর্চা করা উচিত। নজরুলের যে গানগুলো জনপ্রিয় সেগুলোই বেশি গাওয়া হয়। পাশাপাশি আমাদের অন্য গানগুলোর চর্চাও অব্যাহত রাখতে হবে। নইলে নজরুলের সৃষ্টিশীলতা কয়েকটি গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। এজন্য দেশের বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলোর সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। যদি নজরুল সঙ্গীতশিল্পীদের যথোপযুক্ত সম্মানী দিয়ে নজরুলের অপরিচিত গানগুলো নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তবে তার বেশিরভাগ গানই বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ বলেন, সঙ্গীত শোনার ও বোঝার বিষয়। প্রকৃত অর্থে গানের তেমন কোনো শ্রেণিকরণ হয় না। শ্রেণিকরণ করলে গান বুঝতে খুব একটা সহজ হয় তেমনটা নয়। তবে শ্রেণিকরণের ফলে গানের প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষণ সহজ হয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সঙ্গীতকে বহু বিভাজনে বিভাজ্য করা যায়। তিনি বলেন, এ যাবৎ নজরুল সঙ্গীতের যত আলোচনা হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা অগভীর। নজরুল সঙ্গীতের বহুল প্রচার এবং চর্চার মাধ্যমেই গভীরতর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে। আশা করি এ বিষয়ে গবেষকেরা এগিয়ে আসবেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪৫০, আগস্ট ৩০, ২০১০