ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সুরে মোহিত করলেন তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পী জান্নাত

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮
সুরে মোহিত করলেন তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পী জান্নাত গান গাইছেন জান্নাত/ছবি: শাকিল

ঢাকা: বাইরে তখনো বৃষ্টি হচ্ছে। সন্ধ্যার সে বৃষ্টিতে মন হারায় স্বপ্নে আঁকা এক মায়াবি অবয়বে। তখনই শিল্পী জান্নাত জাহান গেয়ে উঠলেন রবি ঠাকুরের অনন্য গান 'মায়বন বিহারিণী হরিণী, গহন স্বপন সঞ্চারিণী'। শুরু হলো আয়োজন। এরপর শিল্পী একে একে গাইলেন ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’, ‘তুই যদি হইতি গলার মালা’, ‘আমি রাই বিনোদনী’, আমরা মলয় বাতাসে ভেসে ভেসে যাবো’, ‘শাওন রাতে যদি’-সহ বিভিন্ন গান।

শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গ্রিন রোডের বিন্দুধারীতে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে শিল্পী রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি ও আধুনিক গানসহ বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

গানের প্রতি তার আগ্রহ ছোট থেকেই।

কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ার কারণে গান গাওয়া আর হয়ে ওঠেনি। তবে সমাজের আর দশটা মানুষের মতোই বাঁচতে চান জান্নাত। সে গল্পের অংশ হিসেবেই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পী জান্নাতের একক সঙ্গীতসন্ধ্যা ‘জান্নাত গাইছে’।

রাজধানীতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জীবনমান উন্নয়ন ও সদাচারণ প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে সমাজ সেবা অধিদপ্তর এবং রিথিংক। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ যে কাজে পারদর্শী বা আগ্রহী, তাকে সে কাজ শেখানোর মধ্য দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে।  

তারই ধারাবাহিকতায় সঙ্গীতে আগ্রহী জান্নাতকে ছয় মাস ধরে সঙ্গীত প্রশিক্ষণ দিয়েছে  রিথিংক। প্রশিক্ষণ শেষে শিল্পী জান্নাতের মঞ্চে শুভাগমন উপলক্ষে রিথিংক আয়োজন করে তার একক সঙ্গীতসন্ধ্যা 'জান্নাত গাইছে'।

গান গাইছেন জান্নাত/ছবি: শাকিলআয়োজনের শুরুতেই দর্শক ও অতিথিদের উদ্দেশ্যে বলেন, হিজড়া হলেও আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে চাই না। গান দিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে চাই। একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার চাই। রিথিংক সেই প্ল্যাটফর্মটা আমাকে তৈরি করে দিয়েছে, এজন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি চাই অন্য সব হিজড়াও দ্বারে দ্বারে ঘোরা বাদ দিয়ে সমাজে কিছু করে প্রতিষ্ঠিত হোক।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রিথিংকের পরিচালক লুলু-আল-মারজান। তিনি বলেন, আমরা চাই হিজড়াদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটাতে। সে লক্ষ্যেই আজকের এ আয়োজন। আমরা চাই আপনারাও তাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করেন। এতে তাদের সঙ্গে আমাদের দূরত্বটা যেন ঘুচে যায়।

শেষে আয়োজনে টিকিট বিক্রি করে দর্শকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সর্বমোট ১০ হাজার টাকা শিল্পী জান্নাতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আসমা আহমেদ সেঁজুতি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০১৮
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।