ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নূরের কণ্ঠে ‘অয়োময়’ নাটকের সেই সংলাপ অতঃপর..

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৮
নূরের কণ্ঠে ‘অয়োময়’ নাটকের সেই সংলাপ অতঃপর.. বক্তব্য রাখছেন আসাদুজ্জামান নূর

ময়মনসিংহ: নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় নাটক ‘অয়োময়’ এর বিখ্যাত চরিত্র ‘ছোট মির্জা’। এ চরিত্রের জনপ্রিয় সংলাপ ছিল ‘আমি বেশি কথা বলতে পছন্দ করি না’। ভাটি অঞ্চলের প্রতাপশালী জমিদার পরিবারের সেই ‘ছোট মির্জা’ চরিত্র প্রায় তিন দশক আগের স্মৃতি রোমন্থন করলেন আবারও। 

বুধবার (২৪ অক্টোবর) রাতে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল চত্বরে তিন দিনব্যাপী জাতীয় ভাটিয়ালী সঙ্গীত উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেন ‘অয়োময়’ নাটকের ‘ছোট মির্জা’ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি।

কালজয়ী ‘বাকের ভাই’ চরিত্রের জন্য কিংবদন্তি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি সলাজ হাসিতে ফিরে গেলেন সেইসব স্মৃতিতে।

বললেন, আমি যখন ‘অয়োময়’ নাটক করতাম, তখন এই ময়মনসিংহের শশীলজে শ্যুটিং করেছি।  

আমি তখন যখন যেখানে যেতাম সেখানেই বলতো নাটকের ডায়ালগ বলেন। তখন আমি ‘অয়োময়’ নাটকের সংলাপ বলতাম। ‘আমি বেশি কথা বলতে পছন্দ করি না। ’ 

বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে ৪৫ বছরের সম্পৃক্ততা, জঙ্গিবাদের কবর রচনা করতে সংস্কৃতি কর্মীদের ভূমিকা, স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পথচলা, পকেটের পয়সা খরচ করে এখনও মঞ্চ নাটক করা-কোন বিষয়ই বাদ যায়নি চিরসবুজ এই মানুষটির উচ্চারণে।  

একজন থিয়েটার কর্মী থেকে অভিনেতা, জনপ্রতিনিধি অত:পর মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমি ১৯৭৩ সাল থেকে মঞ্চ নাটক করি। আমরা কোনদিন মঞ্চ নাটক করে এক পয়সা পকেটে ঢুকানো তো দূরের কথা, এখনো পকেটের পয়সা খরচা করে নাটক করে যাচ্ছি।  

তিনি বলেন, রিহার্সেলের রুমের ভাড়াও নিজের টাকায় দিতে হয়। টিকিট বিক্রি করে যে টাকা হয় তা পরের শো’র হল ভাড়ার জন্য জমিয়ে রাখি। এভাবে ৪০ বছর বা বেশি সময় ধরে নাটক করে যাচ্ছি। বাড়ির খেয়ে যারা বনের মোষ তাড়াচ্ছেন তারা আমার সহযাত্রী।  

নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের আক্ষেপ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, অনেকেই (মঞ্চ নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা) এসে আমাকে বলেন এভাবে আর কতদিন চলা যাবে? আমি বলি নিজেকে যদি আমরা সংস্কৃতি কর্মী বলি তাহলে এভাবে আরও কিছুদিন চলতে হবে। আমরা যদি বাড়ির খেয়ে বনের মোষ না তাড়াই তাহলে ওই বনের মোষগুলো বাংলাদেশ নামের সুন্দর ফুলের বাগান তছনছ করে দেবে।

বক্তব্য রাখছেন আসাদুজ্জামান নূর

সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শীতার প্রশংসা করে ১৯৭৪ সালের স্মৃতিতে ফিরে যান ৭১’র রণাঙ্গণের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, ওই সময় বাংলা একাডেমি একটি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। আয়োজকরা বঙ্গবন্ধুকে সাহিত্য সম্মেলনে প্রধান অতিথি হতে বললেন। বঙ্গবন্ধু রাজি না হওয়ায় আয়োজকরা বললেন, আপনি আমাদের নতুন দেশ উপহার দিয়েছেন। এখানে অনেক বড় বড় দেশের লেখকরা আসবে। আপনি কেমন বাংলাদেশ গড়তে চান, কেমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন তা শুনতে চাইবে।  

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শর্ত দিলেন তার পাশে তিনজন মানুষকে রাখার। একজন পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, আরেকজন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এবং অন্যজন উপমহাদেশের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী মতিন চৌধুরী। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু গোটা জাতিকে একটি বার্তা দিলেন যে তার পাশে একজন কবি, শিল্পী, শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানীর প্রয়োজন রয়েছে। এ মানুষগুলোকে ছাড়া একটি দেশ নির্মাণ সম্পূর্ণ হতে পারে না। জাতির  জনকের এই বার্তার পর কোন পথে আমাদের অগ্রসর হতে হবে তা নিয়ে আর কোন দ্বিধা থাকতে পারে না।

বাংলাদেশের সঙ্গীতে ভাটির গান হয়ে ভাটিয়ালী পরিচয়ে নীরবে স্থান করে নিয়েছে ভাটিয়ালী সঙ্গীত। ভাটিয়ালী সঙ্গীতের বিপুল সম্ভারকে সংরক্ষণের প্রয়াস প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ভাটিয়ালী উৎসব শুরু করলাম কিন্তু শেষ নয়। আগামীতেও চলবে। ভাটিয়ালী ও ভাওয়াইয়া দু’টি একাডেমি করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। আমার মনে হয় দুই অঞ্চলে দু’টি করা গেলে তাতে অনেক কাজ করা সম্ভব হবে।  

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা আ’লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ইকরামুল হক টিটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৮ 
এমএএএম/এএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।