স্কুল জীবনে এ ধরণের ফাঁকিবাজি করেননি এমন লোক মেলা ভার। তবে সে ফাঁকিবাজি যদি হয় বইয়ের টানে, বইকে ভালোবেসে, তবে তো তাকে মিষ্টি ভালোবাসায় ক্ষমা করাই যায়।
কথা হচ্ছে তিথি, তাহমিনা আর মুক্তাকে নিয়ে! তারা তিন বান্ধবী রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সেই বিদ্যালয় আবার প্রতিদিন ছুটি হয় বিকেল ৪টার পর। এরপর আবার আছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছেই পড়াশোনা আর দ্রুত বাড়ি ফেরার পালা।
‘বাড়ি ফিরেই কী শান্তি আছে! ফ্রেশ হয়ে কোনোরকমে একটু খেতে না খেতেই হাজির হবে নাচ বা গানের শিক্ষক। তারপর আবার আসবেন গণিতের স্যার। আর পরবর্তী দিনের জন্য স্কুলের পড়া তৈরি তো আছেই। সবমিলিয়ে রাত প্রায় দুটো। এমন রুটিনের মাঝে কি বইমেলা আসা যায়?’ একদমে কথাগুলো গড়গড় করে বলে গেলো তিথি। সত্যিই তো, এমন রুটিনের মাঝে আর যাই হোক, অন্তত অনেকটা সময় নিয়ে বইমেলা আসা যায় না। আর সেজন্যই তো তারা তিন বান্ধবী বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) যুক্তি করে বইমেলা এসেছে স্কুল পালিয়ে। অন্তত আগামীকাল যখন ২১শে ফেব্রুয়ারির ছুটি, তখন পড়ার চাপ আজ বেশ কম। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগানোর ইচ্ছে তাদের।
তবে ছুটির দিনে বইমেলা না এসে বরং স্কুল পালানো কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তাহমিনা বলেন, ছুটির দিনে তো আর বান্ধবীর সঙ্গে আসতে পারবো না। আসতে হবে পরিবারের সঙ্গে। তাই দুটো স্বাদই নিতে চাই আমরা। আজ স্কুল পালিয়ে বন্ধুরা মিলে আর আগামীকাল পরিবারের সঙ্গে। মাঝ দিয়ে দু’দিন আসা হয়ে যাবে বইমেলা! কথাগুলো বলেই বেশ হাসল সে। আর বইয়ে আগ্রহের কথা জানতে চাইলে মুক্তা বললেন, আমরা তিন বান্ধবীই মূলত হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলী বইয়ের ভক্ত। তিনজন তিন গোয়েন্দাও পড়ি। আর ভালো লাগে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। তবে তিথি জানালেন, তার আগ্রহ আছে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলে। বেশকিছু নামকরা বিদেশি বইয়ের অনুবাদও কিনতে চান তিনি।
শুধু তিথি, তাহমিনা বা মুক্তা নয়, অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থীই গ্রন্থমেলায় আসেন স্কুল পালিয়ে বা স্কুল ছুটি শেষে। গ্রন্থমেলার একটি বড় অংশ তারা। লেখক আর প্রকাশকরাও চান এই প্রজন্ম বই পড়তে শিখুক, ভালোবেসে মোবাইল বা কম্পিউটারের ছোট স্ক্রিনের বাইরেও এসে বইয়ের প্রতি আগ্রহী হোক। সম্প্রতি মেলায় এসে লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবালও বলেছেন তেমন কথায়। তার মতে, বাবা-মাকে বলবো, আপনারা একটু বাচ্চাদের হাতে টাকা দেন, ওরা বই কিনুক। উৎসাহ দেন বই পড়ার জন্য। বাচ্চাদের ইউটিউব থেকে সরিয়ে নিয়ে আসুন, ফেসবুক থেকে সরিয়ে নিয়ে আসুন, স্ক্রিন থেকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। স্ক্রিন হচ্ছে একমুখী, সে আমাকে দেয়, আমি কিছু দিতে পারি না। কিন্তু বই তো একমুখী না। আমি যখন বই পড়ি তখন কল্পনা করি, চিন্তা জাগে, আর এটা একটা প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
এইচএমএস/এএটি