ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আজাদুর রহমানের একগুচ্ছ কবিতা

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০
আজাদুর রহমানের একগুচ্ছ কবিতা

জেদ
মানুষ একটা জেদ নিয়ে জন্মায়,
একটা চোট নিয়ে জোট বাঁধে,
জেদ করে অন্যের ভিতরে তাকে দেখে।
জেদ নিয়ে ঘর করে, জেদে জেদে সন্তান পালে
চাকরি করে, বাজার করে।

জেদ করে মানুষ দু'একবার ভাত খায় না
গোস্বা মুখে পাশ ফিরে থাকে,
মানুষ খালি পেটে জেদ নিয়ে ঘুমায়
জেদ করে করে এক দিন দুই দিন...
কথা কয় না, হাসে না, কাঁদে না।

জেদ করে নিজের ভিতরে ঘুরে ঘুরে
একদিন কী মনে করে
জগতের বাইরে পা রাখে মানুষ,
তখন তার, কিছুই থাকে না আর,
কেবল জেদটাকে এক পাশে রেখে,
একা একা মরে যায় সে।


স্নানের গুঞ্জন
মানুষ নদীর কাছে যায়, বসে থাকে
নদী কলরব করে, গল্পের সুতো খুলতে খুলতে
স্নানে নেমে যায়, হাঁটু মাঞ্জন করে।
স্নান হলে পরে জোছনার সাদা সাদা জলে
শাঁখা পরে শুয়ে থাকে নদী।
মানুষের তখন মাছ হতে ইচ্ছে করে,
শামুকের মত মন নিয়ে ডুবে মরতে ইচ্ছে করে।
মানুষ মন ফেলে আসে নদীর ধারে, কাশবনে।
ঢেউ বুকে একা একা, তারপর
একদিন মানুষ মন খুঁজে বেড়ায়,
হৃদয় খুঁজে বেড়ায়, খুঁজে খুঁজে
শুধু স্নানের গুঞ্জন টের পায় সে।

মন
শাড়ি বদলাতে বদলাতে তুমি পাল্টাচ্ছ তোমার মন
আর আমি ভাবছি, আজ কি বুধবার নাকি সোম।
আমার পকেট ভর্তি জোনাকি, মুখ ভরা ভুল
আটকা পড়া গতকালের পাখির মত আমার মন।

মায়া-১
যে জীবন তুমি কাটাতে চাওনি
তার কিছু ঘুম, চলে যায় অন্যশহরে,
শীতের পার্কে, একা পায়ে এক তরুণী
তার কিছু মায়া, মন-খারাপের খুঁদ-কুটো,
লেগে থাকে বুকের বোতামে।
বিষণ্নদিনের মত দীর্ঘ মধ্যমা ধরে
হেঁটে যায় শীতকাল, তার কিছু নুন
ছড়িয়ে যায় বুধবারের শরীর জুড়ে,
ইতস্তত পাতা ঝরে, তার কিছু রঙ,
মিশে থাকে শিশিরের জলে।

মায়া-২
এ পৃথিবীর পলি-কাটা জালে
মুখটাই কেবল আটকা পড়ে,
দুধের সরের মত পড়ে থাকে মায়া
স্তরে স্তরে, চামড়া জুড়ে।
ঝরণার পাশে আলস্যে যে হরিণ,
ওর চোখের কোণে জমে আছো তুমি-
যে জীবন তুমি কাটাতে চাওনি,
তার দুঃখ-টুঃখ অল্প-স্বল্প গল্পে।
দুধের সরের মত মায়া আর
পলিকাটা আদর ফেলে,
রূপার পালংকে, সোনার পালংকে
তোমার ঘুম আসে না।

মায়া-৩ 
ভিড় করে দুলে ওঠা গেরুয়া ফসল
হাওয়া দিলো ঢেউ দিয়ে,
যেন জেরুজালেমের পথে পথে হাঁটছি,
পিতৃহীন একা পায়ে।
গাছেদের, পাতাদের, আবাদের
রোল কল থেকে উঠে আসছে আমার নাম
যেন বহুকাল আমি গ্রামে ফিরিনি,
বান্ধবহীন খালি পায়ে।


হাসি এবং খুন
তুমি যা ভাবছ,
পৃথিবীটা আসলে সে রকম না,
ধরে নিতে পারো,
এটা একটা গোলাকার গবেষণাগার-
তুমি খুঁজছ আলো-অন্ধকার,
পড়ে দেখছ দুঃখ ও প্রেমের বয়ান,
ভালোবাসা খুঁড়ে খুঁড়ে দেখছো-
হাসি এবং খুন।
তারপর
বহু, বহু বছর পর তোমার ঘুম ভেঙে গেল,
তুমি বৃদ্ধ হয়ে গেছ,
কেউ নেই
তোমার পাশে পড়ে আছে কেবল হাসি এবং খুন।


ঘুম এবং মৃত্যুর মাঝখানে আর যা কিছু
বুকের মাপ দেখেই বলে দেয়া যায়
কোন্ শস্য ভাণ্ডার থেকে এসেছ তুমি
নাকি জন্ম মাত্রই মহাকালের মঙ্গা এসে
গ্রাস করেছিল তোমাকে।
এসব অবশ্য বড় কথা নয়!
মানুষকে আরও বহুকাল টিকে থাকতে হবে,
আপাতত এ ছাড়া আর কোন পথ নাই!
শেষমেশ যদি কিছু নাই হয়
তবে পেট ভরে মদ খাওয়া ভাল।
প্রেম আর নগ্ন হওয়া এক জিনিস নয়,
ভালবাসার যোগ্য হয়ে ওঠাও বরং এক এবাদত-
এ কথা জানতে জানতে, এই যে আমি মারা যাচ্ছি,
সেটাও কোন দুঃসংবাদ নয়!
ঘুম এবং মৃত্যুর মাঝখানে আর যা কিছু
অমীংমাসিত, তা আমাদের সকলের।

বাউল
যে বাউল ট্রেনে ট্রেনে ভিক্ষে করে
সে আমার পিতা,
হয়ত পিতার মত পরম্পরা,
পুনর্জন্মের পরে,
আমি যেমন হাত পেতে আছি
তোমাদের মুখের পরে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।