ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আজ পহেলা বৈশাখ

অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা... 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা... 

ঢাকা: ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’- আজ বাঙালি কায়মনে এই প্রণতিই জানাবে পরম করুণাময়ের কাছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে সমগ্র বিশ্ব এখন মৃত্যুপুরী। অদৃশ্য শত্রুর মোকাবিলায় ঘরে বসে আছেন মানুষ।

এরই মাঝে আজ মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) বর্ষপঞ্জিকায় আসছে পরিবর্তন। বঙ্গাব্দ ১৪২৭।

পূর্ব দিগন্তে আজ যে সূর্য উঠেছে, তা নতুন বছরের সূর্য। নব নব স্বপ্ন আর পুরোনোকে স্মৃতির মণিকোটরে গেঁথে এসেছে নতুন এ বছর।

আজ বৈশাখ করে বরণ করে সবাই যেমন বলবে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’; তেমনি কায়মনে প্রার্থনা করবে ‘তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমুর্ষূরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। ’

ঐতিহাসিকদের মতে, বৈদিক যুগে বাংলা সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। মোগল সম্রাট আকবর ফসলি সন হিসাবের সুবিধার্থে বৈশাখ মাসকে প্রথম মাস ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জি চালু করেন। নবাব মুর্শিদকুলি খান বৈশাখ মাস থেকে বাংলায় প্রথম খাজনা আদায় শুরু করেন। জমিদারি আমলে বৈশাখের মূল আয়োজন ছিল খাজনা আদায় উপলক্ষে ‘রাজপুণ্যাহ’ ও ব্যবসায়ীদের ‘হালখাতা’ উৎসব। জমিদারি প্রথা বিলোপের পর রাজপুণ্যাহও বিলুপ্ত হয়। আর আধুনিক সময়ে অর্থনৈতিক লেনদেনের ধারায় পরিবর্তন আসায় হালখাতাও তার জৌলুস হারিয়েছে। বর্তমানে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে তাই মুখ্য হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, যা প্রবর্তনের কৃতিত্ব পুরোটুকুই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তিনি শান্তিনিকেতনে প্রথম ঋতুভিত্তিক উৎসবের আয়োজন করেন। বর্তমানে এ উৎসবকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এসেছে নতুন এক গতিশীলতা।

বর্ষবরণ উপলক্ষে আজ পহেলা বৈশাখ রয়েছে সরকারি ছুটি। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিও এদিন।

দিবসটি উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সংবাদপত্রগুলোও প্রকাশ করছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। রেডিও-টেলিভিশনে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় দুই আয়োজন-রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভাযাত্রার কোনোটিই এবার হচ্ছে না।

তবে আগের বছরগুলোর নানা গান নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে ছায়ানট। ডিজিটালি বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে ‘উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের’- এ প্রতিপাদ্যে এ বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়েছে৷ নবসজ্জার অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে পহেলা বৈশাখ ভোর সাতটা থেকে। অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে সাম্প্রতিক নানা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের নির্বাচিত গান এবং বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপটে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুনের সমাপনী কথন দিয়ে। যা বিটিভি ছাড়াও ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও সম্প্রচারিত হবে।

‘ডিজিটালি’ মঙ্গল শোভাযাত্রার একটি পোস্টার তৈরি করে তার মাধ্যমে সব ভয়ের বিপরীতে মানুষের জয়গানের কথা উল্লেখ করছে চারুকলা অনুষদ। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ‘মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’।

এর বাইরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, থিয়েটার কাগজ ক্ষ্যাপা, নৃত্যদল সাধনাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ফেসবুক লাইভে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
ডিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।