ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সংকটে প্রকাশনা শিল্প, করোনায় ক্ষতি ৪শ’ কোটি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২০
সংকটে প্রকাশনা শিল্প, করোনায় ক্ষতি ৪শ’ কোটি

ঢাকা: ঘোর সংকটে পড়েছে প্রকাশনা শিল্প। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই এক প্রকার বন্ধ রয়েছে বই বেচাকেনা।

৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর শো-রুম খুললেও সেখানেও নেই বিক্রি। অনলাইনে বই বিক্রিও আশানুরূপ নয়।

করোনায় ইতোমধ্যে প্রকাশনা খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকায়। অনেক প্রকাশক মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানা গেছে।

মহামারির কালে দেশের প্রকাশনা শিল্পের অবস্থা বর্ণনা করে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মার্চের ৮ তারিখে দেশে করোনা সংক্রমণের কথা জানানো হয়। এর পর থেকেই সৃজনশীল বইয়ের বিক্রি এক প্রকার বন্ধ। কারণ, মানুষ নিজের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর পরেই, বই কেনেন। আর করোনাকালে আমরা সবাই ‘সীমিত’ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। যার প্রভাব পড়েছে প্রকাশনা শিল্পের ওপর।

ভালো নেই প্রকাশকরা
করোনাকালে বিপদের মধ্যে আছেন প্রকাশকরা। অন্যান্য ব্যবসার মতো চাইলে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে পারছেন না তারা। কারণ, লেখক-বাইন্ডার-প্রেসের সবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক। এ কারণে চাইলেও ব্যবসা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির যুগ্ম-নির্বাহী পরিচালক এবং অন্বেষা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দেশের সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এমনিতেই মানুষ বই কম কেনেন। করোনার কারণে বই কেনা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের অন্যতম স্বত্বাধিকারী আদিত্য অন্তরের মতে, করোনাকালে প্রকাশনা শিল্পের ব্যবসা ৯০ শতাংশ কমেছে।

তিনি বলেন, বইমেলা শেষ হওয়ার পর মার্চ ও এপ্রিল মাসে বেশ কেনাকাটা হয়। কিন্তু এবার সে সময়টা করোনার কারণে নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে মে মাস পর্যন্ত বাংলাবাজারও বন্ধ ছিল। জুন থেকে খুললেও বেচাবিক্রি নেই। এ অবস্থায় আমাদের যে বিনিয়োগ করা আছে, সেটি ওঠানোই অসম্ভব।

বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপংকর দাস বলেন, দেশের অন্যান্য খাতের মতো প্রকাশনা খাতেও করোনার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। আমাদের অনলাইনে বই বিক্রি ভালো হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বুক ক্যাফেতে কিন্তু খুব বেশি মানুষ আসছেন না। তবে যারা আসছেন, তারা একসঙ্গে বেশ কিছু বই কিনছেন। এটা ইতিবাচক দিক।

অনলাইনেও বিক্রি আশানুরূপ নয়
করোনা সংক্রমণের কারণে অনলাইনে বই বিক্রিও আশানুরূপ নয় বলে প্রকাশনা সংস্থাগুলো সূত্রে জানা গেছে। যদিও অনলাইনে বই বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের সময়ে বিক্রির হার নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের আদিত্য অন্তর বলেন, অনলাইনে বই বিক্রি এখন প্রকাশনা খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক। অনেকেই অনলাইনে অর্ডার করে বই কেনেন। কিন্তু করোনার সময়ে অনলাইনে বই বিক্রিও কিন্তু দুই মাস বন্ধ ছিল। এখনও যে খুব বিক্রি হচ্ছে না, তা কিন্তু না।

দেশের অনলাইনে বই বিক্রির সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান রকমারি’র হেড অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনবাউন্ড মার্কেটিং মাহমুদুল হাসান সাদি বাংলানিউজকে বলেন, মে মাসের শেষ সপ্তাহে অফিস খোলার পর জুনের ৫ তারিখ থেকে আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। এর পর থেকে যা বিক্রি হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে এ সময়ে ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষার সহায়ক বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। সৃজনশীল বইয়ের মধ্যে স্কিল ডেভেলপমেন্টের বই বিক্রি বেশি হচ্ছে। তবে যেহেতু অনেকেই গত বইমেলার বই সংগ্রহ করতে পারেননি, তারাই মূলত বই কিনছেন।

প্রকাশনা সংস্থা বাতিঘর প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত ১৯ এপ্রিল থেকে অনলাইনে বই বিক্রি শুরু করেছে। এ বিষয়ে এর কর্ণধার দীপংকর দাস বলেন, অনলাইনে বই বিক্রি হচ্ছে। সংখ্যাটা অনেক না হলেও, হতাশজনক নয়।
সংকটে প্রকাশনা শিল্প
ক্ষতি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা

প্রতিবছরই বইমেলার পরের দুই মাসে মেলার নতুন বইগুলো ঢাকার বাইরে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত থাকেন প্রকাশকরা। কিন্তু করোনার কারণে এবার এ প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রকাশকরা।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত আমাদের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা হাতছাড়া হয়েছে। যার ফলে অনেক প্রকাশকই এখন খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

নজর এখন সামনের মেলায়
করোনা সংকটকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামী অমর একুশে বইমেলার দিকে নজর রেখেছেন প্রকাশকরা। কারণ, মেলাতেই সারা বছরের বই বিক্রির অর্ধেক হয়।

ফরিদ আহমেদ বলেন, বইমেলার আগে আমাদের ক্ষতি উঠিয়ে আনা সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে বইমেলার সময় আমরা বুঝতে পারব আসলে কতজন প্রকাশক এ সঙ্কট পেরিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পেরেছেন। এ কারণে আগামী মেলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি ভালোভাবে শুরু করতে হবে।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের আদিত্য অন্তর জানান, এখনও মেলার প্রস্তুতি শুরু করেননি তারা। তিনি বলেন, এখন জুলাই মাস চলে। প্রতি বছর এ সময় আগামী মেলার অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। কিন্তু এবার শুরুই করিনি। কারণ, এ পরিস্থিতিতে মেলা হবে কি-না সে বিষয়েও সন্দেহ রয়েছে।

বাতিঘরের দীপংকর দাস বলেন, মেলার সকল প্রস্তুতি আমাদের প্রায় সম্পন্ন। তবে বইগুলোকে আমরা প্রেসে পাঠাব না। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেব। আর মেলা যদি না হয়, তারও বিকল্প ভাবনা রয়েছে। যেটি এখন বলতে চাচ্ছি না।

সরকারের সাহায্য নয়, সহযোগিতা চান প্রকাশকরা
সরকারের কাছে অন্যান্য খাতের মতো সাহায্য চান না প্রকাশকরা। তারা বলেন, সাহায্যের প্রয়োজন নেই, সরকার সহযোগিতা করলেই আবারও ঘুরে দাঁড়াবে সৃজনশীল এ শিল্পটি।

ফরিদ আহমেদ বলেন, সরকারের বিভিন্ন উইং থেকে বই কেনা হয়। আর অনেকগুলো উইং থেকে এক সময় বই কেনা হতো। সবগুলো চালু করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও সকল প্রকাশকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে যদি বই কেনা হয়, তাহলে প্রকাশকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। তাদের কোন প্রকার প্রণোদনা দিতে হবে না। আর এক্ষেত্রে অবশ্যই বাজেট বাড়াতে হবে।

সরকারের সহযোগিতা কামনা করে শাহাদাত হোসেন বলেন, এ মুহূর্তে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আমরা টিকে থাকতে পারব না। তবে স্বল্পমেয়াদী ঋণের মাধ্যমে এ সঙ্কট দূর হবে না। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা যদি সঠিক নিয়ম মেনে বই কেনে, তাহলে আমরা এ সঙ্কট থেকে উত্তরণ করতে পারব।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২০
ডিএন/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।