ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

পাবনা মুক্ত দিবসে ‘স্বাধীন সূর্যোদয়’ শীর্ষক আবৃত্তি সন্ধ্যা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২০
পাবনা মুক্ত দিবসে ‘স্বাধীন সূর্যোদয়’ শীর্ষক আবৃত্তি সন্ধ্যা 

পাবনা: ১৮ ডিসেম্বর পাবনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীন সূর্যোদয়’ শীর্ষক আবৃত্তি সন্ধ্যার আয়োজন করেছে পাবনা বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র।  

শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্থানীয় ও ঢাকা থেকে আমন্ত্রিত আবৃত্তি শিল্পীদের নিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্থানীয় শিশু শিল্পীরা পরিবেশন করে দলগত ও একক আবৃত্তি। পরে ঢাকা থেকে আমন্ত্রিত আবৃত্তি শিল্পী হাসান আরিফ, মীর বরকত ও আহসান উল্লাহ তমাল তাদের কবিতা আবৃত্তি করেন।

কবিতার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এ প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন আয়োজকরা। মহান স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদার্পণের এ সময়ে নতুন প্রজন্ম কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন আবৃত্তি শিল্পীরা।  

একক, দলগত ও দৈত কবিতা পরিবশেন ছাড়াও কবিতার চিত্রনাট্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। কবিতার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানটির পৃষ্টপোষকতা করে ইউনিভার্সেল গ্রুপ আর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলে বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন করা হয় এ আবৃত্তি সন্ধ্যার।  

বাংলাদেশের অন্যতম আবৃত্তি শিল্পী হাসান আরিফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আবৃত্তি করে থাকি। ৩০ বছর পরে এ পাবনায় আসা হলো। পাবনা আবৃত্তি সংসদের আয়োজনে একটি অনুষ্ঠানে আসার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। এতো বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এ জেলার। এবার বনমালী শিল্পকলা ও ইউনিভার্সেল গ্রুপের আমন্ত্রণে পাবনায় আসা। আশা করছি, সফলভাবে সমাপ্ত হবে অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের পৃষ্টপোষক কবি সোহানী হোসেন বলেন, মহান বিজয় দিবস ও পাবনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এ সুন্দর আয়োজনের সঙ্গে থাকতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। নবীন এবং প্রবীণর সমন্বয়ে এ আয়োজন একদিকে যেমন শিক্ষা গ্রহণ করছে নতুন শিক্ষার্থীরা, অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে সকলের মধ্যে অসম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত হবে।
 
পাবনা বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ড. হাবিবুল্লাহ বলেন, কবিতা, গান, নাটক তথা সংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলে আসছে যুগযুগ ধরে। আর কবিতা একটি অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম। দেশব্যাপী আবার একটি চক্র কৌশলে স্বাধীনতার স্থপনার ওপর আঘাত হানতে চাইছে। তাইতো জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাঙার সাহস করছে একটি চক্র। মুজিববর্ষ মহান বিজয় দিবস ও পাবনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে আমাদের এ ছোট্ট প্রয়াস।  

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে, তখনও পাবনা শহরে চলছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ। ১৮ ডিসেম্বর পাবনা হানাদার মুক্ত হওয়ার আগে ১৪ ডিসেম্বর দুপুর থেকে হানাদারদের সঙ্গে জেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তি বাহিনীর যুদ্ধ চলছিল। ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ২টা থেকে মিত্র বাহিনী পাবনা শহরে মর্টার শেল ও বিমান হামলা চালাতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনী চারদিক থেকে পাবনা শহর ঘিরে ফেলে আক্রমণ চালায় হানাদার বাহিনীর ওপর। উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। এ যুদ্ধে টিকতে না পেরে হানাদার বাহিনী যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে শহরের নূরপুর এলাকাতে অবস্থান নেয়।

১৮ ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমণে হানাদাররা কোণঠাসা হয়ে নূরপুর ডাকবাংলা ও কাশিপুর বিসিক এরিয়ায় অবস্থান নেয়। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আত্মসমর্পণ করার প্রস্তাব দিলে তারা জানায় যে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ছাড়া আত্মসমর্পণ করবে না বলে তারা। ১৮ তারিখে সকালে ভারতীয় মিত্রবাহিনী পাবনায় এলে দুপুরে হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে পাবনা জেলা মুক্ত হয়।

অপরদিকে, যুদ্ধের সময় ৩০ মার্চ পাবনা জেলা প্রথম হানাদারমুক্ত হয়। এরপর ১০ এপ্রিল দুপুরের পর থেকে পাবনার নগর বাড়ি ঘাট হয়ে পুনরায় হানাদার বাহিনী পাবনা আক্রমণ করে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তখন পাবনার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধ হয় হানাদার বাহিনীর। পাবনা মুক্ত ঘোষণার পরে ২১ ডিসেম্বর মুক্ত হয় ঈশ্বরদী।

বাংলাদেশ সময়: ৬০০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।