ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আপাদমস্তক নাটকের মানুষ ছিলেন মান্নান হীরা

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
আপাদমস্তক নাটকের মানুষ ছিলেন মান্নান হীরা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মান্নান হীরার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান নাট্যাঙ্গনের বিশিষ্টজনরা | ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: সাদাকালো ছবিতে দূরপানে চেয়েছিলেন মান্নান হীরা। তার পাশে লেখা, তারই কথা— নাটক আমার বুকেরও ধন, নাটক আমার সোনার সন্তান/ নাটক আমার প্রিয় ভূমি, আমারো জীবন মরণ।

তার কথার মতোই তাকে স্মরণ করে নাট্যাঙ্গণের বিশিষ্টজনরা বললেন, মান্নান হীরা ছিলেন আপাদমস্তক একজন নাটকের মানুষ।

বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মান্নান হীরার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তার অগ্রজ, অনুজরা। তাদের প্রত্যেকের কণ্ঠে ছিল স্তুতিবাক্য, বেদনার সুর।

সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে নাটকের সঙ্গে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন মান্নান হীরা। তাকে ছাত্র থেকে নাট্যকার হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ।

প্রিয় অনুজকে হারিয়ে বেদনাতুর কণ্ঠে তিনি বলেন, মান্নান হীরা ছিল আমার সন্তানের মতো। ছিল বন্ধু-সহকর্মী। আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি, বন্ধুকে হারিয়েছি, যোগ্য সহকর্মীকে হারিয়েছি। শ্রেণি সংগ্রামের চিত্রায়ন আরণ্যকের হাতিয়ার নাটক তার হাত ধরেই হয়েছে।

মামুনুর রশীদ আরও বলেন, আমি বেদনাসিক্ত। কিন্তু আনন্দিত। আমার মান্নান হীরার জন্য সবার এই স্তুতিবাক্য আমাকে বেদনার মাঝেও আনন্দিত করছে।

সৈয়দ শামসুল হক, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সেলিম আল দীনের পর দেশের প্রধানতম নাট্যকার হিসেবে মান্নান হীরাকে মূল্যায়ন করে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, পথনাটকের কথা বললে, যার কথা আমরা সবার আগে মনে করব তিনি মান্নান হীরা। মান্নান হীরা নাটকের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করেছেন। সমাজের জন্য যা বলা প্রয়োজনীয়, তা তিনি নাটকের মাধ্যমে বলেছেন।

মান্নান হীরার কর্মকে উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, তার কর্মসাফল্য আমাদের মঞ্চে ও রাজপথে যুগপৎভাবে চালিত করেছে। তার কর্মসাফল্য ও ফলাফল আমাদের উজ্জীবিত করেছে। অনন্তকাল ধরে আমরা তার কর্মজীবনকে উদযাপন করতে চাই।

শ্রদ্ধা জানাতে এসে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হারিয়ে গেলেন। এই করোনাকালে আমরা আমাদের কত স্বজনকে হারালাম। আমি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শোকবার্তা দিতে দিতে ক্লান্ত। আমার আর ভালো লাগে না।

মান্নান হীরা মঞ্চসারথি আতাউর রহমান বলেন, মান্নান হীরা নাটক ছাড়া কিছু বুঝতেন না। আমরা আমাদের নাট্যাঙ্গনে এমন একজনকে হারালাম, যিনি আমাদের প্রাণের মানুষ ছিলেন।

গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর বলেন, সাম্যবাদের লড়াকু সৈনিক হিসেবে আজীবন তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।

মান্নান হীরার ওপর একটি স্মারকগ্রন্থ রচনার দাবি জানিয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী বলেন, তিনি সারা দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও নাটকের যে উপকার করে গেছেন এর জন্য আমরা আজীবন তাকে স্মরণ রাখব।

দীর্ঘ ছয় বছর মান্নান হীরার সভাপতিত্বে পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনরত পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ গিয়াস বলেন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংকটের সময়ে তিনি নাটক নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিল্পকলা একাডেমি মসজিদে মান্নান হীরার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর তার মরদেহবাহী গাড়ি রওনা হয়েছে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে।

বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নাট্যজন মান্নান হীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
ডিএন/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।