ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

‘শাহনামা’ মহাকাব্য নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১০
‘শাহনামা’ মহাকাব্য নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী

‘এয় ফেরদৌসি তু দরবারে মা’ রা’ ফেরদৌস কারদি’ অর্থাৎ ‘হে ফেরদৌসি! তুমি আজ আমার দরবারকে সেরা বেহেশতে পরিণত করে দিয়েছো। পারস্যের মহাকবি ফেরদৌসির কবিতা প্রথম দিন শুনে গজনির সুলতান মাহমুদ এভাবেই প্রশংসা করেছিলেন।

কারণ মাহমুদ নিজেও ছিলেন কবি। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ফেরদৌসিকে রাজকবি মনোনীত করেন। এরপর সুলতান তাকে মহাকাব্য রচনার অনুরোধ করেন। আজ থেকে হাজার বছর আগের সেই অনুরোধের ফসল পৃথিবীর সর্বকালের সবচেয়ে বড় মহাকাব্য ‘শাহনামা’।

৬০ হাজার শ্লোকের ওই মহাকাব্য লিখতে ফেরদৌসি সময় নিয়েছিলেন দীর্ঘ ৩০ বছর। পারস্য দেশের জন্মকথা আর আর ইতিহাস নিয়ে লেখা ওই মহাকাব্য তিনি শেষ করেছিলেন ১০১০ সালে। সে হিসেবে এ বছর ফেরদৌসির ‘শাহনামা’ মহাকাব্যের এক হাজার বছর পূর্ণ হওয়ার বছর। এ উপলক্ষে ইরানে যেমন ফেরদৌসিকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হচ্ছে, তেমনি সারা বিশ্বেই এ মহাকাব্য নিয়ে চলছে বিশেষ আলোচনা।

শাহনামার হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে সবচেয়ে বড় আয়োজন করা হয়েছে ইংল্যান্ডের কামব্রিজ শহরের ফিটজউইলিয়াম জাদুঘরে। শাহনামার বিভিন্ন গল্প পরবর্তী সময়ে অনেক চিত্রশিল্পীকে প্রেরণা যুগিয়েছিল। সেসব গল্প অবলম্বনে তারা এঁকেছিলেন গাঢ় রঙের অনেক চমৎকার সব চিত্রকর্ম। বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা সেসব চিত্রকর্ম নিয়েই এ মাসেই ওই জাদুঘরে শুরু হয়েছে ‘এপিক অব দ্য পার্সিয়ান কিং’ শিরোনামের প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া চিত্রকর্ম ও শাহনামা সম্পর্কে প্রদর্শনীর পরিচালক বারবারা ব্রেন্ড বলেন, ‘আধুনিক দর্শকদের জানা দরকার এটা সাধারণ কোনও ইতিহাস নয়। এর মাঝে আছে কিংবদন্তি আর পুরাণকথাসহ সত্যিকার সাম্রাজ্যের ইতিহাস। ’

তবে কামব্রিজের ওই প্রদর্শনীর উজ্জ্বল রঙের চিত্রকর্মগুলো দেখে শাহনামায় লেখা ইতিহাস, কিংবদন্তি কিংবা লোককাহিনীর কোনো কিছুই বোঝা যাবে না, যদি না কারো পারস্যের ইতিহাস সম্পর্কে প্রচুর পড়াশোনা থাকে।

প্রদর্শনীতে সবচেয়ে পুরনো যে ছবিটি স্থান পেয়েছে তা আঁকা হয়েছিল ১৩০০ সালের দিকে। এছাড়া উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আঁকা ১০০টিরও বেশি চিত্রকর্ম ওই প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। প্রত্যেক চিত্রকর্মেই শাহনামার এক-একটি গল্প আছে, যে গল্পগুলোতে সুলতানের বীরত্বকেই বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। চিত্রকর্মগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে ব্রিটিশ লাইব্রেরি, উইন্ডসোর ক্যাসেল এবং দ্য রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে। তবে এই চিত্রকর্মগুলো আমাদের এই উপমহাদেশেরই সম্পদ ছিল। ব্রিটিশরা জোর করে সেগুলো নিয়ে গেছে।

চিত্রকর্মগুলোর বিষয়ে কামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পারস্যের ইতিহাসের অধ্যাপক বলেন, ‘উনিশ শতকে ব্রিটিশরা ভারত থেকে এই শিল্পকর্মগুলো দখল করে নিয়ে আসে। সম্ভবত এখনকার চেয়ে সে সময় ব্রিটেনে ফেরদৌসির জনপ্রিয়তা অনেক বেশি ছিল। ’

‘এপিক অব পার্সিয়ান কিং’ শিরোনামের ওই প্রদর্শনীটি চলবে আগামী বছরের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।    

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪৫০, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।