ঢাকা: নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ইশতিয়াক হোসাইন নামে এক পাইলটকে বাংলাদেশ বিমানের নতুন শিডিউল কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব এয়ার লাইন পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের (আইএফএএলপিএ) এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত।
কিন্তু বাংলাদেশ বিমানের অপারেশন ম্যানুয়েল এর সেকশন ৫ এর ৫.০.৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো অ্যাসোসিয়েশনের কোনো নির্বাহী ব্যবস্থাপক বিমানের নির্বাহী হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। ফলে ইশতিয়াকের নিয়োগ বিতর্কিত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
আইএফএএলপিএ’র কর্মরত অবস্থায় বিমানের নতুন শিডিউল কর্মকর্তা হিসেবে এ পাইলটের নিয়োগ স্পষ্টতই স্বার্থের সংঘাত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, যিনি আন্তর্জাতিক সংস্থার ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন, তাকেই রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী আকাশযানের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া অন্যান্যদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি ছাড়া আর কিছু নয়।
ইশতিয়াক ‘দাপুটে’, তাই কেউ সরাসরি কিছু না বলতে পারলেও বিমানের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মতো নয় বলেও মনে করেন তারা। এ ছাড়া লোকসান ও অব্যবস্থাপনায় ধুকতে থাকা বিমান নতুন করে হুমকির মুখোমুখি হলো বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।
বিতর্ক শুরুর পর আইএফএএলপিএ’র ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, সংগঠনটির এক্সিকিউটিভ বডির তালিকায় ইশতিয়াক হোসাইনের নাম এশিয়া প্যাসিফিকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েই গেছে। ফলে কোনো যুক্তিতেই তাকে বিমানের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ কোনোভাবেই বৈধ নয়। নিয়ম বহির্ভূত সিদ্ধান্তেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিমানের স্বার্থ রক্ষায়ও এ সিদ্ধান্ত মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
ইশতিয়াক হোসাইনের বিরুদ্ধে সহকর্মী নারী পাইলটদের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তাদের ওপর অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ শোনা গেছে এ পাইলটের বিরুদ্ধে। সিলেটে বিমান দুর্ঘটনায় পতিত এয়ারক্রাফটের কো-পাইলটও ছিলেন ইশতিয়াক। বিমানের বড় দায়িত্বে তিনি স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তারই বন্ধু ক্যাপ্টেন সাহাদাত হোসেনের জায়গায়।
এ দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেছেন এক নারী পাইলট। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শাহদাত-ইশতিয়াক এরা প্রত্যেকেই বিকৃত রুচিসম্পন্ন। এদের কারণে নারী কর্মীরা বারবার নিগৃহীত হচ্ছে। নানাভাবে প্রতিবাদ ও অভিযোগ জানালেও শেষ পর্যন্ত কীভাবে যেন তারা বিমানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করেন।
বিমানের পাইলট ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা ইশতিয়াকের নিয়োগ পুনর্বিবেচনার দাবি করেছেন। তারা বলছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত যোগ্য ও ক্লিন ইমেজধারী কাউকে শিডিউল কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। নয়ত বিমান নতুন করে হুমকির মুখে পড়বে।
যার নিয়োগ দিয়ে বিতর্ক ও অভিযোগ, সেই ইশতিয়াকের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করে বাংলানিউজ। তার মোবাইলে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এ ছাড়া নিয়োগের ব্যাপারে কথা বলতে ফোন করা হয় বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিমকেও। তিনিও কল এড়িয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
এমকে/এমজে