ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

কাশ্মীর ভ্রমণ

স্বর্গ-যাত্রা হলো শুরু...

তুহিন ডি. খোকন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৩ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৪
স্বর্গ-যাত্রা হলো শুরু... ছবি: লেখক

ভূ-স্বর্গ কাশ্মীর। প্রকৃতির বিচিত্র রঙের অলঙ্করণে সজ্জিত।

তুষারশুভ্র বরফ আর নীল পাহাড়ে ঘেরা এর গ্রামগুলো যেন তেল রঙে আঁকা। এক দিনে কি শেষ হয় এর সৌন্দর্য উপভোগ! প্রিয় পাঠক, কাশ্মীর ভ্রমণ নিয়ে থাকছে তিন পর্বের ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী। আজ থাকছে এর প্রথম পর্ব...      

স্বর্গ লাভের ইচ্ছে তো সবারই, কিন্তু ইহকালে এমন কোনো পূণ্য করিনি যে স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো মর্ত্যের-স্বর্গ তথাপি ভূ-স্বর্গ দর্শনের দুর্বার ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হই ২০১৩-এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে।

বিদেশ তো বটেই, তার উপর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কাশ্মীর। যেখানে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা বা সশস্ত্র হামলা ঘটছেই। তবুও ভূ-স্বর্গ বলে কথা, আনাচে কানাচে যার লুকায়িত ঐশ্বর্যে ভরা।  

কলকাতা থেকে দূরপাল্লার যেকোনো ভ্রমণকে আরামদায়ক ও ইকোনমি করতে ট্রেনই হলো সবচেয়ে সুবিধাজনক। অন্যান্য রুটে অনেক ট্রেন থাকলেও জম্মু অবদি শুধুমাত্র দু’টি ট্রেনই আছে।

এরমধ্যে সবচেয়ে ভালো আর অপেক্ষাকৃত কম সময় নেয় হিমগিরি এক্সপ্রেস। সপ্তাহে মাত্র তিনদিন চলা এই ট্রেনের টিকেটও অনেকটা সোনার হরিণ।

যাই হোক একটু আগেভাগে প্ল্যান করাতে প্রায় দেড়মাস আগে এসি টু-টায়ারে ছয়টির মধ্যে চারটি কনফার্ম টিকেট পেয়ে গেলাম, বাকি দু’টি রেক (রিজার্ভেশন এগেইনস্ট ক্যানসেলেসন) এ থাকলো।

আমাদের ইন্ডিয়ান ট্রাভেল এজেন্ট জানালো এই দু’টি টিকেট নিশ্চিন্তে কনফার্ম হয়ে যাবে ভ্রমণের চব্বিশ-ঘণ্টা আগেই। আমাদের শুধু অনলাইনে অথবা স্টেশনে গিয়ে চার্ট দেখে সিট ও বগি নম্বরটি জেনে নিতে হবে।

টিকেট কাটার মুহূর্ত থেকেই শুরু হয়ে গেল আমাদের স্বর্গ দর্শনের প্রতীক্ষা... প্রতীক্ষার প্রহর সত্যিই খুব যন্ত্রণাদায়ক।

নোমান, আমি এবং আমাদের পরিবার ইতোমধ্যে হিমাচল প্রদেশসহ ভারতের দর্শনীয় জায়গাগুলো ঘুরে শেষ করেছি। তাই কী ধরনের ট্রাভেল গিয়ার নিতে হয় সে-সম্পর্কে আমাদের বেশ ভালোই ধারণা আছে। ভ্রমণের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসতে লাগলো, আমরা ততই এক্সাইটেড হতে লাগলাম।

প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে গুছানো শেষে একদিন সত্যি সত্যি সোহাগ-পরিবহনের স্ক্যানিয়াতে রওনা দিই কলকাতার উদ্দেশে।

বেনাপোল সীমান্ত পার হয়ে ভারতের হরিদাসপুর থেকে কলকাতাগামী বাসে দেখা হলো একসময়ের চিত্রনায়ক সাকিল খান ও তার স্ত্রীর সঙ্গে, সহজাত মিশুক স্বভাবের নোমান শুরুতেই গল্প জুড়ে দিলো ওই দম্পতির সঙ্গে। কিছু পর আমরা বাকিরা যোগ দিই, ততক্ষণে আসর জমে উঠেছে।

বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হঠাৎ প্রবল বৃষ্টি শুরু হলো। মারকিউস স্ট্রিটে বাস যখন পৌঁছালো তখন বৃষ্টি কিছুটা কমে আসলেও একেবারে থেমে যায়নি। সেই সন্ধ্যায় টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেই জলকাদা ভেঙে আমি আর নোমান হোটেল খুঁজতে বেরুই বউ-বাচ্চাদের বাস কাউন্টারে রেখে।

অনেক খুঁজেও বাজেটের মধ্যে কোনো হোটেল না পেয়ে শেষে হোটেল কন্টিনেন্টালে উঠে পড়ি প্রতিরাত ২০০০ রুপি চুক্তিতে।

শুরুতেই বাজেট বিপর্যয়ের বিষয়টা একেবারেই ভালো লাগলো না আমাদের। যাই হোক পরদিন সকালে নাস্তা সেরেই ছুটলাম ফেয়ারলি প্লেসে ফরেন কোটায় দিল্লি টু কলকাতা টিকেট কাটাতে। কেননা আমাদের যাওয়ার টিকেট কনফার্ম থাকলেও আসার টিকেট পাইনি পূজার ছুটির কারণে। ওই দিনের জন্যে মাত্র ছয়টি টিকেটই ছিল এসি -থ্রিটায়ারে ফরেন কোটাতে।

রিজার্ভেশন অফিসারকে অবাক করে দিয়ে ছ’টি টিকেটই কনফার্ম করলাম আমরা। তারপর আধুনিক জিপিএস সুবিধা ব্যবহার করে পুরানো কলকাতা নগরীর পথে পথে হেঁটে-হেঁটে আমি আর নোমান হোটেলে ফিরলাম দুপুরবেলায়।

ওইদিনই রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে আমাদের ট্রেন। তাই ঠিক করলাম একদিনের জন্যে শুধু শুধু ৪০০০ রুপি খরচ না করে সেই সময়টা সিনেমা দেখে আর মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে পার করে দেবো।

নিউমার্কেট সংলগ্ন এলিট সিনেমা হলের ছয়টি টিকেট কাটি ৬০০ রুপি দিয়ে। তিনটে থেকে ছটা অবদি সিনেমা দেখা শেষ করে কলকাতা নিউমার্কেটের অলিগলি ঘুরে সামান্য কিছু শপিং করে নিই। রাতে হোটেল রাঁধুনীতে সাড়ে ৯টা অবদি ডিনার সেরে দশটা নাগাদ টেক্সি ধরি হাওড়ার উদ্দেশে।

নোমানসহ অন্যরা রইল এসি ওয়েটিং রুমে আর আমি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে লাগেজ-পত্তর নিয়ে একা একা বসে থাকি প্রায় দু’ঘণ্টা। ট্রেন আসার ঘোষণা শুনেই ফোন লাগাই নোমানকে। তারপর ট্রেনে ভূ-স্বর্গের উদ্দেশে, স্বর্গ-যাত্রা হলো শুরু...


হিমগিরি এক্সপ্রেস। নামটি যেমন সুন্দর ট্রেনটিও তেমনি। অপেক্ষাকৃত অন্যান্য সিটের চেয়ে এসি-টু টায়ারের শোয়ার এবং বসার সিটগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেশি। শুয়ে শুয়ে বই পড়ার জন্যে অ্যাডজাস্টটেবল রিডিং লাইট, ধোলাই করা টাওয়াল-বেডসিট সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার মানও বেশ উন্নত।

কলকাতা থেকে জম্মুর দূরত্ব ২ হাজার ২০ কিলোমিটার। প্রায় ৪০ ঘণ্টা জার্নি শেষে আমরা যখন জম্মু রেল স্টেশনে পৌঁছলাম তখন বেলা ৩টা।

স্টেশন থেকে বেরিয়েই আক্কেল গুড়ুম আমাদের। মানুষ দাঁড়িয়ে-বসে-শুয়ে আছে কিন্তু কোনো গাড়ি যাচ্ছে না। প্রি-পেইড টেক্সি কাউন্টারে খবর নিয়ে জানতে পারলাম আজ বন্ধ। কোনো গাড়ি শ্রীনগরে যাবে না।

আশপাশে তাকাই, দেখি বৃদ্ধ, কোলের শিশু নিয়ে মানুষজন বড্ড অসহায় হয়ে মালপত্তর নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে কেউবা বসে আছে।

আমার দীর্ঘ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে আমার বেশ জানা, পৃথিবীতে দু’নম্বর ব্যবস্থা সবখানেই থাকে। তাই একটুও দেরি না করে বিকল্প-সন্ধান খুঁজতে বেরিয়ে পড়ি আমি আর নোমান।

এ গলি ও গলি পেরিয়ে শেষে স্টেশনের পাশেই এক সরু গলিতে একটা ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কথা হয়। তারা মোটামুটি সহনীয় ভাড়াতেই আমাদের শ্রীনগর নিতে রাজি হয়ে যায়।

আপেলের ভরা মওসুম, তাই গাড়িতে ওঠার আগে খুব সস্তায় প্রতিজনের জন্যে দু’টি করে বিশাল আকৃতির আপেল কিনে বেলা সাড়ে ৩টায় রওনা দিই ২৯৮ কি. মি. দূরের কাশ্মিরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের উদ্দেশে। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পাহাড়ি রাস্তায় জার্নি শেষে যখন শ্রীনগরে পৌঁছলাম তখন রাত দু’টো।

মেইক মাই ট্রিপ ডট কমে হোটেল রিজার্ভেশন আগেই করা ছিল। এই রাত দুপুরে হোটেল ওয়ালাকে ফোন করতেই সে জানালো যে লোক পাঠাচ্ছে আমাদেরকে ১৪ নম্বর ঘাটের সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে।

শুরুতেই যা খটকা লাগলো একটু পরেই সত্যি প্রমাণিত হলো তা। ওয়েবসাইটে হোটেলের ছবিতে হোটেলটির অবস্থান ডাঙাতে দেখালেও সত্যিকারে এর অস্তিত্ব বিখ্যাত ডাল-লেকের ওপাড়ে। শুনশান শীতল মধ্যরাতে প্রায় আধ-ঘণ্টা অপেক্ষার পর ঘুটঘুটে অন্ধকার ডাল-লেক থেকে ভেসে এলো লম্বা জোব্বা পরিহিত বৃদ্ধ-তরীওয়ালার ডাক।

পরিস্থিতি অনেকটা ব্যাখ্যাতীত, মাঝ-রাত, পুরো শ্রীনগর শহর সুনসান, এর মধ্যে অন্ধকার লেক থেকে যেন নরকের দূত আমাদের নিতে এসেছে শয়তানের কেয়ারা নিয়ে।

যাই হোক বউ-বাচ্চা নিয়ে বিপদ-সংকুল কাশ্মীরের পথে পড়ে থাকার চেয়ে সেই ডাকে সাড়া দেওয়াই উত্তম মনে করি। লেকের ওপাড়ে গিয়ে প্রথমে দমে যাই হোটেরে রুম দেখে, দ্বিতীয়বার দমে যেতে হয় টয়লেটের অবস্থা দেখে।

রুমের মধ্যেই টয়লেটের ভ্যান্টিলেশন। এই মাঝ রাতে কিছু করার নাই দেখে কোনক্রমে রাতটি পার করাই মোক্ষম সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়।


রাত প্রায় তিনটের দিকে ঘুমালেও চিরাচরিত অভ্যাসবশত ভোর ৫টায় ঘুম ভেঙে যায়। কিছুক্ষণ মটকা মেরে পড়ে থেকে ট্র্যোকস্যুট ও কেডস পরে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু মেইনল্যান্ডে যাওয়ার জন্যে এই ভোরে কোথাও কোনো পারাপারের ডিঙি তথা শিকারা দেখা যায় না।

পাশাপাশি সারিবদ্ধ হাউসবোটগুলোর হালচাল দেখে আবারও রুমে ফেরত আসি। ৮টার দিকে নোমানকে নিয়ে মেইনল্যান্ডে চলে আসি একটা শিকারা ধরে। বউ-বাচ্চাদের নাস্তার ব্যবস্থা হোটেলে করে এলেও, তখনও আমাদের দু’জনের কেউ নাস্তা করিনি। ছোট একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়ি স্থলভাগে হোটেলের সন্ধানে।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর মেইন রোড থেকে সামান্য ভেতরে ‘হোটেল মধুবন’ একেবারে মনেপ্রাণে পছন্দ হয়ে যায়। বিস্তীর্ণ ফুলের বাগান, সবুজ ঘাসের লন, সুদৃশ্য হোটেল দালান সবকিছু এতো ভালো লাগলো যে ভাষায় প্রকাশ করার নয়।

এবার নোমান কথা বললো হোটেল ম্যানেজার মেহেদী হাসানের সঙ্গে। প্রথমে ২৫০০ রুপি ভাড়া চাইলেও পরে আমরা প্রতিরাত ১২৫০ রুপিতে ম্যানেজ করলাম পাঁচ দিনের জন্যে। অ্যাডভান্সের টাকাটা দিয়েই ভোঁ-ছুট বউ-বাচ্চাদের আগের হোটেলের বাটপারদের থেকে রক্ষা করতে।

চেক-আউট সেরে ব্রেকফাস্টের বিল দিতে গিয়ে চক্ষু-ছানাবড়া আমাদের। সামান্য দু’টি পরোটা আর একটু ভাজির জন্যে ১৫০ রুপি মাথাপিছু বিল!  ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা।

এক নৌকাতে সবাই উঠতে পারবো না, তাই আমি, আমার স্ত্রী-কন্যা ও নোমানের দুই মেয়েকে নিয়ে প্রথম ট্রিপে মেইনল্যান্ডে চলে আসি। পরের ট্রিপে নোমান ও তার স্ত্রী আসতে আসতে এরই মধ্যে ডাললেইক ও নেহেরু পার্কে শ’খানেক ছবি তোলা হয়ে গেল আমাদের।

নতুন হোটেলে চেক-ইন করি। আমার ও নোমানের মতো আমার স্ত্রী টুম্পা, মেয়ে কান্তম, নোমানের সহধর্মিনী ফারহানা ও মেয়ে ইসাবা ও আরিনারও খুব মনে ধরলো হোটেল মধুবন।

লাগেজ রেখে মোটামুটি রুম-গুছিয়ে সবাই মিলে শ্রীনগরের আশ-পাশ ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ হেঁটেই বুঝতে পারি, এভাবে লোকাল সাইটসিয়িং সম্ভব নয়। তাই কাছের ট্রেক্সি-স্ট্যান্ড থেকে ১৬০০ রুপি দিয়ে হাফ-ডে সাইট সিয়িং এর ব্যবস্থা করি, আমাদের ড্রাইভারের নাম রিয়াজ।

কাশ্মির ভ্যালিতে অবস্থিত শ্রীনগর শহরটির আয়তন ১৮১ বর্গ কিলোমিটার, স্থানীয় লোকসংখ্যা প্রায় দশ লাখের কাছাকাছি। সমগ্র কাশ্মির তিন স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনিতে ঘেরা- প্রথম স্তরে পুরোপুরি যুদ্ধাবস্থা পোশাকে ভারতীয় সেনাবাহিনী, দ্বিতীয় স্তরে আধা-সামরিক বাহিনী বিএসএফ ও তৃতীয় স্তরে কাশ্মিরী পুলিশ।

প্রথমেই অনেকে ভড়কে যাবে মাত্রাতিরিক্ত এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে। অবশ্য আমরা কাশ্মিরে পৌঁছার দুদিন আগেই আজাদ কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলারা একজন পূর্ণ কর্নেলসহ সেনাবাহিনীর ৮ সদস্যকে হত্যা করে।

ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন আরো কঠিন ‍অবস্থায় বিরাজমান। অবশ্য এর বিপরীতে যা দেখি, তাতে চোখ জুড়িয়ে যায়। কাশ্মিরের বাসিন্দা তা পুরুষ হোক আর মহিলা, এত রূপবান পুরুষ ও রূপবতী নারী আগে কোথাও দেখিনি। প্রধানত: আবহাওয়াগত কারণে এদের স্বাস্থ্য, রঙ ও মেজাজ এতো ভালো। আমাদের পুরো দলই কাশ্মিরীদের রূপ-মুগ্ধ হয়ে পড়ি। প্রথমেই আমরা যাই মোগল গার্ডেনে।

পথে পথে পাইন সারির শোভাবেস্টিত পর্বতমালা, তারই মাঝে অসংখ্য নাম না জানা ফুলের স্বর্গ, চারদিকে এতো রঙ যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। অনেক ছবি তোলা শেষে শহর প্রান্তে পরিমহলে যাই। অনেক উঁচুতে অবস্থানের কারণে নাগিন ও ডাল লেইকের প্রান্তঘেঁষা মোটামুটি অর্ধেক শ্রীনগর শহরকে দেখা যায় এখান থেকে। এখানেও প্রাচীন দুর্গের ফাঁকে ফাঁকে নানাবর্ণের অর্কিডের মেলা।

এরপর নিশাত গার্ডেন এ ভিড়লো আমাদের ভাড়া করা টয়োটা-ইনোভা। যতটুকু জানি এটিই এই এলাকার সবচেয়ে বিলাসবহুল গাড়ি।

তিনদিক থেকে পর্বতে ঘেরা এই উদ্যানের আয়তন বিস্তীর্ণ। দুতিনশ বছরের বুড়ো মেপল ট্রি ও কৃত্রিম পানির ফোয়ারা এই গার্ডেনের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। হজরতবাল মসজিদ আমাদের পরবর্তী গন্তব্য।

এরই মাঝে লাঞ্চ সারলাম বেশ নামী দামী একটি রেস্টুরেন্টে (বাজেটের কথা মাথায় রেখে শুধুমাত্র একবারের জন্যে)।

এরপর রওনা হলাম হযরতবাল মসজিদের উদ্দেশে। যেতে যেতে গাড়িতেই খানিকটা ঝিমাবার চেষ্টা করি, কিন্তু রসিক ড্রাইভারের উচ্চ-ভলিয়্যুমের অডিও আমার দিবানিদ্রার বারোটা বাজিয়ে দেয়। কারণ জিজ্ঞেস করলে জানায় সেও ঘুম তাড়াবার চেষ্টা করছে।

হাজার হাজার জালালী কব‍ুতর আকাশ অন্ধকার করে উড়ছে। তার আড়াল থেকে দর্শন মিলল সুগম্ভীর হজরতবাল দরগা। এখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পবিত্র চুল সংরক্ষিত আছে যা মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে সৈয়দ আবদুল্লাহ সুদূর মদিনা শহর থেকে নিয়ে আসে ভারতবর্ষে।

মাজার দর্শন শেষে আমরা ফিরে চলি আমাদের হোটেলের দিকে। মাথার ওপরে তখন ঝুঁকে আছে সন্ধ্যাবেলা, নাগিন লেকে কৃত্রিম ফোয়ারার আলো আর দূরে দু’একটি দোকানের বিজ্ঞাপনের আলো জলের উপরিভাগে সৃষ্টি করছে লাল-নীল আভা- সেসব সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে নামাঙ্কিত অস্তরাগে।

টেক্সিস্ট্যান্ডে ফিরেই পুরো ৪ দিনের কাশ্মিরের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্যে একটি টেক্সি ঠিক করে হোটেলে ফিরেই চটজলদি ডিনার সেরে ঘুমিয়ে পড়ি।

আগামী পর্বে থাকছে
খিলানমার্গের পর্বত চূড়ায়

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।