ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

বিআইটিএফ-২০১৫

ভাঙলো ভ্রমণপিপাসুদের মিলনমেলা

সিনিয়র ও স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
ভাঙলো ভ্রমণপিপাসুদের মিলনমেলা ছবি : দেলোয়ার হোসেন বাদল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে: পর্দা পড়লো বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলার। মেলাকেন্দ্রিক প্রায় ৬২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা দেখছেন আয়োজকরা।

বাংলাদেশের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও বেশি পর্যটকের আশা করছেন আগামী পর্যটন বছরে (২০১৬)।

বৃহস্পতিবার (২১ মে) থেকে শনিবার (২৩ মে) পর্যন্ত তিনদিন চললো এ মেলা। কিছু সমস্যা ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে এটিকে ‘সফল’ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেলার অন্যতম আয়োজক বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন অব ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্টের (বিএফটিডি) প্রেসিডেন্ট এইচ এম হাকিম আলী বাংলানিউজকে বলেন, এ মেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের আগামী সময়ে ৮ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৬২ কোটি ৪০ লাখ টাকা) ব্যবসা হবে। ভারত ও কম্বোডিয়া থেকে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি পর্যটক আসবেন বাংলাদেশে।

মেলার নির্বাহী পরিচালক রেজাউল একরাম রাজু বাংলানিউজকে বলেন, যারা এয়ার টিকিট বিক্রি করছিলেন, তাদের সবগুলো টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকেই প্যাকেজগুলো নিয়েছেন। ঈদকেন্দ্রিক প্যাকেজগুলো আগতরা বেশি পছন্দ করেছেন।

মেলায় অংশ নেওয়া সব প্রতিষ্ঠানকে সনদ দেওয়া হয় শনিবার।

অংশগ্রহণকারীদের অসন্তোষ মেলার আয়োজকরা সন্তুষ্ট হলেও একই সুর নেই অংশগ্রহণকারী সব প্রতিষ্ঠানের। অনেকেই ব্যবস্থাপনার ত্রুটি ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন।

তারা বলছেন, এতো টাকা খরচ করে স্টল নিয়ে প্রথমদিন ফ্লপ হল। সময় ও ভেন্যু নির্বাচনে আরও যত্নবান হতে পারতেন আয়োজকরা।
 
তাদের অভিযোগ, প্রচারণার অভাবে আশানুরূপ দর্শনার্থী পাননি তারা। মেলা কর্তৃপক্ষ আরও আগে থেকে এ বিষয়ে প্রচার চালাতে পারতেন। এছাড়া প্রচণ্ড গরম, খাওয়া-দাওয়ার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় তারা কষ্ট পেয়েছেন বলে জানান তারা।

হলিডে ক্লাব ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’র প্রধান ব্যবস্থাপনা অংশীদার বদরুজ্জামান খান পাঠান উজ্জ্বল বাংলানিউজকে বলেন, সব মিলিয়ে সেভাবে খুশি হতে পারছি না।

আয়োজকরা আরও আন্তরিক হলে ভালো হতো। তারা শুধু আয়োজন করে, টাকা নিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।

স্টল নেওয়া একজন নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মেলার আয়োজকদের অনেকেই গা-বাঁচিয়ে চলেছেন। সুবিধা-অসুবিধার কথা জানানোর সুযোগ পাইনি তাদের।

কথা যেন ঠিক থাকে: দর্শনার্থীরা এদিকে যারা মেলায় আগ্রহী হয়ে এসেছেন, তাদের অনেকেই সন্দিহান যে, যেসব আকর্ষণীয় অফার হাঁকা হচ্ছে, সেসব পরে ঠিক থাকে কি-না।

মিরপুর থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হাসান কবির বাংলানিউজকে বলেন, সপরিবারে এসেছি। অফার ভালো লেগেছে। কিন্তু সেসব যেন পরেও ঠিক থাকে।

অনেক সময় দেখা যায়, অফারের সঙ্গে নানা হিডেন কস্ট জুড়ে দেওয়া হয়। বিশাল অ্যামাউন্ট হাতিয়ে নেওয়া হয়। এবার যেন এমন না হয়।

বিদেশিদের ভোগান্তি মেলায় স্টল নিয়েছে ভুটান, কম্বোডিয়া ও ত্রিপুরা। তিন দেশের চারটি স্টলের অপারেটরদের ভোগান্তি দেখে অনেকেই লজ্জিত হয়েছেন।

প্রথমদিন পাশের ভেন্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠান থাকায় সবাইকে মেলা থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। তখন বিপদে পড়ে যান এসব বিদেশিরা।

বাংলাদেশের কড়া রোদে বাইরে দাঁড়িয়ে-বসে সময় কাটান কয়েকজন। ওয়াশরুম, খাওয়া-দাওয়া বা বসার ভালো ব্যবস্থা না পেয়ে অসহায় দেখায় তাদের।

আয়োজকদের অনেকেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আর দেখা দেননি। বিদেশিরাও বুঝতে পারছিলেন না, তাদের সহযোগিতা কে দেবে। সন্ধ্যায় কম্বোডিয়ার অপারেটররা আর ফেরেননি।
 
শেষদিন দুপুরে খাওয়ার সময়টিতেও তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। ভালো জায়গা না পেয়ে স্টলেই ছোট্ট পরিসরে খাবারের বাক্সে খেয়েছেন তারা।

বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের কেউ কেউ মন্তব্য করছিলেন, আমাদের অসুবিধা না হয় মানা যায়। কিন্তু বিদেশিদের প্রতি আয়োজকরা যত্নবান হতে পারতেন।

এসব পরিস্থিতিতে অন্যতম আয়োজক রেজাউল একরাম রাজু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রথমদিনে একটু অসুবিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সবার কষ্ট দূর করতে ফ্যান দিয়েছি, দর্শনার্থীদের উৎসাহিত করতে প্রবেশ ফ্রি করেছি।

হাকিম আলী বলেন, এ মেলা সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। সবার অংশগ্রহণে আমরা সফল হয়েছি। আগামী পর্যটন বছরে প্রচুর পর্যটক পাবো আমরা। কিছু সমস্যা হয়তো হয়েছে। কিন্তু আমাদের আন্তরিকতা ও চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না।

তিনি বলেন, ট্যুরিজম মেলা পর্যটন খাতের বিশাল একটি সুযোগ। মেলার প্রথমদিনে কিছু সমস্যা হলেও দ্বিতীয় দিনে লোক সমাগম ছিল প্রায় ১০ হাজার। যারা স্টল নিচ্ছেন ও যারা দর্শনার্থী সবার কথা ভেবে আমরা এবার এন্ট্রি-ফি নেইনি। সবাই বিনা খরচে ঢুকতে পেরেছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন মেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাকিম আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী রতন ভৌমিক, বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খুরশেদ আলম চৌধুরী, ভূটানের প্রতিনিধি সুনম দর্জি, নেপাল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস চেয়ারম্যান ডি লিম্বু প্রমুখ।
 
মেলার সমাপনী উপলক্ষে সেভাবে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
এসকেএস/একে/এএসআর

** প্যাকেজ সম্ভার এনেছে ভুটান-কম্বোডিয়া-ত্রিপুরা
** পর্যটক ও পর্যটন এলাকার নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ
** বেডরুমেরও নিরাপত্তা দেবে সিকিউরেক্স!
** সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার প্যাকেজ বুকিংয়ে ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ ফ্রি !
** বাংলা’র ‘শিশিরবিন্দু’ দেখাবে পর্যটন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।