ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

১০টি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ৬টিই বন্ধ

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
১০টি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ৬টিই  বন্ধ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে এ সেবার অবস্থা নাজুক। গত ২০ বছরে বাংলাদেশে যাত্রীবাহী বেসরকারি এয়ারলাইন্স চালু হয়েছিলো ১০টি, যার মধ্যে ৬টিই বন্ধ হয়ে গেছে।

বাকি চারটির মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে একবার।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ  (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৫ সালে বেসরকারি এয়ারলাইন্স অ্যারো বেঙ্গলকে আকাশপথে চলাচলের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৯৫ সালে অনুমতি পেলেও যাত্রা শুরু করতে অ্যারো বেঙ্গলের দুই বছর সময় পার হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালে প্রথম যাত্রী পরিবহন শুরু করলেও ১৯৯৮ সালেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অ্যারো বেঙ্গলের পর পরই চালু হয়েছিলো এয়ার পারাবত, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইন্স, রয়েল বেঙ্গল ও বেস্ট এয়ার- যেগুলোর কোনোটিই এখন আর সচল নেই। এ ৬টি এয়ারলাইন্সই অর্থ সংকট দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ রুটে যে চারটি যাত্রীবাহী বেসরকারি এয়ারলাইন্স এখনও সচল রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- রিজেন্ট এয়ার, ইউএস বাংলা, নভোএয়ার ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স।

তবে এর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর যথেষ্ট আর্থিক সক্ষমতা না থাকার কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো বলেও জানায় বেবিচক সূত্র।

সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ যাত্রা শুরু করে সিলেট ফ্লাইটের মাধ্যমে। একে একে ১১টি প্লেন কেনে ইউনাইটেড। রূপান্তরিত হয় পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় টিকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে। ইতোমধ্যে ১১টি প্লেনের নয়টি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ২টি প্লেন দিয়ে কোনোমতে যাত্রী পরিবহন করছে সংস্থাটি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বেসরকারি উড়োজাহাজ চলাচল খাতের সম্ভাবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে কাজ শুরু করেও টিকে থাকতে পারছে না বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। বেসরকারি এয়ারলাইন্স চালাতে প্রয়োজনীয় লোকবলের উল্লেখযোগ্য অংশের জন্য বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এর ফলে খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে পার্কিং চার্জ, অ্যারোনটিক্যাল ও নন অ্যারোনটিক্যাল চার্জ অনেক বেশি।

বেসরকারি এয়ারলাইন্স সেবার সঙ্গে গত ২০ বছর ধরে জড়িত ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ডিজিএম মো. কামরুল ইসলাম। চোখের সামনে অ্যারো বেঙ্গল, এয়ার পারাবতসহ ৬টি বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে বন্ধ হতে দেখেছেন তিনি। সরকারের নীতি সহায়তা ও উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়া এ সেবার উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা যখন এ খাতে বিনিয়োগ করতে আসেন, তখন মার্কেট যাচাই করেন- এটি ঠিক। কিন্তু মার্কেটে আসার পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হলেই সমস্যায় পড়তে হয় তাদেরকে। সে কারণে উদ্যোক্তাদেরও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। অন্যদিকে সরকারের উচিত, বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষেত্রে পার্কিং চার্জ, অ্যারোনটিক্যাল ও নন অ্যারোনটিক্যাল চার্জসহ অন্যান্য চার্জ কমিয়ে আনা। কারণ, যখন কোনো এয়ারলাইন্স খরচ বহন করতে পারে না, তখনই প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধ করে দিতে হয়। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষভাবে অসংখ্যা মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। তাই একটি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেলে অসংখ্যা মানুষ বেকার হয়ে পড়েন।

পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটে বেসরকারি দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য সরকারের হ্যাঙ্গার সুবিধা রাখা উচিত বলেও মনে করেন মো. কামরুল ইসলাম।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
ইউএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।